‘টাউন স্কোয়্যার’। ফেসবুক ওয়ালে মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্যের মুক্ত পরিসরের এই ব্যবস্থাই সামাজিক মাধ্যমের যোগাযোগকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। এখন তা ক্রমে চলে আসছে ব্যক্তিগত অঙ্গনে। তথ্য চুরি থেকে ভুয়া খবর– নানাভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়াই কি এর কারণ? না কি নেপথ্যে অন্য কোনও পাটিগণিত? লিখছেন কিংশুক বন্দ্যোপাধ্যায়।
মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গের ফেসবুক কি তার সাধের ‘টাউন স্কোয়্যার’ হারিয়ে ফেলছে? হোয়াটসঅ্যাপ আর ফেসবুক গ্রুপের ছোট ছোট গণ্ডিতে আটকে পড়ছে দুনিয়াভর লোকজন? ফেসবুক যখন তার বিংশতিতম জন্মদিন পালন করছে, তখন এই প্রশ্নটাই বিশ্বের কয়েকশো কোটি ব্যবহারকারীর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। এতে ভাল হল কি মন্দ হল– সেটা পরের কথা। আগে দেখা যাক, ‘টাউন স্কোয়্যার’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে।
আদতে টাউন স্কোয়্যারের ভাবনাচিন্তাটা এসেছে গ্রিকদের সময়কার নগর-সভ্যতার সময় থেকে। নগরীর মাঝে কোনও উন্মুক্ত জায়গায় বসে জ্ঞানীগুণীরা নিজেদের মধ্যে দর্শন, গণিত, নাট্যতত্ত্ব নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতেন, নিজের নিজের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করে অন্যের যুক্তি খণ্ডন করার চেষ্টা করতেন। আমজনতা অবশ্য এত উচ্চমার্গীয় কূটকাচালির মধ্যে না গিয়ে নিজেদের দৈনন্দিন সুখ-দুঃখের গল্পই করত।
কিন্তু মিল ছিল এক জায়গায়। দু’-দলই খোলা মনে আলোচনা করত, তর্ক-বিতর্ক করত। দিনের শেষে হাসি মুখে বাড়ি ফিরত। অর্থাৎ, মোদ্দাকথায় টাউন স্কোয়্যার হল নির্ভেজাল আড্ডার জায়গা, যেখানে সবাই নিজের মনের কথা বলতে পারে।
২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যখন ফেসবুক পথ চলা শুরু করে, তখন বছর ১৯-এর মার্ক জুকারবার্গের মাথাতেও নির্ভেজাল আড্ডার ব্যাপারটাই ছিল। তবে বাস্তবে না হয়ে, সেটা ডিজিটালে। তখনই এই ডিজিটাল টাউন স্কোয়্যারের ভাবনাটা মাথায় আসে। সত্যি বলতে কী, ফেসবুকের আগে এই ডিজিটাল টাউন স্কোয়্যারের চরিত্র আনার চেষ্টা অন্য সোশ্যাল মিডিয়াও করেছে। যেমন, অরকুট। কিন্তু নানা কারণে সেটা তৎকালীন নব প্রজন্মের মনে তেমন দাগ কাটতে পারেনি। এর একটা কারণ বোধহয় ওয়ালে দুনিয়ার যাবতীয় বিষয়ে নিজের মত প্রকাশ করতে পারাই শুধু নয়, অন্যের চিন্তাভাবনায় অংশ নিয়ে সেখানে নিজের মতামত বলতে পারার স্বাধীনতাও আছে।
[আরও পড়ুন: অখিলেশের ‘শর্ত’ কংগ্রেসকে, আসনরফার গেরোয় উত্তরপ্রদেশে অথৈ জলে ইন্ডিয়া জোট]
‘স্বাধীনতা’ শব্দটাই বোধহয় ফেসবুকের চরিত্র বদলের মূল মন্ত্র। সম্প্রতি যেসব সমীক্ষা করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে পাঁচ বছর আগের চেয়ে ফেসবুক ওয়ালে বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা মন্তব্য করা অনেকাংশেই কমে গিয়েছে। ব্যবহারকারীরা পোস্ট দেখছে এবং খালি দেখছে। আর কিছুই করছে না। তাহলে কি মন্তব্য করার স্বাধীনতা নিয়ে ব্যবহারকারীরা অতিমাত্রায় চিন্তিত? ওয়াকিবহাল মহল বলছে, চিন্তার কিছু সংগত কারণ আছে।
প্রথমত, মনে রাখতে হবে, বিগত দুই দশকে প্রযুক্তিগতভাবে বিশ্ব অনেক এগিয়ে গিয়েছে। এখন ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’ বা ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ (এআই) অন্য সবের মতো সোশ্যাল মিডিয়াও নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যবহারকারীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় খোঁজাখুঁজির প্রবণতা খেয়াল করে তার পছন্দের একটা ক্ষেত্র বানায় এআই। তারপর ব্যবহারকারীর টাইমলাইনে তার পছন্দের ক্ষেত্রের পোস্ট আসতে শুরু করে। ধরা যাক, কেউ বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ বেশি পছন্দ করে। তো, তার টাইমলাইনে উত্তমকুমার-সুচিত্রা থেকে হাল আমলের দেব, জিৎ, অনির্বাণ, ঋত্বিকদের নানা ছবি আর টলিউডের নানা খবর বেশি আসতেই পারে।
তার মানেটা কী? নিন্দুকেরা বলছে, এ তো আসলে জর্জ অরওয়েলের ‘নাইন্টিনএইট্টিফোর’-এর ‘বিগ ব্রাদার ইজ ওয়াচিং’-এর মতো পরিস্থিতি হয়ে যাচ্ছে। যার যা পছন্দ, যার যা প্রবণতা– সব কিছুরই তথ্য সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থার হাতে চলে যাচ্ছে। আর এই তথ্য সংখ্যায় হাজার-লক্ষ নয়, কয়েকশো কোটি। এই নিয়ে বিশদে বলার আগে সোশ্যাল মিডিয়ার ভুবন যে বিশ্ব ছেয়ে ফেলছে, তা বোঝা দরকার। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বের জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ (সংখ্যার হিসাবে যা প্রায় ৫০০ কোটি ছুঁই ছুঁই) বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার ভুবনে ঘোরাফেরা করে। দেখা যাচ্ছে, যেখানে ৩০০ কোটি ফেসবুক ব্যবহার করেন, সেখানে ইউটিউব ২৫০ কোটি; হোয়াটসঅ্যাপ আর ইনস্টাগ্রাম দু’টিরই ২০০ কোটি করে ব্যবহারকারী। একটু আগে লেখা ৫০০ কোটির সঙ্গে কি হিসাব মিলছে না? আসলে এক ব্যক্তি একই সঙ্গে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকছে এবং সব জায়গাতেই তাকে হিসাবের মধ্যে ধরা হচ্ছে। ফলে ব্যক্তি এক থাকলেও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার জন্য একাধিকের হিসাব আসছে।
[আরও পড়ুন: কংগ্রেস থেকে সদ্য বহিষ্কৃত নেতার আমন্ত্রণ! উত্তরপ্রদেশে কল্কি ধাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন মোদির]
এখন যে-প্রশ্নটা ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে, তা হল– এই যে কয়েকশো কোটি ব্যবহারকারীর নিজস্ব ওয়ালে কমেন্ট, ছবি-ভিডিও পোস্ট, অন্যের ওয়ালে গিয়ে অডিও, ভিডিও পোস্ট– এসবই তো গুগ্ল, মেটা (যে হোল্ডিং সংস্থার ছাতার তলায় ফেসবুক,হোয়াটসঅ্যাপ আর ইন্সটাগ্রাম রয়েছে) তাদের বিশালাকায় সব ডেটা সেন্টারে রেখেছে। প্রশ্ন উঠছে– এই তথ্যভাণ্ডারের ভবিষ্যৎ নিয়ে। সবাই এতদিনে জেনে গিয়েছে, এসব গ্রাহক-তথ্য বিশ্লেষণ করেই তার কেনাবেচার প্রবণতা নির্ধারণ করা হয় এবং সেই অনুসারে বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু আশঙ্কা করা হচ্ছে, এআইয়ের জমানায় ব্যাপারটা এটুকুতে সীমাবদ্ধ না-ও থাকতে পারে। গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য আর পছন্দ-অপছন্দের উপর এআই সেই ব্যক্তির ডিজিটাল ক্লোনও বানাতে পারে। আর, সেই ক্লোনকে আসল ব্যক্তির জায়গায় সহজেই বসানোও যাবে। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়াতে এমনিতেই ফেক প্রোফাইলের ছড়াছড়ি।
এসব কারণেই ব্যক্তিগত তথ্যসুরক্ষার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় গোষ্ঠীগুলি ইতিমধ্যেই ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত আইনও এনেছে। তবে ভুক্তভোগীরা হাড়ে হাড়ে জানেন, আইন আনলেই কাজ শেষ হয় না, সেটার রূপায়ণও জরুরি।
তথ্যভাণ্ডার নিয়ে পরবর্তী যে-প্রশ্ন উঠছে, তা হল ডিজিটাল নজরদারি। আর পাঁচটা ডিজিটাল কাজের সঙ্গেও সোশ্যাল মিডিয়াতেও যে নজরদারি শুরু হয়েছে– তা আর বাচ্চাদেরও জানতে বাকি নেই। এ-ব্যাপারে অনেক সময় বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় মদতের অভিযোগ উঠছে। বলা হচ্ছে, আরব বসন্ত থেকে লাতিন আমেরিকায় ড্রাগ কার্টেলের বিরুদ্ধে জনরোষ– সবের মূলেই রয়েছে ফেসবুক আর হোয়াটসঅ্যাপ। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতা নিয়ে বহু রাষ্ট্রেরই কোনও সংশয় নেই। তাই এখন কোথাও কোনও জনরোষ হলেই প্রথমে নেট পরিষেবা বন্ধ করে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার উপর বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টা করা হয়। গত
৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের হয়ে যাওয়া সাধারণ নির্বাচন এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। এসবের বাইরে বিভিন্ন সময়ে আড়ি পাতা সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ার অন্দরে কী কথাবার্তা চলছে– সেসব জানার চেষ্টা করার অভিযোগও উঠেছে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে কী দাঁড়াল?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যত প্রযুক্তির হাতে সোশ্যাল মিডিয়া চলে যাচ্ছে, তত ওয়ালে, প্রকাশ্যে কোনও বিতর্কিত বিষয়ে মন্তব্য করার প্রবণতা কমছে। বরং, হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক গ্রুপে অনেক খোলামেলা কমেন্ট দেখা যাচ্ছে। এর একটা কারণ যদি হোয়াটসঅ্যাপে এনক্রিপশনের মতো গোপনীয়তার বর্ম থাকা হয় তো অন্যটিতে, মানে ফেসবুক গ্রুপগুলোয়, মোটামুটি চেনাশোনা লোকজন বা সমমতালম্বী মানুষ থাকা। আরও একটা ব্যাপার এসব গ্রুপের ক্ষেত্রে কাজ করে। সাধারণভাবে গ্রুপের কিছু নিজস্ব নিয়মকানুন থাকে। আর এসব নিয়মকানুন ঠিকমতো মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য গ্রুপ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর থাকে। অর্থাৎ পুরোটাই হয় এক নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের মধ্যে। এটাও কিন্তু ঠিক টাউন স্কোয়্যারের খোলামেলা পরিবেশ নয়।
কিন্তু শিশু ও কিশোর মনে ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমানে শিরঃপীড়ার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচুর প্রাপ্তবয়স্ক বিষয় থাকে। উপরন্তু এখন টিকটকের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে ফেসবুকও রিল্স ভিডিও বিভাগ চালু করেছে। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, শিশু ও কিশোরদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকার সময় ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। কোভিডের সময় থেকে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ফলে, সাইবার পর্নের মতো বিপজ্জনক বিষয়ের ফাঁদ থেকে নাবালকদের বাঁচাতে ইউরোপীয় গোষ্ঠী ও আমেরিকা উদ্যোগী হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে বলা হয়েছে রক্ষাকবচ রাখতে। সোশ্যাল মিডিয়ার কর্ণধারদের সংসদীয় কমিটির সামনে ডেকে জানতে চাওয়া হচ্ছে, এ-ব্যাপারে তাদের সংস্থা কী ধরনের সুরক্ষা নিচ্ছে।
বিগত দুই দশকে সোশ্যাল মিডিয়াকে ঘিরে আরও দুটো সমস্যা ক্রমশ দানা বাঁধছে। প্রথমত, ভুয়া খবরের প্রাবল্য। যত দিন যাচ্ছে, তত মূল সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার সংবাদ-পড়ুয়া বাড়ছে। অনেকেই খবরের কাগজ, টিভি না দেখে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স-এর খবরে চোখ বোলান। বহু সময় মূল সংবাদমাধ্যমে সংবাদ আসার আগেই তা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসছে আর তা ঠিক কি ভুল, তা যাচাইয়ের আগেই, অল্পক্ষণের মধ্যেই তা হাজার হাজার গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। ভুয়া খবরের দৌলতে বহু সময়ে অসুবিধায় পড়তেও হচ্ছে আমজনতাকে। এই খামতি দূর করার জন্য মূল সংবাদমাধ্যম থেকে খবর নেওয়া যেতে পারে।
ঠিক এখানেই দ্বিতীয় সমস্যা দেখা দিয়েছে। সংবাদমাধ্যম তাদের খবর দেওয়ার পরিবর্তে সোশ্যাল মিডিয়ার বিজ্ঞাপন থেকে প্রাপ্ত অর্থের একাংশ দাবি করছে। এই পর্ব শুরু হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। ক্যানবেরা এই নিয়ে আইনও করেছে। প্রথমে ‘সূচ্যগ্র মেদিনী’ দিতে রাজি না হলেও গুগ্ল, ফেসবুক এ-ব্যাপারে আলোচনায় বসতে রাজিও হয়েছে। সারা বিশ্বের দৃষ্টি এখন ক্যানবেরার উপর। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার রফার জের পড়বে সংবাদমাধ্যমে। ধুঁকতে থাকা বিশ্বের সংবাদপত্র জগতের পুনরুজ্জীবন ঘটতে পারে এই আর্থিক সমঝোতা কার্যকর হলে।
হার্ভার্ডের কলেজে চালু হওয়া ‘দ্যফেসবুকডটকম’ থেকে ফেসবুক– বিশ বসন্ত পার করে ফেলেছে এই সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্ম। এক অর্থে ফেসবুকের ভুবনই সোশ্যাল মিডিয়ার দর্পণ। ফেসবুকের জিন চাপিয়েই
সোশ্যাল মিডিয়ার অশ্বমেধের ঘোড়া বিশ্বজয়ে বেরিয়েছে। তাই সাফল্যের সঙ্গে খামতিরও সিংহভাগের দায় ফেসবুককে নিতে হয়। তাহলে কি রাষ্ট্রভিত্তিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা গড়ে তুলতে হবে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য? যেমন চিনে রয়েছে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত উইচ্যাট। কিন্তু তাতে কি মুক্ত আলোচনার মূল শর্তটাই লঙ্ঘিত হবে না?
আগামী দিনে সোশ্যাল মিডিয়ার সামনে আরও নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ আসবে। টাউন স্কোয়্যারকে রক্ষা করা কিন্তু তারই সূত্রপাত করছে।