ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: প্রদেশ কংগ্রেসের পরিসংখ্যান বলছে, এ রাজ্যে দলের যা উন্নতি হয়েছে তার বেশিরভাগটাই প্রণব মুখোপাধ্যায়, সোমেন মিত্র, মানস ভুঁইয়া বা প্রদীপ ভট্টাচার্যের সময়ে। তার পর থেকে দলে ভাঙন শুরু হয়। হেভিওয়েট বহু নেতা দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। বিধানসভা, লোকসভায় ফল খারাপ হতে থাকে। 'অজেয়' অধীর চৌধুরীকেও হারতে হয়। দলের ভরাডুবি হয়, বিধানসভায় শূন্যে এসে দাঁড়ায়। মধ্য কলকাতার মৌলালি পেরিয়ে ফিলিপস মোড়ে প্রদেশের সদর দপ্তর বিধান ভবনে চারতলার ‘লাকি’ ঘর ছেড়ে যাওয়াই তার অন্যতম কারণ বলে মনে করে দলের একটা বড় অংশ। দ্বিতীয়বার প্রদেশের সভাপতি হয়ে অধীর চৌধুরী ভিতরের ঘরে বসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু কর্মী-নেতাদের অনুরোধে নতুন প্রদেশ সভাপতি শুভঙ্কর সরকার ভেবেছেন, বাইরের ঘরে বসবেন। সেই ঘরেই রাজ্যের সমস্ত জেলার কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তাই বাইরের ঘরের বাস্তু দেখাতে জ্যোতিষী ডাকা হয়েছে। ঘরের বর্তমান পরিস্থিতি সবটা দেখে জরুরি কিছু বদল করতে হলে সেসব করে নেওয়া হবে।
বিধান ভবনের চারতলায় উঠে সিঁড়ি দিয়ে ডানদিকে ঢুকলেই লম্বা করিডর। তার ডান হাতে অফিস। বাঁ হাতে ছোট-বড় ঘরে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বসার জায়গা। যার প্রথম বড় ঘরটি একসময় ছিল প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির। দলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক মানস সরকার মনে করিয়ে দিয়েছেন, “এই ঘর আমাদের কাছে বরাবর ‘লাকি’। এই ঘর থেকে দল চালিয়ে প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। সোমেনদা অবিসংবাদী নেতা ছিলেন, সাংসদ হয়েছেন। প্রদীপদা পর পর সাংসদ থেকেছেন, মানস ভুঁইয়া রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছেন। তাই সেই ঘরটাই আমাদের কাছে লাকি মনে হয়।” সেই সঙ্গে আক্ষেপ করেছেন সদ্য প্রাক্তন সভাপতি ‘মুর্শিদাবাদের রবিনহুড’ অধীর চৌধুরীর মতো নেতার হার নিয়েও। তাঁর কথায়, “অধীরদাকে হারানো যায়, এটা বিশ্বাস হয়নি। তাঁর হার আমাদের ওই ঘর বদলের বিষয়টি নিয়ে ভাবিয়েছে।”
শুধু বাস্তু দেখানোর ভাবনা নয়, বিধান ভবনে আসা দূরদূরান্তের জেলা থেকে আসা কর্মীদের জন্য ‘রেজিস্ট্রার বুক’ চালু করেছেন শুভঙ্কর। এতদিন কোনও বৈঠক থাকলে নেতৃত্বের মধ্যে কারা এলেন বা এলেন না, তাঁদের জন্য খাতায় সই করার একটা নিয়ম চালু ছিল। তবে কর্মীদের জন্য রেজিস্ট্রার বুক এই প্রথম। সেই খাতায় কর্মীদের নাম, ফোন নম্বর আর তাঁর ব্লক ও ঠিকানা লেখা থাকবে। কী কারণে তিনি এসেছিলেন, সেটা যেমন লিখতে হবে, লিখতে হবে যাঁর কাছে এসেছিলেন তাঁর দেখা পেয়েছেন কি না। মূলত বেশিরভাগ কর্মীই আসছেন প্রদেশ সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে। তাঁকে না পেলে অন্য কারও সঙ্গে দেখা করে তাঁর আসার কারণ ওই খাতায় লিখে যেতে হচ্ছে। পরে ওই কর্মীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কখনও তাঁদের সঙ্গে নিজে কথা বলছেন শুভঙ্কর।
এতে কী ফল হবে? প্রদেশ সভাপতির কথায়, “খুব সামান্য আয়োজন। এতে ওই কর্মীর বিশ্বাস তৈরি হবে যে তাঁর দলীয় নেতৃত্ব তাঁকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আর তাঁর এলাকার খবরও আমরা পরে নিতে পারব।” এর মধ্যে শুভঙ্কর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দুর্গাপুজোর পর থেকে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে এলাকায় দলীয় কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। চায়ের আড্ডায় বসে সাম্প্রতিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।