অর্ণব আইচ: ‘ই-নাগেটস’ ছাড়াও আরও দু’টি গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে হাতানো হয়েছিল কোটি টাকা। গার্ডেনরিচ কাণ্ডের তদন্তে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। কলকাতা পুলিশে দায়ের হওয়া অভিযোগপত্র থেকেই এই তথ্য পেয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। তার ভিত্তিতে চলছে তদন্ত। খোঁজ চলছে ব্যবসায়ী আমির খানের। ইডির নজরে আমিরের বাবা পরিবহণ ব্যবসায়ী নিসার খানও। বাবার পরিবহণ ব্যবসায়ে টাকা লগ্নি করে কালো টাকা সাদা করা হত কি না, সেই তথ্যও খতিয়ে দেখছে ইডি। মূল অভিযুক্তদের সন্ধান পেতে ইডি দপ্তরে আতিফ খান নামে ওই পরিবারের সঙ্গে যুক্ত একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
শনিবার গার্ডেনরিচে ব্যবসায়ী নিসার খান ও তাঁর ছেলে আমির খানের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে ইডি। খাটের তলা থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণা করেই বিপুল টাকা তোলা হয় বলে খবর। এই টাকা লেনদেনের জন্য প্রচুর ভাড়া নেওয়া ‘মিউল অ্যাকাউন্ট’ একাধিক বেসরকারি ব্যাংক খোলা হয়। ইডির কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী, মোাট ১৯৭টি অ্যাকাউন্টে গেমিং অ্যাপ থেকে তোলা টাকার লেনদেন হত। ভিনরাজ্যের বহু বাসিন্দাকে টাকা দিয়ে তাঁদের অ্যাকাউন্ট ভাড়া করা হয়েছে। যাঁদের নামে এই অ্যাকাউন্টগুলি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল তাদের সন্ধান চালাচ্ছে ইডি। প্রাথমিকভাবে ইডি পাঁচটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে, যেখানে রাখা হয় প্রায় ৪৮ কোটি টাকা। এই ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য পেতে সোমবার অ্যাকাউন্টগুলি ও তার নথি পরীক্ষা করবেন ইডি আধিকারিকরা।
[আরও পড়ুন: কলকাতায় ডেঙ্গির বলি আরও এক, রাজ্যে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২, বাড়ছে উদ্বেগ]
২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর পার্ক স্ট্রিট থানায় একটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করে জানানো হয়, ই-নাগেটস নামে একটি গেমিং অ্যাপের মাধ্যমে চলছে টাকার লেনদেন। এ ছাড়াও ‘লাকি সিটি’ সহ দু’টি গেম অ্যাপেও টাকা তোলা হয় বলে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে ‘লাকি সিটি’ ছাড়াও অন্য যে অ্যাপটি রয়েছে, সেটি ক্যাসিনো ধরনের। ‘লাকি সিটি’ অ্যাপটিতে বিভিন্ন ধরনের গেম খেলা যায়। খেলার সঙ্গে সঙ্গে সহজে রোজগারের রাস্তা দেখে এতে আসক্ত হয়ে পড়েন বহু তরুণ ও যুবক। তবে ‘ই নাগেটস’ অ্যাপটি মূল অভিযুক্ত আমির খানের তৈরি বলে এর মাধ্যমেই গেম খেলার ব্যবস্থা করা হত। ইডির সূত্র জানিয়েছে, কয়েকটি ভাড়ার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে একসময় দিনে ৫০ থেকে ৭৫ হাজার বার পর্যন্ত লেনদেন হয়েছে। এই লেনদেন অস্বাভাবিক বলেই ধারণা হয় একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্তাদের। তারই ভিত্তিতে তাঁরা আদালতে অভিযোগ জানান।
আদালতের নির্দেশে পার্ক স্ট্রিট থানায় অভিযোগ জানানো হয়। যদিও এফআইআর হয়নি। এই গেমিং অ্যাপগুলিতে খেললে অনেকেই জিততে শুরু করেন টাকা। টাকা লগ্নি করে গেম খেলতে শুরু করার পর একেকজন দিনে তিন থেকে চার হাজার টাকাও রোজগার করেছেন। এর ফলে দিনে দিনে বাড়তে থাকে সদস্য সংখ্যা। অ্যাপের ওয়ালেটের মাধ্যমে টাকা লগ্নি করা হত। ওই ওয়ালেট থেকে টাকা তুলতেন বিজয়ীরা। ওই টাকাই চলে যেত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। হঠাৎই সিস্টেম আপগ্রেডেশন করার নামে অ্যাপটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন একেকজন কয়েক হাজার টাকা থেকে কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নি করে ফেলেছেন। কিন্তু এই গেমিং অ্যাপগুলি আসলে কে পরিচালনা করছেন, তা বুঝতে না পারার ফলে কেউ অভিযোগ দায়ের করতে চাননি। প্রমাণ লোপাটের জন্য ওই অ্যাপ থেকে মুছে ফেলা হয় সদস্য বা গেম ব্যবহারকারীদের প্রোফাইল।
[আরও পড়ুন: হাতের লেখায় লুকিয়ে বিপদ! আত্মহত্যাপ্রবণতা টের পেতেই কাউন্সেলিং, প্রাণ বেঁচেছে ৪৬ জনের]
এদিকে, এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে যে, গার্ডেনরিচে আমিরের বাবা নিসার খানের পরিবহণের ব্যবসা রয়েছে তাঁদের বাড়ির কাছেই সার্কুলার গার্ডেনরিচ রোডে। এখানে নিসার খান প্রত্যেকদিন গেলেও ইচ্ছামতো বেরিয়ে যেতেন। পরিবহণের ব্যবসা হলেও ভিতরে কী হত, তা জানেন না বাসিন্দারা। তবে আমির খানকে সাধারণত এই অফিসে আসতে দেখা যায়নি। তবে ইডির সন্দেহ, নগদ ও ব্যাংক মিলিয়ে খান পরিবারের ৬৫ কোটি টাকার সন্ধান মিললেও বাকি একটি বড় টাকার অংশ ওই পরিবহণ ব্যবসায় লগ্নি করা হয়েছে। এ ছাড়াও অন্য কয়েকটি ব্যবসায়ও টাকা লগ্নি করা হয়েছে, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। অভিযুক্তদের জেরা করা হলে এই ব্যাপারে আরও তথ্য মিলবে। তবে তদন্তের খাতিরে ওই পরিবহণের অফিসেও পরে তল্লাশি চালানো হতে পারে বলে জানিয়েছে ইডি।