অর্ণব আইচ: গড়িয়াহাট খুনের (Gariahat Double Murder) তদন্তে নেমে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। জোড়া খুনের আগে গোলপার্ক মোড়ের কাছে একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে মা ও চার সঙ্গীকে মিষ্টি খাইয়েছিল মূল অভিযুক্ত ভিকি হালদার! তারপর ছেলে ভিকির হাতে ছুরি ভরতি ব্যাগ তুলে দিয়েছিল মা মিঠুই। ধৃত ভিকির দুই সঙ্গী বাপি মণ্ডল ও জাহির গাজিকে জেরা করে এমনই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তবে মিঠুর বক্তব্যে রয়েছে বহু অসঙ্গতি।
লালবাজারের গোয়েন্দাদের ধারণা, নিজেকে ও ছেলেকে বাঁচাতেই এহেন অসঙ্গতিপূর্ণ বক্তব্য মিঠুর। তাই মিঠুর ছেলে খুনের মূল অভিযুক্ত ভিকিকে গ্রেপ্তার করে জেরা করা হলেই আরও তথ্য হাতে আসবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। এদিকে, লালবাজারের সূত্র জানিয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কাঁকুলিয়া রোডের জোড়া খুনের কিনারা করার জন্য গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকদের প্রশংসা করেছেন পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র। একই সঙ্গে পলাতক ভিকি ও তার দুই সঙ্গীকে তাড়াতাড়ি গ্রেপ্তারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
[আরও পড়ুন: ১০ মাস গা ঢাকা দিয়েও রেহাই মিলল না, নিউটাউন পর্ন শুটিংকাণ্ডে গ্রেপ্তার মূল অভিযুক্ত]
পুলিশ জানিয়েছে, গড়িয়াহাটে খুনের ঘটনার দিন বিকেলে ট্রেনে করে ডায়মন্ড হারবার থেকে ঢাকুরিয়া স্টেশনে যাওয়ার পর হেঁটে গোলপার্কের মোড়ে তিনজনকে নিয়ে যায় মিঠু হালদার। ফার্ন রোডে নিজের কর্মস্থল থেকে এক সঙ্গীকে গোলপার্কে নিয়ে যায় ভিকি হালদার। ইতিমধ্যেই এই মামলায় পুলিশের হাতে ধৃত বাপি মণ্ডল পুলিশকে জানিয়েছে, ধৃত জাহির গাজিকে সরাসরি চিনত না ভিকি। জাহির তার বন্ধু। সে মিঠুর কাছে নিয়ে গিয়েছিল জাহিরকে। গোলপার্কের মোড়ে ভিকি অন্যদের বলে, “কাজ আছে।” তাই তাদের সঙ্গে নিয়ে ভিকি এক জায়গায় যাবে। কিন্তু ‘কাজে’ রওনা হওয়ার আগে মা ও চার সঙ্গীকে পেট ভরে মিষ্টি খাওয়ায় ভিকি। নিজেও খায়।
ধৃত বাপি মণ্ডল ও জাহির গাজির দাবি, মিষ্টি খাওয়ার পরই মা মিঠু হালদার ছেলের হাতে একটি ব্যাগ তুলে দেয়। কিন্তু তারা জানত না যে, সেই ব্যাগের ভিতর কী আছে। পরে কাঁকুলিয়া রোডের বাড়িতে ঢোকার পর সুবীর চাকির সঙ্গে গোলমাল চলাকালীন ওই ব্যাগ থেকেই ধারালো অস্ত্র বের করে ভিকি। একটি নিজে নেয়। অন্য দু’টি দেয় বাপি-সহ দুই সঙ্গীকে। সুবীরবাবুকে যখন ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে তাঁর বুকের উপর উঠে পড়ে ভিকি, তখন বাপিকেও বলে তাঁকে আঘাত করতে। বাপি ও জাহিরের দাবি, মিস্ত্রি হিসাবে তাদের মেঝেয় মার্বেলের কাজ করানোর নাম করে ডায়মন্ড হারবার থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। ভিকি যে ডাকাতি ও খুনের ছক কষেছে, তা তারা জানত না। যদিও পুলিশের পালটা প্রশ্ন, তবে তারা খুন ও লুঠপাটে ভিকিকে সাহায্য করল কেন? কেনই বা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এল না?
মিঠু হালদার খুনের ছক কষার পর কোথা থেকে ছুরি ও ধারালো অস্ত্রগুলি জোগাড় করল, তা জানতে তাকে টানা জেরা করছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। তাতেও দেখা গিয়েছে অসঙ্গতি। জেরার মুখে মিঠু দাবি করেছে, সে মা হয়ে কীভাবে ছেলের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়? এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে মিঠু ও ভিকির দুই সঙ্গী বাপি ও জাহিরকে গোয়েন্দারা মুখোমুখি জেরা করছেন। ভিকি ও তার দুই সঙ্গী এখনও পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে ভিকি সুন্দরবনের এক দ্বীপে কিছুক্ষণ থেকে ফের অন্য দ্বীপে আশ্রয় নিচ্ছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের। তাঁদের মতে, ভিকির হাতে টাকা ফুরিয়ে আসছে। তাই সে পরিচিত কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকাও চাইতে পারে। তাকে গ্রেপ্তার করার পর জেরা করা হলে এই ডাকাতি ও খুনের মামলায় বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।