সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নির্ভয়া। ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে এই একটা নাম বারবার ঘুরে-ফিরে উঠে এসেছে শিরোনামে। কিন্তু প্রতিবারই নিরাশ হতে হয়েছে দেশবাসীকে। বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কেঁদেছে বারবার। কখনও সহ্যের বাঁধ ভেঙেছে, কখনও ক্ষোভের আগ্নেয়গিরি ফেটেছে। শুধু আশাদেবী ও তাঁর পরিবার একা নয়, নির্ভয়া তো গোটা দেশের মেয়ে। তাই সারা ভারতবর্ষ তাঁর সুবিচারের অপেক্ষায় ছিল। অবশেষে শুক্রবার ভোর ৫.৩০ মিনিটে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। নির্ভয়ার শরীরে নির্মমভাবে অত্যাচার চালানোর শাস্তি পেল দোষীরা। আর তাই তিহার জেলের বাইরে ভোরবেলা যেন উৎসবের মেজাজ।
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তিহার জেলের সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন অনেকে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা সেই শুভানুধ্যায়ীদের হাতে ভারতের পতাকা। রাতজাগা চোখগুলি অপেক্ষায় ছিল সেই মুহূর্তের যখন ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হবে তাদের। ঠিক ভোর সাড়ে ৫টায় তিহার জেলের ডিরেক্টর জেনারেল সন্দীপ গোয়েল জানালেন, নির্ভয়া ধর্ষণ কাণ্ডে চার দোষী বিনয়, মুকেশ, পবন ও অক্ষয়কে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। ৩০ মিনিট তাদের ঝুলিয়ে রাখা হবে। সেই ঘোষণার পরই আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন জেলের সামনে উপস্থিত জনতা। শুরু হয়ে যায় মিষ্টি বিতরণ। দেশের মেয়ে সুবিচার পেয়েছে, নিঃসন্দেহে এই দিনটি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এক ব্যক্তির কথায়, “আজ প্রমাণ হয়ে গেল, যে দেশের মেয়ের সঙ্গে খারাপ করলে পরিণতিও খারাপই হবে।” অনেকে বলছেন, দেরি হয়েছে ঠিকই কিন্তু শেষমেশ সুবিচার মিলেছে। অনেকে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে ‘নির্ভয়া জিন্দাবাদ’ স্লোগানও তোলেন।
দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন শ্বাতী মালিওয়াল বলেন, “সাত বছর ধরে নির্ভয়ার মা লড়াই করেছেন। অবশেষে তিনি বিচার পেলেন। গোটা দেশ নির্ভয়ার জন্য রাস্তায় নেমেছিল। লাঠির বারি খেয়েছিল। তাই এটা দেশের জয়। এবার আরও কঠোর আইন আনতে হবে। আশা করি, আইনি প্রক্রিয়ায় বদল আসবে।”
[আরও পড়ুন: অবশেষে মিলল সুবিচার, ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হল নির্ভয়ার চার ধর্ষককে]
শুক্রবার ভোরে ইতিহাসের সাক্ষী রইল তিহার জেল। চার দোষীর মধ্যে একজনকে চলতি বছরই দিল্লির মন্ডলা জেল থেকে তিহারে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। বাকি তিনজন ২০১৩ সাল থেকে এখানেই বন্দি ছিল। তখনই চারজনের বিরুদ্ধে ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেছিল ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট। সেবছর এই তিহার জেলেই আত্মঘাতী হয়েছিল দোষী মুকেশ সিংয়ের ভাই রাম সিং। ছ’জনের মধ্যে এক নাবালককে জুভেনাইল কোর্টে পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে তিন বছরের জন্য তাকে সংশোধনাগারে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই প্রথমবার একসঙ্গে চারজনকে ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হল। এর আগে ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে তিহার জেল দুই কুখ্যাত অপরাধী রঙ্গা-বিল্লার ফাঁসির সাক্ষী হয়েছিল। পরে ১৯৮৯ সালে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যায় অভিযুক্ত সতবন্ত সিং ও কেহর সিংয়ের ফাঁসিও হয়েছিল তিহারে। আর এদিন তিহারের ৩ নম্বর জেলে চার দোষীকে ফাঁসিকাঠে ঝোলালেন পবন জল্লাদ।
[আরও পড়ুন: ‘মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি, সুবিচার দিতে পারলাম’, ৪ ধর্ষকের ফাঁসিতে নির্ভয়ার মায়ের মুখে জয়ের হাসি]
The post ‘নির্ভয়া জিন্দাবাদ’, দেশের মেয়ে সুবিচার পাওয়ায় তিহার জেলের বাইরে উচ্ছ্বসিত জনতা appeared first on Sangbad Pratidin.