এই প্রথম সংবাদমাধ্যমে মুখ খুললেন সেন্ট জেভিয়ার্স বিকিনি কাণ্ডে জড়িত অধ্য়াপিকা। শুনলেন অভিরূপ দাস।
স্বল্প পোশাক পরে ছবি দেওয়ার জন্য চাকরি গিয়েছে আপনার। সেন্ট জেভিয়ার্সের ঘটনায় উত্তাল সমাজ। সিংহভাগ মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে। আপনার পাশে দাঁড়াচ্ছেন। কী মনে হচ্ছে?
অধ্য়াপিকা: তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ। আমি নিজেও সেন্ট জেভিয়ার্সের ছাত্রী। ওখান থেকেই ইংলিশ (অনার্স) স্নাতক হয়েছি। ফাদাররা আমার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন তা অত্যন্ত অনৈতিক।
যেখানে পড়াবেন বলে স্বপ্ন দেখতেন। শুধুমাত্র সাঁতারের পোশাক পরার জন্য সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হল। এমনটা হবে। ভেবেছিলেন?
অধ্য়াপিকা:শুধুমাত্র সাঁতার পোশাক তো নয়। ওরা আমায় ডেকে পাঁচটা ছবি দেখায়। এ ফোর কাগজে প্রিন্ট করে রেখেছিল। তাতে একটাই ছবি ছিল সাঁতারের পোশাক পরা। বাকি দুটো হটপ্যান্ট। অন্য দুটোয় জিম করার গেঞ্জি পরেছিলাম। অবাক লাগল, যখন শুনলাম এমন পোশাক নাকি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদাহানিকর!
নিজের পক্ষে আপনি কিছু বললেন না কেন?
অধ্য়াপিকা: জানতেই চায়নি ওরা। শুধু ছবিগুলো দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল, এগুলো আপনার ছবি? আমি হ্যাঁ, বলতেই ওরা সিদ্ধান্ত শুনিয়ে দিল। এই একপেশে বিচারের বিরুদ্ধেও আমার লড়াই জারি থাকবে।
[আরও পড়ুন: বিকিনি পরার ‘শাস্তি’ বহিষ্কার, সেন্ট জেভিয়ার্সকে কটাক্ষ সেলেবদের]
ব্যক্তিগতভাবে আপনি নিজে কী মনে করেন? শিক্ষিকা হট প্যান্ট পরে সামাজিক মাধ্যমে ছবি দিতে পারে?
অধ্য়াপিকা: শুধু শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার কিংবা অভিনেত্রী নন, আমি মনে করি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে কি পরবে সেটা একান্তই তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত। তাঁর মা-বাবাও সেটা ঠিক করতে পারে না।
অনেকে বলছেন ছবি তুলবেন ঠিক আছে। ইনস্টাগ্রামে দেবেন কেন?
অধ্য়াপিকা: সামাজিক মাধ্যমটা আমার ব্যক্তিগত পরিসরের জায়গা। সেখানে আমায় কে স্টক করছে, আমার ছবি ডাউনলোড করে তা নিয়ে মুখরোচক গল্প ছড়াচ্ছে তাতে তার চরিত্রই ফুটে ওঠে। আর শুনুন, আমি সেন্ট জেভিয়ার্সের বাথরুমে ঢুকে হট প্যান্ট পরে ছবি তুলিনি। ওদের কোনও এক্তিয়ার নেই এ নিয়ে বলার।
আপনার এই ছবিগুলো তো ইনস্টাগ্রামে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পেল কীভাবে?
অধ্য়াপিকা: বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ফ্যাকাল্টি সদস্য, যিনি সেদিন কনফারেন্স রুমেও ছিলেন। তিনি আমায় ফলো করতেন। আমার দৃঢ় সন্দেহ, তিনিই আমার ছবির স্ক্রিনশট নিয়ে, ডাউনলোড করে লোকজনকে দেখিয়েছেন। বিষয়টা এই মুহূর্তে বিচারাধীন বলে তাঁর নাম নিচ্ছি না। তবে অচিরেই সব পরিষ্কার হবে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় তো বলছে, এক ছাত্রের বাবা অভিযোগ করেছে..
অধ্য়াপিকা: একবার বলছে মেল করে অভিযোগ করেছে। আর আমায় ছবিগুলো প্রিন্ট করে দেখাচ্ছে। কেমন হযবরল হয়ে যাচ্ছে না। সেই অভিযোগের মেল তো একবারও দেখলাম না।
এমন একটা চূড়ান্ত অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে গেল। শহরটার উপর রাগ হচ্ছে?
অধ্য়াপিকা: মোটেই না। স্কুলজীবনের শুরু মহাদেবী বিড়লা শিশু বিহারে, তারপর সেন্ট জেভিয়ার্স হয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। মাঝে পিএইচডি করতে ইউরোপে গিয়েছিলাম। চাইলে থাকতেই পারতাম। কিন্তু কলকাতা আমার রক্তে। যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটাকে চূড়ান্ত ব্যতিক্রমী একটা ঘটনা হিসাবেই দেখছি। যাঁদের কাছে আমি ছাত্রাবস্থায় পড়েছি, তাঁদের বহু স্বল্প পোশাকের ছবি আমি দেখেছি। তাতে আমার শ্রদ্ধা বিন্দুমাত্র টলেনি।