নব্যেন্দু হাজরা: ভারী বুটের শব্দ আছে। চাপা টেনশন আছে। অশান্তির আশঙ্কা আছে। তবু ডেউকি থেকে এখনই মুখ ফেরাতে রাজি নয় বাঙালি। ডেউকি মানে অসমের সবথেকে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। যে নদীর কাছেই সিলেট বর্ডার। চলছে সেনার নজরদারি।
পুজোতে চেরাপুঞ্জির বৃষ্টিই এবার টানছে বাঘাযতীনের অর্ণবকে। যতই অশান্তি হোক, পুজোয় ডেস্টিনেশন বদলাতে রাজি নন তিনি। দিন কয়েকের ব্যবধানে সেখানে বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। যে তালিকার নাম নিয়ে অসমবাসীর বাইরে কারও বিশেষ আগ্রহ ছিল না, তাঁরাও এখন খোঁজ নিচ্ছেন সেখানকার অবস্থা নিয়ে। “সব ঠিক হয়ে যাবে তো?” ট্যুর অপারেটরদের ফোনে এখন এই প্রশ্নটাই আসছে বেশি। তবে ট্রাভেল এজেন্সির কর্তারা জানাচ্ছেন, এখনও কেউ টুর বাতিল করেননি। বাতিল করেননি ট্রেন বা ফ্লাইটের টিকিটও। কারণ বেড়াতে যাওয়ার ব্যাপারে বাঙালি এখন নো-কম্প্রোমাইজ।
[ বাঁধাধরা গন্তব্য ভুলে ঘুরে আসুন দেশের এইসব তীর্থস্থানে ]
বছর চারেক ধরে অসমকে ঘিরে তৈরি হয়েছে পর্যটনের নয়া সার্কিট। বহু অজানা-অচেনা জায়গাই হয়ে উঠেছে পর্যটকদের নয়া ডেস্টিনেশন। তাই এবারও পুজোর আগে থেকেই সেখানকার অধিকাংশ হোটেলের ঘর বুকড। ট্রেনের টিকিটও ফাঁকা নেই। কিন্তু এনআরসি তালিকা ঘিরে তৈরি হওয়া ডামাডোলই এখন ভাবাচ্ছে অসমবাসীকে। আর সেখানে ঘুরতে যাবেন বলে যাঁরা ঠিক করেছিলেন, তাঁদেরও কপালে একটু হলেও চিন্তার ভাঁজ।
“আর কটা দিন দেখিই না! তারপর ভেবে দেখব। উমানন্দের দ্বীপ দেখব বলে ঠিক করে রেখেছি। যাই হোক না কেন, যাওয়ার ইচ্ছে আছে তাই। আরও অন্তত মাসখানেক দেখি, পরিস্থিতি বদলায় কি না!” জানান বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা সঞ্জয় সিংহ। পেশায় ব্যবসায়ী। মোট ১০ দিনের ট্যুর। যাবেন ১২ জন। অসমের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে একটুও দমতে রাজি নন। বলেন, “যা হওয়ার হোক। আমরা যাবই। তবে খুব খারাপ পরিস্থিতি হলে অবশ্য বাতিল করতেই হবে।”
এবার পুজোয় ডেউকি নদী থেকে ওপারের সিলেট সীমানা দেখবেন বলে ঠিক করেছেন অর্ণব। তাই বাবা-মায়ের আপত্তিকেও বিশেষ পাত্তা দিতে রাজি নন তিনি। চেরাপুঞ্জির বৃষ্টি বা উমানন্দের দ্বীপ টুর প্যাকেজে সবই আছে। তাই এনসিআর নিয়ে হয়ে চলা অশান্তির কথা শুনলেও তাতে কান দিতে রাজি নন।
[ এক যুগ পর মুন্নারের আন্নামালাই পাহাড় রূপ নিল বেগুনি উপত্যকার, কিন্তু কেন? ]
কেমন আছে অসম তা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে, তবে পুজোর সময় থেকে পর্যটনের মরসুমে ব্যবসা ক্ষতির মুখ দেখবে তা বিলক্ষণ জানেন টুর অপারেটররা। উত্তর কলকাতার এক টুর অপারেটরের অধিকারিক রুনা চট্টোপাধ্যায় যেমন বলেন, “যাঁরা অসম যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন তাঁরা এখনও টুর বাতিল করবেন বলে কিছু জানাননি। তবে এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে চিন্তা তো হবেই। এখন অসমে প্রচুর মানুষ বেড়াতে যান। অনেক দিন আগেই তো সব বুকিং করে রেখে দিয়েছেন।” একই দাবি মধ্য কলকাতার এক টুর অপারেটরেরও। তিনি জানান, শুনেছি, ২০০ কোম্পানি আধা সেনা গিয়েছে ওখানে। এরকম যদি চলে, তবে পর্যটকরা যাবেন কীভাবে? আর আমরাই বা ঘোরাব কীভাবে!
যদিও এসব চিন্তার প্রতিফলন এখনও পড়েনি রেলের টিকিটের তালিকায়। কেউ বাতিল করেননি টিকিট। উত্তর-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক পি জে শর্মা অবশ্য বলেন, “অসমের এই পরিস্থিতিতে অবশ্য এখনও সেভাবে টিকিট বাতিলের কোনও খবর আসেনি। আমাদের কাছের রেলেরও কোনও নয়া বিজ্ঞপ্তি আসেনি।”
The post দমাতে পারেনি নিরাপত্তার চিন্তা, অসমের অসময়েও সফর বাতিলে নারাজ বাঙালি appeared first on Sangbad Pratidin.