সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: একদা ছিল জ্ঞানচর্চার পীঠস্থান। সতীপীঠ। আদতে যেন দেবী সরস্বতীরই আরাধনা কেন্দ্র। আজ তা খণ্ডহর। পাক অধীকৃত কাশ্মীরে আজ শুধুই স্মৃতির ধ্বংসাবশেষ একদা সারদা পীঠ।
[ স্কার্ট ছেড়ে প্রথম শাড়ি মানেই সরস্বতীপুজো, নিজের ক্লাসেই হাতেখড়ি দেয় প্রেম ]
নীলম নদীর তীরে প্রত্যন্ত সারদা গ্রামে এই শক্তিপীঠ। বারামুল্লা থেকে যার দূরত্ব ৪০ মাইল। শ্রীনগর থেকে সত্তর মাইল দূরত্বেই ছিল এই জ্ঞানচর্চা কেন্দ্র। কথিত আছে সতীর ডান হাত পড়েছিল কাশ্মীরের এই স্থানে। ফলে শক্তিপীঠ হিসেবে পূজিত হয়ে আসে এই সারদা পীঠ। কিন্তু শুধু ধর্মীয় পুজোআচ্চাতেই তা সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং ধর্মকে অতিক্রম করে জ্ঞান ও শিক্ষার চর্চার কেন্দ্র হয়ে ওঠে এই স্থান। হিউয়েন সাং নিজে এই স্থানে এসেছিলেন। ছিলেন বছর দুয়েক। তাঁর আসার পর থেকেই হিন্দু ধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মেরও প্রসার ঘটে। তবে হিউয়েন সাং জানিয়েছিলেন, ধর্মীয় স্থানের পাশপাশি শিক্ষাচর্চার দিকটিই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। যেভাবে পড়ুয়াদের মানসিক বিকাশের দিকটির খেয়াল করা হয় এখানে, তা বিশেষ করে উল্লেখ করেছিলেন এই পরিব্রাজক। মহাকবি কলহনের লেখাতেও উল্লেখ আছে এই পীঠের। মুসলিম ইতিহাসবিদ আল বিরুনিও এই ঐতিহাসিক স্থানের মাহাত্ম্য স্বীকার করেছিলেন। সেখানে কাঠের মূর্তিতে দেবী সারদার পুজো করা হত বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। ধর্মীয় মাহাত্ম্য ছিল তো বটেই। কিন্তু শক্তিপীঠ যেভাবে সারস্বত আরাধনার পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল, তা প্রায় বিরল নমুনা। অন্য শক্তিপীঠগুলিতে এই প্রবণতা বড় একটা দেখা যায় না।
[ অনভ্যস্ত কুচি সামলে শুভদৃষ্টির লগন, এই তো বাঙালির সরস্বতী পুজো ]
এই সমৃদ্ধির পতন ঘটে চতুর্দশ শতকে। মুসলিম আক্রমণকারীদের হাতে হানি হয় ওই শিক্ষাকেন্দ্রের। তাতেও কিন্তু সলতে নেভেনি। কাশ্মীরের মহারাজা গুলাম সিং ফের মন্দির গড়ে তোলেন। পরে ৪৭-৪৮ কাশ্মীর যুদ্ধের সময় এই অঞ্চল পাখতুনদের দখলে চলে যায়। তখন থেকেই যোগাযোগ ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হতে থাকে। বর্তমানে এই অঞ্চল পাক অধীকৃত কাশ্মীরের মধ্যেই পড়ে। ২০০৫-এর ভূমিকম্পে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই শক্তিপীঠ। বর্তমানে তা প্রায় খণ্ডহর।
[ হাওড়ায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব, গুঁড়িয়ে দেওয়া হল সরস্বতী প্রতিমা ও মণ্ডপ ]
কাশ্মীরকে একসময় সারদা দেশ হিসেবে বলা হত। তা এই পীঠের কারণেই। হিন্দু বৈদিক সংস্কৃতির চূড়ান্ত বিকাশ হয়েছিল কাশ্মীরে। সেই সঙ্গে জ্ঞান ও বিজ্ঞান চর্চারও অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। এই পীঠের ধ্বংসাবশেষও আজও তার স্মৃতিচিহ্ন বহন করে চলেছে।
The post কোথায় সরস্বতী? পাক অধীকৃত কাশ্মীরে খণ্ডহর জ্ঞানচর্চার এই পীঠস্থান appeared first on Sangbad Pratidin.