সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবি নিয়ে আন্দোলনে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ল আদিবাসী কুড়মি সম্প্রদায়। রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পুরুলিয়া (Purulia), পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ জঙ্গলমহলের একাধিক জায়গায় রেল অবরোধ তোলার পক্ষে শীর্ষ নেতৃত্ব রাজি থাকলেও তাদের কথা মানতে নারাজ অবরোধকারীরা। এখনই রেল অবরোধ তুলবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন তাঁরা। আন্দোলনের মূল মানতা তথা আদিবাসী কুড়মি সম্প্রদায়ের নেতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো তাঁদের বোঝানোর পরও নিজেদের দাবিতে অনড় আন্দোলনকারীরা। পুরুলিয়ার কুস্তাউর, মেদিনীপুরের খেমাশুলিতে উঠছে না রেল অবরোধ (Rail Block)। যদিও অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলছেন, ”আমরা অবরোধ তুলে নিলাম। ট্রেন চলতে পারে এখন থেকে। যাঁরা এখনও ঝামেলা করছেন, তাঁদের সঙ্গে আমাদের সংগঠনের যোগ নেই।”
টানা পাঁচ দিনের অবরোধ কর্মসূচি একাধিক কুড়মি (Kurmi) সংগঠনের মাথায় থাকা নেতাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যে চলে যাবে, সেই আঁচ করেছিল গোয়েন্দা বিভাগ। তাদের আঁচই সত্যি হল। শনিবার অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের সচিব সঞ্জয় বনশল ও সিআরআই ডিরেক্টরের সঙ্গে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স হল থেকে ভিডিও কনফারেন্সের পর এই আন্দোলন তথা কর্মসূচির নেতৃত্ব দেওয়া, আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো অবরোধ তুলে নেওয়ার কথা বললেও তা উঠল না পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খেমাশুলি থেকে। পুরুলিয়ার কুস্তাউরেও অবরোধ প্রত্যাহার নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।
[আরও পড়ুন: ইন্টারনেটে ছড়াচ্ছে শিশু পর্নোগ্রাফি, দুষ্টচক্রকে রুখতে দেশজুড়ে CBI হানা]
শনিবার অবরোধস্থল পুরুলিয়ার কুস্তাউর থেকে ঝাড়গ্রামের খেমাশুলিতে কুড়মি সংগঠনগুলির নেতা-কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। যেমন আগে এসেছিল পূর্বাঞ্চল আদিবাসী কুড়মি সমাজের সঙ্গে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মতানৈক্য। এবারেও একই পরিস্থিতি। কুড়মিদের বিভিন্ন সংগঠন অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেওয়ায় তাদের নেতা-কর্মীরা প্রশ্ন তোলেন, আলোচনাস্থল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনিক ভবন থেকেই কেন অবরোধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা করা হল? অবরোধের জায়গায় গিয়ে ওই ঘোষণা করা উচিত ছিল।
যদিও পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনিক ভবনে আলোচনার পর আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো জানিয়েছিলেন, কুস্তাউর থেকে তিনি অবরোধ তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করবেন। কিন্তু তিনি প্রশাসনিক ভবন থেকে অবরোধস্থলে আসার পর জটিলতা তৈরি হয়। অবরোধে অংশ নেওয়া কুড়মি সংগঠনগুলি এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেওয়া কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতোর কথা মানতে চাইছেন না। কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি রাজেশ মাহাতো বলেন, “রাজ্য সরকার সিআরআই রিপোর্টের উপর জাসটিফিকেশন নোট কেন্দ্রে পাঠাক। তারপর আমরা অবরোধ তুলব। যেদিন জাসটিফিকেশন নোট পাঠাবে সেই দিন আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে।”
[আরও পড়ুন: অনলাইন গেমে কোটি কোটি টাকা ‘প্রতারণা’, গাজিয়াবাদ থেকে গ্রেপ্তার গার্ডেনরিচের আমির খান]
একইভাবে ঝাড়গ্রামের (Jhargram) লোধাশুলিতে সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়া হলেও খেমাশুলিতে রেল ও সড়ক অবরোধ চলছেই। পরে বিকাল সাড়ে চারটের পর কুস্তাউর স্টেশনে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া তথা আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিতপ্রসাদ মাহাতো প্রশাসন তথা রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনার সমস্ত বিষয়টি তুলে ধরার পর বিকাল পাঁচটা নাগাদ অবরোধ তোলার চেষ্টা হয়। কিন্তু অবরোধ বিষয়ে একাধিক সংগঠনের দ্বন্দ্ব সামনে চলে আসে। লোধাশুলিতে আদিবাসী নেগাচারি কুড়মি সমাজ অবরোধ প্রত্যাহার করে। তাঁদের মহামোড়ল অনুপ মাহাতো বলেন, “ঝাড়গ্রামে জেলাশাসকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে আমাদের প্রতিনিধি ছিলেন। পুরুলিয়াতে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা মেনে নিয়ে আমরা লোধাশুলি থেকে রাস্তা অবরোধ তুলে নিয়েছি।”
বিকেলের দিকে অজিতপ্রসাদ মাহাতো কুস্তাউর স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসার সময় অবরোধকারীদের মধ্যে ব্যাপক অশান্তি শুরু হয়। হাতাহাতি, বচসার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। তা নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া, “৫.৩০ টায় আমি নিজে ঘোষণা করে অবরোধ তুলে নিলাম। ট্রেন চলতে পারে এবার। যারা এখনও এসব করছে, তাদের সঙ্গে আমাদের সংগঠনের যোগ নেই।”