ধীমান রায়, কাটোয়া: গতবছর কোনওরকমে ধারদেনা করে সংসার চালিয়েছেন। আশা ছিল করোনা (Corona Virus) পরিস্থিতি কাটলে এবছর আবার মঞ্চে উঠবেন। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কাটাতে না কাটাতেই আবার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা। তাই জাতপেশা ছেড়ে এবার টোটো চালাচ্ছেন যাত্রাশিল্পী কুমার নীলাঞ্জন।
সুদর্শন এই অভিনেতাকে একসময় দেখা গিয়েছিল নট্ট কোম্পানি, অগ্রগামী অপেরার মতন নামি যাত্রাকোম্পানির মঞ্চে। হৃদয়ে নাড়া দেওয়া সংলাপ বলে কত না হাততালি কুড়িয়েছেন। করোনার অভিঘাতে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার আমবোনা গ্রামে নিজের বাড়িতে এবার পাকাপাকিভাবে ফিরে এসেছেন কুমার নীলাঞ্জন। তাঁর কথায়, “কী আর করব? সবচেয়ে পুরানো শিল্প যাত্রাশিল্প আজ শেষ। তাই পেটের তাগিদে টোটো চালাচ্ছি। আমার স্ত্রী, মা ও দিদির কাছ থেকে কিছু গয়না নিয়ে বিক্রি করে ৯০ হাজার টাকা দিয়ে টোটো কিনেছি। সারাদিন টোটো নিয়ে অপেক্ষা করে কখনও দেড়শো টাকা কখনও ২০০ টাকা রোজগার হচ্ছে। এভাবেই বেঁচে রয়েছি।”
[আরও পড়ুন: খুলি ফাঁক করে জটিল Operation, নাক দিয়ে যন্ত্র ঢুকিয়ে বেরল মাথায় আটকে থাকা সূঁচ]
দেড়বছর আগে থেকেই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের জেরে যাত্রানুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। গতবছর লকডাউনের (Lockdown) পর এবছরের শুরুতে অনেকেই ভেবেছিলেন হয়তো করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বস্তুত এবছরেও করোনার দাপট দ্বিগুণ মাত্রায় বেড়েছে। বর্ধমানে একটি যাত্রাদল চালাতেন নবকুমার পোড়েল। তিনি বলেন, “এবছর রথযাত্রার দিন হালখাতা করেছিলাম। ভেবেছিলাম বায়না পাব। কিন্তু হালখাতা করতে যারা এসেছিলেন তারা কেউ ৫০ টাকা, কেউ ১০০ টাকা জমা দিয়েছেন। আসলে তারা কেউ যাত্রাপালা এবছর করাতে আগ্রহী নন। কারণ আদৌ লকডাউন উঠবে কিনা ঠিক নেই। আমাদের আধপেটা খেয়ে দিন চলছে।”
বর্ধমানের (Purba Bardhaman) নেরোদিঘি এলাকায় থাকেন যাত্রাশিল্পী পূর্ণিমা চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “প্রায় দুবছর ধরে যাত্রাদল বন্ধ। আমার স্বামী তিনবছর আগে মারা গিয়েছেন। ১২ বছরের একমাত্র সন্তানের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে পরিচারিকার কাজ করছি। এই কাজে অভ্যস্ত ছিলাম না। কিন্তু পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে।” যাত্রাদলের একজন কন্ঠশিল্পী মহম্মদ আলির কথায়, “একসময় যারা যাত্রাদল চালাতেন তাঁদের অনেকেই এখন বিকল্প কোনও কাজে লেগেছেন। শিল্পীরা কেউ জনমজুরি করছেন, কেউ পরিচারিকার কাজ করছেন। আমরা কী করব জানি না।” প্রত্যেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায়।