সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: অশান্তি থেমেছে। তবু ভয় কাটেনি। পুলিশের আশ্বাসে রাস্তায় বের হচ্ছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির বাসিন্দা। খুলছে হাতেগোনা দোকান-পাটও। কিন্তু তাঁদের আতঙ্ক কাটাতে বিভিন্ন রাস্তায় এখনও মার্চ করছে আধা সামরিক সেনা। এদিন দু’দফায় মোট দশ ঘণ্টার জন্য ১৪৪ ধারা শিথিল করা হয়েছিল। তবে শুক্রবারও হাসপাতালে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত হিংসায় বলির সংখ্যা ৪৩। জখম শতাধিক।
রাজধানীর এমন পরিস্থিতিতে বদলি করা হয়েছে দিল্লির পুলিশ কমিশনারকেও। নয়া পুলিশ কর্তা সাফ জানিয়েছেন, কাউকে রেয়াত করা হবে না। অশান্তিতে মদত জুগিয়েছে যারা, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে হিংসার ঘটনায় ১৩০টি এফআইআর দায়ের হয়েছে। গুলি চালানোর ঘটনায় আলাদা করে ৬৫টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ৬৩০জন। অভিযুক্তদের খোঁজে চলছে তল্লাশি।
[আরও পড়ুন : উন্মত্ত জনতার থেকে ৮০ জন মুসলিমকে বাঁচানোর পুরস্কার, নায়কের সম্মান পাচ্ছেন দিল্লির মহিন্দর]
এদিকে দিল্লি উত্তর-পূর্ব প্রান্তের হিংসায় বলিউডি কায়দায় রাস্তায় বন্দুক হাতে নেমেছিলেন মেরুন শার্ট পরা যুবক, নাম মহম্মদ শাহরুখ। প্রকাশ্য দিবালোকে বন্দুক হাতে নিয়ে পুলিশের সামনে গুলি ছোঁড়ে সে। দিল্লি পুলিশের আধিকারিক জানান, এখনও অধরাই দিল্লি হিংসায় জড়িত শাহরুখ। হদিশ মেলেনি আইবি আধিকারিক খুনে অভিযুক্ত আপ কাউন্সিলর তাহির হুসেন। এদিন তার বাড়ি সিল করে দেয় পুলিশ। গোটা বাড়ি ঘুরে দেখে ফরেনসিক দল।
[আরও পড়ুন : ‘বাবা কখন আসবে…’ চার বছরের মেয়ের প্রশ্নে নির্বাক অশান্ত দিল্লি]
অশান্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে দিল্লি সরকার ও প্রশাসন। উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণ বিলি করা হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি হিংসা কবলিতদের পাশে দাঁড়িয়েছে স্বেচ্ছাসেবীরা ও গুরুদ্বারগুলি। শিবসাগর এলাকায় গুরুদ্বারে দুর্গতদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করেছে গুরুদ্বার কর্তৃপক্ষ। তবে ত্রাণের গাড়ি ঢুকলেই উপদ্রুত এলাকার বাসিন্দাদের গাড়ির পিছনে ছুটতে দেখা গেল। তবে বহু এলাকাই প্রায় জনমানসহীন। পুড়ে যাওয়া স্কুল-বাড়ির পাশ দিয়ে গেলে তাপ অনুভব করা যাচ্ছে বেশ। অনেকেই সবকিছু হারিয়ে এখন সর্বশান্ত। তবে গৃহহীনদের ২৫ হাজার চাকা করে অর্থ সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে দিল্লি সরকার।
এ সবের মধ্যেও দ্রুত স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার তাগিদ চোখে পড়ছে দিল্লিবাসীর মধ্যে।হিন্দু-মুসলিম সকলের মুখে একই রা, “আমরা হিংসা চাই না, অশান্তি চাই না। যুগ যুগ ধরে হিন্দু মুসলিম একসঙ্গে বাস করছি। হিংসা আমরা ছড়াইনি। বহিরাগতর অশান্তি ছড়াচ্ছে। আর তাতে আমাদের ভুগতে হচ্ছে।” পোড়া গন্ধ গায়ে মেখেই ঘুরে দাঁড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে ভাঙাচোরা উত্তর-পূর্ব দিল্লির বাসিন্দারা। বুঝিয়ে দিচ্ছে, “ইয়ে দিল্লি হ্যায় মেরে ইয়ার/ বাস ইশক, মোহব্বত প্যায়ার।”
The post মৃত্যু বেড়ে ৪৩, অশান্তির আঁচ নিভিয়ে ছন্দে ফেরার চেষ্টায় উত্তর-পূর্ব দিল্লি appeared first on Sangbad Pratidin.