সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘ ২৪ বছর পর উত্তর কোরিয়ায় গিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বহুদিন পর তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে সেদেশের রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং উনের সঙ্গে। জানা গিয়েছে, বৈঠকের পর দুজনেই একটি সামরিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। রাশিয়া কিংবা উত্তর কোরিয়া। অন্য দেশ আক্রমণ শানালেই একে অপরের পাশে দাঁড়াবেন পুতিন ও কিম। নাম না করলেও যে দুজনের ইঙ্গিত আমেরিকার দিকেই তা স্পষ্ট। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধে কিয়েভের পাশে রয়েছে আমেরিকা। আবার কিমের দেশের সঙ্গেও 'শত্রুতা'র অন্ত নেই ওয়াশিংটনের। ফলে আমেরিকাকে চাপে ফেলতে আরও শক্তিশালীভাবে জোটবদ্ধ হয়েছে মস্কো ও পিয়ংইয়ং।
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকার চোখরাঙানি উপেক্ষা করে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন কিম। বন্ধু পুতিনকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, রণক্ষেত্রে রাশিয়াকে সবরকমভাবে নিঃশর্ত সাহায্যের। পাশাপাশি রুশ প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পিয়ংইয়ংয়ে যাওয়ার জন্য। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে বুধবার উত্তর কোরিয়ায় গিয়েছেন পুতিন। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান কিম। রুশ প্রেসিডেন্টের অভ্যর্থনায় ছিল এলাহি আয়োজন। পিয়ংইয়ং শহরে তাঁকে রেড কার্পেটে স্বাগত জানানো হয়। গোটা শহরজুড়ে ছিল পুতিনের পোস্টার ও ছবি। তার পর বৈঠকে বসেন দুই বন্ধু।
রয়টার্স সূত্রে খবর, বুধবার এই বৈঠকে দুজনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে অত্যাধুনিক মিসাইল, গোলবারুদ, নানা ধরনের শক্তিশালী যুদ্ধাস্ত্রের আদানপ্রদান হতে পারে দুদেশের মধ্যে। তবে এই চুক্তি সম্পর্কে খুব একটা বিস্তারিত জানাননি দুই রাষ্ট্রপ্রধানের কেউই। পুতিনের কথায়, "প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বহিরাগত আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য আমরা জোটবদ্ধ। কেউ আমাদের আক্রমণ করলে আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়াব।" কিমও সহমত হয়েছেন তাঁর বন্ধুর সঙ্গে।
[আরও পড়ুন: কানাডার সংসদে নিজ্জরকে ‘সম্মান’! কনিষ্ক হামলার কথা মনে করিয়ে দিল ভারত]
বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে উত্তর কোরিয়া। সিউলকে চোখ রাঙিয়ে প্রায়ই মিসাইল ছোড়ে পিয়ংইয়ং। পালটা আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত। আর লড়াইয়েও দক্ষিণ কোরিয়াকে সঙ্গ দিচ্ছে আমেরিকা। ফলে এবার ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে রাশিয়াকেই ঢাল করেছেন কিম। ইউক্রেনযুদ্ধ আবহে মস্কোর সঙ্গে সংঘাত বেড়েছে হোয়াইট হাউসের। একাধিকবার আমেরিকাকে পরমাণু যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পুতিন। ফলে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে নাম করে আমেরিকাকেই বার্তা দিলেন দুই রাষ্ট্রনেতা।
বলে রাখা ভালো, দুদেশের মধ্যে অস্ত্র চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল হোয়াইট হাউস। রুশ প্রেসিডেন্টের এই সফর সম্পর্কে সোমবার মার্কিন বিদেশ দপ্তর জানায়, ‘পুতিন এই সফর নিশ্চিত ছিল। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অস্ত্র চাইতেই তিনি উত্তর কোরিয়ায় যাচ্ছেন। দুদেশের এই সম্পর্কে আমরা উদ্বিগ্ন।’ মার্কিন বিদেশ দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারও ফের একবার দাবি করেন, “ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অস্ত্রভাণ্ডারে টান পড়েছে। তারা চাইছে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার থেকে অস্ত্র নিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করতে। আমরা জানি, এর মধ্যে পিয়ংইয়ং থেকে কয়েক ডজন ব্যালিস্টিক মিসাইল ও ১১ হাজার কন্টেনারে গোলাবারুদ রাশিয়ায় গিয়েছে। যা মস্কো ব্যবহার করছে কিয়েভের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে।” ফলে হাতিয়ার ও প্রযুক্তির আদানপ্রদানের মাধ্যমে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে এখন সম্পর্ক আরও মজবুত হয়েছে। যা এখন মাথাব্যথার কারণ আমেরিকার কাছে।