রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: অতঃপর সে হেরে গেল। সময়ের দো-নলা বন্দুক ‘সমঝে’ দিল নোলেকে, সময় ফুরোচ্ছে বুঝিয়ে। কেউ খুব দুঃখ পেল, কেউ বড় খুশি হল। কেউ লিখল, আহা ছত্রিশেও কী লড়ল রে, এ ছেলের কলজে খুনে। কেউ বলল, নে ব্যাটা পেলি তো অ্যাদ্দিন পর রজারকে হারানোর ‘সাজা’, হুঁ হুঁ বাবা, উপরওয়ালার বিচার বলে একটা বস্তু আছে।
ভালবাসা পাওয়াই বড় কঠিন, নিঃশর্ত ভালবাসা তো আরও। খেলার গ্রহে কতজনই বা পেয়েছেন সেই অশেষ আশীষ, আজ পর্যন্ত কতজনই বা হয়ে উঠতে পেরেছেন ভালবাসার অকৃত্রিম বরপুত্র? হাতেগোনা ক’টা নাম সহায়-সম্বলের লোটা-কম্বল। মারাদোনা। পেলে। শচীন। মহম্মদ আলি। স্টেফি। অধুনা ধোনি। বাকি সব, সমস্ত বিভাজিত ভালবাসা। নোভাক জকোভিচের অত ভাগ্য নেই যে, ভালবাসা ছাড়িয়ে নিঃশর্ত ভালবাসার স্বর্গে স্থান পাবেন। তা সে যতই বারুদ-বিধ্বস্ত শৈশব ঠেলে তাঁর উত্তরণ হোক।
[আরও পড়ুন: এশিয়াডে ভারতকে ফুটবল খেলার সুযোগ করে দিন, মোদিকে আরজি কোচ ইগর স্টিমাচের]
আসলে সার্বিয়ানের আগমন যে সময়, তখন সোনালি চুলের এক সৌম্যকান্তি সুইস কোর্টে আনমনে কবিতা লিখছেন। মাঝে মাঝে যাঁকে উত্যক্ত করে যাচ্ছেন এক বন্য স্পেনীয়। সুযোগ পেলে সজোরে আঘাত করছেন সেই চ্যাম্পিয়নের অহংয়ে, প্রকৃত চ্যালেঞ্জারের মতো। সেই লড়াইয়ের কোর্টে কি না এবার তিন নম্বর! আনুগত্য অত সস্তা নাকি? জকোভিচ (Novak Djokovic) জানতেন, মনুষ্য-মনের অধিকার পেতে তাঁকে লড়তে হবে চিরকাল, ট্রফি সংখ্যা দিয়ে যা জেতা যাবে না, হয়তো বা পাবেনও না শেষে, মেনে নিতে হবে শর্তাবলী প্রযোজ্যের জীবন। তার উপর চরিত্র। তাঁরই মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে উঠে আসা আর এক অতুলনীয়ও যে কখনও হতে পারেননি তিনি। পারেননি মদ্রিচের মতো মায়া-সন্তান হতে, চরিত্রে মেলেনি। টেনিসের জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচ হয়ে থেকে গিয়েছেন উলটে। আর কে না জানে, পৃথিবীর সব পেশারই ‘ইব্রা’দের আর যা-ই হোক, অবিভক্ত ভালবাসা জোটে না।
আর তাই, রোববার রাতে আলকারাজের তারুণ্যের স্পর্ধার কাছে নোভাক হেরে যাওয়ার পর কেউ দুয়ো দিল, কেউ খানিক সেলাম ঠুকল। শেষে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। আবেগ-যুক্তির ব্যালান্স শিট মিলিয়ে, এক কালজয়ী লড়াইয়ের ওমকে পরিতৃপ্তির পাশবালিশের মতো জড়িয়ে। শুধু কেউ খেয়াল করল না, বিস্মৃতির ছায়াপথে অজান্তে নাম লিখিয়ে ফেলল খোঁচা চুল-দাড়ির, মাঠের ঘাস চিবোনো ক্ষ্যাপাটে ছেলেটা। যে ছায়াপথে তার শরিকদের কাউকে এখন দেখা যাচ্ছে উইম্বলডনে, স্যুট-টাইয়ে। কেউ ইন্টার মায়ামি চলে যাচ্ছে। কেউ লড়ছে সৌদি আরবে। কেউ বা আবার অবাধ্য হাঁটুকে বশে এনে আপ্রাণ চেষ্টা করছে জীবনের শেষ আইপিএলে শেষের কবিতা লেখার। যারা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দা হয়েও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বহন করেছিল প্রায় এক যুগকে, বিভিন্ন খেলা দিয়ে, শত দুঃখ-যন্ত্রণা-অপ্রাপ্তির সাধারণ জীবনকে যারা উপহার দিয়েছিল এক অসাধারণ সময়, খেলার টানে সব ভুলে যাওয়ার সময়।
[আরও পড়ুন: ফেসবুক পোস্টে পুরনোকে ভুলে নতুন শুরুর ইঙ্গিত মনোরঞ্জন ব্যাপারীর, তুঙ্গে দলবদলের জল্পনা]
ভাল লাগছে না রে তোপসে, ভাল লাগছে না। তারাগুলো কেমন আজ এক এক করে মুছে যাচ্ছে। এবং হ্যাঁ, ভালবাসাও!