রাজনীতির আঙিনায় অনেকদিন ধরেই ঘোরা-ফেরা করছেন রাহুল গান্ধী৷ তবে রাজনীতিতে এখনও পর্যন্ত ব্যর্থ নায়ক হিসাবেই পরিচিত কংগ্রেসের যুবরাজ৷ মনমোহন সিং, লালকৃষ্ণ আদবানি, পি চিদম্বরমের মতো দেশের একাধিক জনপ্রিয় তথা প্রথম সারির রাজনীতিবিদকে লক্ষ্য করে জুতো ছোড়া হয়েছিল৷ এবার সেই তালিকায় উঠল রাহুলের নাম৷লিখছেন জয়ন্ত মুখোপাধ্যায়
এতদিনে বোধ হয় কুলীন রাজনীতিবিদদের তালিকায় নাম উঠল কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীর৷ দু’দিন আগে উত্তরপ্রদেশে দলের প্রচার যাত্রায় স্থানীয় এক তরুণ রাহুলকে লক্ষ্য করে জুতো ছুড়েছিলেন৷ এর আগে দেশে ও বিদেশে একাধিক গণ্যমান্য নেতাকে লক্ষ্য করে জুতো ছোড়া হয়েছিল৷ জুতো ছোড়ার ক্ষেত্রে এদেশে সর্বশেষ সংযোজন হলেন রাহুল গান্ধী৷ এদেশেরই মনমোহন সিং, লালকৃষ্ণ আদবানি, পি চিদম্বরম, নীতিন গড়করি, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ওমর আবদুল্লা, বি এস ইয়েদিয়ুরাপ্পা, জিতনরাম মাঝির মতো পরিচিত নেতাকে জুতো ছোড়া হয়েছিল৷ বিদেশেও জর্জ বুশ, টনি ব্লেয়ার, পারভেজ মুশারফ, আসিফ আলি জারদারি, মা ইং জিউয়ের মতো তাবড় ক্ষমতাবান ব্যক্তির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে পাদুকা পুরাণের কথা জড়িয়ে রয়েছে৷ অর্থাই ওই সব নেতাদের লক্ষ্য করে কোনও না কোনও সময় জুতো ছোড়া হয়েছিল৷ সেই হিসাবে বলতে গেলে রাহুল গান্ধী এতদিনে বোধহয় রাজনীতিতে সাবালক হলেন৷
কবে কাকে জুতো ছোড়া হয়েছে এটা আমাদের বিচার্য নয়৷ বরং যে ব্যক্তি রাহুলকে লক্ষ্য করে জুতো ছুড়েছেন তাঁর মুখনিঃসৃত বাণীই আমাদের আলোচ্য৷ হরিওম মিশ্র নামে এক তরুণ সাংবাদিক এই জুতো কাণ্ডের নায়ক৷ তিনি বলেছেন কংগ্রেসের এই রোড-শো একেবারেই অর্থহীন৷ দীর্ঘ দিনের শাসনকালে কংগ্রেস দেশ তথা উত্তরপ্রদেশের জন্য কিছুই করেনি৷ হরিওমের এই অভিযোগ যে ভিত্তিহীন সেকথা বোধহয় তার শত্রূও হলফ করে বলতে পারবে না৷ ২০১৪-র লোকসভা ভোটের পর গোটা দেশে কংগ্রেস কার্যত সাইনবোর্ড সর্বস্ব একটা দলে পরিণত হয়েছে৷ শীতঘুমে চলে যাওয়া সেই দলকে চাগিয়ে তুলতে পরিশ্রম করছেন রাহুল৷ দলের সহ-সভাপতি হিসাবে রাহুল এটা করবেন সেটাই স্বাভাবিক৷ দলকে চাঙ্গা করার কাজ করতে গিয়ে রাহুল কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি তথা সেই দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্পর্কে অনেক কথা বলছেন৷ কিন্তু রাহুল কি কখনও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখেছেন যে, তিনি যেসব কথা বলছেন সেগুলি তাঁর মুখে শোভা পায় কি না? ক্ষমতায় এলে উত্তরপ্রদেশে তথা গো-বলয়ের বৃহত্তম রাজ্যের কৃষি ও শিল্পের উন্নয়নে কংগ্রেস কী করবে তার ফিরিস্তি শোনাচ্ছেন রাহুল৷ এখানেই হরিওমের বক্তব্যের যথার্থতা৷ স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশে প্রায় ৩১ বছর সরকার চালিয়েছে৷ ওই ৩১ বছরে কংগ্রেস গোবলয়ের এই বৃহত্তম রাজ্যের জন্য কী করছে সে কথা কী একবার বলবেন রাহুল? শুধু এই রাজ্য নয়, দেশের আরও কয়েকটি রাজ্যে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল শতাব্দী প্রাচীন এই দল৷ আজও কয়েকটি রাজ্য কংগ্রেসের হাতেই রয়েছে৷ সেই সব রাজ্যগুলির জন্য কংগ্রেস সরকারের অবদান কী রাহুল যদি দয়া করে সর্বসমক্ষে বলেন তো ভাল হয়৷
অনেক দিন আগে ব্রিটিশ এই দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে৷ কিন্তু তাদের তৈরি বিভাজনের রাজনীতি আজও অটুট আছে৷ কংগ্রেস সেই রাজনীতিরই পৃষ্ঠপোষক৷ কেন্দ্র তথা যে সমস্ত রাজ্যে তারা শাসন চালিয়েছে সেখানে তারা বরাবরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে রাজনীতির বোড়ে হিসাবে ব্যবহার করেছে৷ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তারা কখনওই ভোটব্যাঙ্ক ছাড়া অন্য কিছু ভাবেনি৷ তাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রকৃত উন্নয়নের কথা মনে পড়েনি কংগ্রেসের৷ তাদের শান্ত রাখতে মাঝেমধ্যে কিছু ভেট দেওয়ার প্রচেষ্টা চোখে পড়েছে মাত্র৷ উন্নয়ন করতে হলে দেশজুড়ে রাস্তাঘাট প্রয়োজন এমন কথাও তাদের মনে হয়নি৷ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুত্ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে বিশেষ ভাবতে দেখা যায়নি তাদের৷ একই কারণে স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরেও মাসুল সমীকরণ নীতি প্রণয়ন করে উঠতে পারেনি তারা (১৯৯৩ সালে এই প্রথা রদ হয়৷) দেশের উন্নয়ন বলতে কংগ্রেস শুধুই নির্দিষ্ট একটি পরিবারের উন্নয়নের কথা ভেবে এসেছে৷ কংগ্রেস মানেই যেন গান্ধী পরিবার৷ সেখানে আর কারও ঠাঁই নেই৷ দেশজুড়ে যেখানে যত প্রকল্প হয়েছে তার সবগুলির আগে-পরে বসেছে হয় জওহরলাল, ইন্দিরা নতুবা রাজীব গান্ধীর নাম৷ এমনকী, মহাত্মা গান্ধীও সেখানে ব্রাত্য থেকে গিয়েছেন৷ তাই রাহুল আজ যাই বলুন না কেন মানুষ যে সেটা বিশ্বাস করছে না, সেটাই স্বাভাবিক৷ সম্প্রতি বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে সেই সত্যটা প্রমাণিত হয়েছে৷ তবে আর যাই হোক রাহুল গান্ধী রবার্ট ব্রূসের কথা ভুলে যাননি৷ ব্রূসের মতোই তিনি চেষ্টা চালাচ্ছেন কংগ্রেসকে বাঁচাতে৷ এই চেষ্টা জারি থাকলে অবিলম্বে না হলেও দূর ভবিষ্যতে যে রাহুল সফল হতে পারেন তা এখনই বলা যেতে পারে৷
The post কুলীন রাজনীতিবিদদের দলে এবার রাহুল appeared first on Sangbad Pratidin.