অর্ক দে, বর্ধমান: 'বিচ্ছেদে'র ২৫ বছর! তবে সেই বিচ্ছেদ দুঃখের নয়, বরং আনন্দের। ২৫ বছরে সেই স্মৃতিই রোমন্থন করছেন দুই বোন। আত্মীয়স্বজন থেকে চিকিৎসক সকলেই 'মোনা' ও 'লিসা'র হাসিতে খুশি। কিন্তু কেন 'বিচ্ছেদ' এত আনন্দের? তার নেপথ্যে একটি ঘটনাপ্রবাহ রয়েছে। তার জন্য পিছিয়ে যেতে হবে ২৫ বছর আগে।
কী ঘটেছিস সেই সময়? পূর্ব বর্ধমানের রায়নার এক পুরোহিতের স্ত্রী নার্সিংহোমে যমজ কন্যাসন্তান প্রসব করেছিলেন। দুই যমজ বোনের শরীর ছিল জোড়া। নাম দেওয়া হয়েছিল মোনা ও লিসা। এমন যমজ সন্তানকে কুসংস্কারের কারণে বাড়িতে নিয়ে যেতে চাননি পুরোহিত। তবে চিকিৎসক নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় দুই শিশুকে দত্তক নেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। তাঁর উদ্যোগেই বিরল অস্ত্রোপচারে সুস্থ জীবন পায় মোনা ও লিসা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ওই যমজ শিশুদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তিনি মোনা-লিসাকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। ১ মাস বয়স থেকে ৯ মাস পর্যন্ত শিশু দুটিকে মেডিক্যাল বোর্ডের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এরপর তাদের সফল অস্ত্রোপাচার সম্ভব হয়।
চিকিৎসক নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।
চিকিৎসক নরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, "জন্মগত ত্রুটির কারণে শিশু দুটির পাঁজরের অংশ একসঙ্গে জুড়ে ছিল। এই ধরনের ঘটনাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় 'কনজয়েন্ট টুইন' বলা হয়। সাধারণত এক্ষেত্রে দুটি শিশুই একটি লিঙ্গের হতে থাকে। শিশু দুটির শরীরের অন্যান্য অংশ আলাদা থাকলেও তাদের দুজনের একটিমাত্র লিভার বা যকৃত ছিল। এই ধরনের শিশুদের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করার ক্ষেত্রে জীবনহানির আশঙ্কা থাকে। অস্ত্রোপচারে তা সফল হয়েছে।" চিকিৎসকের আরও বক্তব্য, আজ থেকে ২৫ বছর আগে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে এই ধরনের অস্ত্রোপচার কল্পনার অতীত ছিল। বর্তমান সময়ে অনেক উন্নত মানের যন্ত্রপাতি ব্যবহার হলেও সেই সময় উন্নত যন্ত্রপাতি সেভাবে ছিল না। তবু 'কনজয়েন্ট টুইন' শিশুর সফল অস্ত্রোপচার হয়।
মোনা ও লিসার বয়স এখন ২৫ বছর। পড়াশোনার পর তাঁদের বিয়েও হয়ে গিয়েছে। তাঁরা এখন এক সন্তানের মা। দু'জনেই সংসার করছেন সুখে। চিকিৎসক মুখোপাধ্যায় মাঝেমধ্যে খোঁজ নেন তাঁদের। চিকিৎসক বলেন, "২৫বছর আগে বিরল অস্ত্রোপাচার। তখন এতো প্রযুক্তি ও পরিকাঠামো ছিল না। মোনা ও লিসা যে এখন হাসছে, তাতে আমাদের সকলের প্রাণ জুড়োয়।''