গৌতম ব্রহ্ম: “আপনি শুধু ক্রিজে টিঁকে থাকুন। সেঞ্চুরি করানোর দায়িত্ব আমাদের।” এমনই আশ্বাস দিচ্ছেন শহরের বয়স্করোগ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের দাবি, চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন অনেক উন্নত। পরিবারের সাহায্য পেলে বয়স্কদের একশোর চৌকাঠ পার করানোটা কঠিন কিছু নয়। কথামতো কাজও শুরু করে দিয়েছেন ডাক্তারবাবুরা। সম্প্রতি হাওড়ার নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন এক রোগীকে শতায়ু করার চ্যালেঞ্জও নেওয়া হচ্ছে।
তাজ্জব হওয়ার বিষয়, মানুষ বাঁচতে পারে ১৪০ বছর পর্যন্ত। শুনতে অবাক লাগলেও পরিবেশ-পরিস্থিতি অনূকূল থাকলে নাকি তা সম্ভব। কিন্তু অন্তরায় আমাদের জীবনযাপন পদ্ধতি। তাই সত্তর-আশিতেই ইনিংস শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে এও শোনা যাচ্ছে, ২০৩০-এর মধ্যে মানুষের গড় আয়ু দাঁড়াবে ১১৫। প্রসঙ্গত, জাপানের মানুষদের গড় আয়ু ৮৫। ভারতের সেটা ৬৯। এমনকী, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুও ভারতের থেকে বেশি। সেখানে গড় আয়ু ৭৩। জাপানেই নাকি এমন দ্বীপ রয়েছে যেখানে হেসেখেলে স্থানীয় মানুষরা সেঞ্চুরি পার দিচ্ছেন। কথার কথা নয়, বিশ্বে জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রবীণতম এক ভারতীয়। নাম মহাষ্ট মুরাসি। বয়স ১৭৮। ‘গিনেস বুক অফ রেকর্ডস’ অন্তত এমনই দাবি করেছে। মুরাসি এখন বেনারসে থাকেন। বেনারসের স্বামী শিবানন্দও ১২২ নট আউট। যদিও কোনও ক্ষেত্রেই মেডিক্যাল টেস্ট কিছু হয়নি। সরকারি কাগজপত্রের ভিত্তিতেই বয়সের এই হিসাব। কিন্তু ভারতীয় সাধুদের মধ্যে বয়স নিয়ে অনেক ‘মিথ’ চালু রয়েছে। তার উপর ভর করেই সেঞ্চুরির পথে হাওড়ার পঞ্চাননতলার অন্নপূর্ণা খাঁ।
[শহরে ফের সোয়াইন ফ্লু-র থাবা, বেসরকারি হাসপাতালে মহিলার মৃত্যু]
আগামী ৭ অক্টোবর শতায়ূ হবেন অন্নপূর্ণাদেবী। নাতি-নাতনিরা সবাই শতবর্ষ পালনের প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন। এরই মধ্যে ছন্দপতন। ডায়েরিয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অন্নপূর্ণাদেবী। ভর্তি হয়েছেন হাওড়ার ‘সীমা ইনস্টিটিউট অফ হেলথ’ নার্সিংহোমে। এমনিতে বিশেষ কোনও সমস্যা নেই। তবে, হিমোগ্লোবিন ছয়ে নেমে এসেছে। নার্সিংহোমের তরফে ডা. অর্ঘ্য মৈত্র বুধবার এই খবর দিয়ে বলেন, “হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে ২ ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছে। নাতি-নাতনিদের আশা বিফলে যাবে না। আমিও বার্থ-ডে পার্টিতে যাব।” আশাবাদী অন্নপূর্ণাদেবীও। “নাতি-নাতনিদের কথা দিয়েছি। একশো পার করবই।”-প্রত্যয়ী ঘোষণা তাঁর।
ডাক্তারবাবুদের পর্যবেক্ষণ, বেঁচে থাকার এই অদম্য ইচ্ছেই এখনও জীবনের বাইশ গজে টিকিয়ে রেখেছে অন্নপূর্ণাদেবীকে। উত্তর কলকাতার সিমলা স্ট্রিটে মামার বাড়িতে জন্ম। ১৯৪১ সালে ৭ আগস্ট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষযাত্রার সাক্ষী ছিলেন। নিজের চোখে দেখেছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ডা. বিধানচন্দ্র রায়কে। হৃদয়জুডে় এখনও উড়ছে সাতচল্লিশের তেরঙ্গা। অন্নপূর্ণাদেবীর পুত্রবধূ শুক্লা খাঁ জানালেন, তাঁর শাশুড়ি আশি বছর বয়সে একবার সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পেয়েছিলেন। সেই সময় সিটি স্ক্যান করাতে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। পুরোদস্তুর অসুস্থ হয়ে দীর্ঘমেয়াদে হাসপাতালবাস এই প্রথম।
[হাসপাতালের মধ্যেই কর্তব্যরত চিকিৎসককে সপাটে চড়, কাঠগড়ায় ওসি]
অন্নপূর্ণাদেবীর মতো অনেক বয়স্ক মানুষ রয়েছেন এই বাংলায়। অনেকেই পারিবারিক কারণে ‘ভাল নেই’। উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা না পাওয়া। কিংবা পারিবারিক অশান্তি অনেকের জীবন থেকে সুস্থতাকে ছেঁটে দিয়েছে বলে মনে করেন শহরের বয়স্ক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কৌশিক মজুমদার। লন্ডনে কৌশিকবাবুর ১০৬ বছরের রোগী রয়েছেন। কিন্তু বাংলায় ১০২ বছরের বেশি বয়সি কাউকে এখনও পাননি। কৌশিকবাবুর মতে, ১৯৭০ পর্যন্ত বাংলা তথা ভারতে দূষণের মাত্রা কম ছিল। অন্নপূর্ণাদেবীরা বেশিরভাগ ‘অর্গানিক’ খাবার খেয়েছেন। তাছাড়া এখন চিকিৎসাবিজ্ঞান অনেক এগিয়ে। টিবি, এডস, ক্যানসারের চিকিৎসা হচ্ছে। মাথায় চোট-আঘাত না লাগলে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবল থাকলে অনেকেই অন্নপূর্ণা হতে পারবেন। শহরের বিশিষ্ট নেফ্রোলজিস্ট ডা. প্রতিম সেনগুপ্তও আশাবাদী। তাঁর দাবি, “পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে মানুষের ১৪০ বছর বাঁচার কথা। কিন্তু আমাদের লাইফস্টাইলের সুবাদে সত্তর-আশিতেই আমাদের ইনিংস শেষ হয়ে যাচ্ছে।”-মন্তব্য প্রতিমবাবুর। তিনি মনে করেন, বয়স্কদের আনন্দে রাখতে পারলে, অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দেখিয়ে নিলে অন্নপূর্ণার মতো শতায়ু হওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে।
The post মানুষের গড় আয়ু ১৪০! ডাক্তারবাবুদের আশ্বাসে সেঞ্চুরির পথে অন্নপূর্ণা appeared first on Sangbad Pratidin.