সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: এভাবেও ফিরে আসা যায়! অদম্য ইচ্ছা, আর হার না মানা মানসিকতা থাকলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়! ‘আমি হার মানব না’, স্রেফ এই প্রত্যয়ই পৌঁছে দিতে সাফল্যের শীর্ষে। একসঙ্গে অনেক কিছু শিখিয়ে গেলেন মণিপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে সাইখোম মীরাবাই চানু। সদ্যই অলিম্পিকে ভারোত্তোলনের ৪৯ কেজি বিভাগে রুপো জিতে ইতিহাস লিখে ফেলেছেন তিনি।
উত্তরপূর্ব ভারতের আর পাঁচটা মেয়ের মতোই কঠিন ছিল মীরাবাইয়ের লড়াই। জীবনধারণের জন্য একটা সময় জঙ্গলে কাঠ কুড়োতে যেতে হত তাঁকেও। কেরিয়ারের মধ্যগগণের এসে ব্যর্থতা মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছিল তাঁকেও। কিন্তু তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। লড়াই করেছেন। যার পুরস্কার মিলল গ্রেটেস্ট শো অন আর্থে।
[আরও পড়ুন: Tokyo Olympic-এর মঞ্চে প্রথম পদক জয় ভারতের, রুপো ঘরে তুললেন মীরাবাই চানু]
মণিপুরের ইম্ফলের নংবক কাকচিং গ্রামে জন্ম চানুর। একটা সময় বাড়ির জ্বালানির জন্য জঙ্গলে কাঠ কুড়োতে যেতে হত চানুকে। ভারী কাঠের বোঝা তাঁর দাদা তুলতে পারতেন না। কিন্তু চানু অনায়াসেই কাঁধে করে তা বাড়ি বয়ে নিয়ে আসতেন। বাবা-মা তখনই বুঝতে পারেন তাঁদের মেয়ের শারীরিক সামর্থ্য আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের থেকে বেশি। তাঁরা সটান চানুকে ভরতি করে দেন মণিপুরের SAI প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সেখান থেকে চানু যান পাটিয়ালা।
[আরও পড়ুন: Tokyo Olympics: জয় দিয়ে সফর শুরু ভারতীয় হকি দলের, টেবিল-টেনিসে ব্যর্থ মনিকা বাত্রারা]
চানুর জীবনে প্রথম বড় সাফল্য আসে ২০১৪-য় গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে। ৪৮ কেজি বিভাগে রুপো জেতেন। এক বুক স্বপ্ন আর আত্মবিশ্বাস নিয়ে গিয়েছিলেন ২০১৬ রিও অলিম্পিকে। কিন্তু রিওতে সেই স্বপ্ন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। রিওর ফাইনালে নিজের ইভেন্ট শেষ পর্যন্ত করতে পারেননি চানু। ক্লিন এবং জার্ক বিভাগে তিন বারই ওজন তুলতে ব্যর্থ হন তিনি। ফলে তাঁর নামের পাশে ছিল না কোনও সংখ্যা। ইভেন্টের শেষে তাঁর নামের পাশে লেখা ছিল ‘DNF’, অর্থাৎ ‘ডিড নট ফিনিশ’। জীবনের প্রথম অলিম্পিকে চানুর পুরস্কার ছিল খালি চোট আর হতাশা। কোমরের সেই চোটে একসময় কেরিয়ারই শেষ হয়ে যেতে বসেছিল। মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েন, যে শেষপর্যন্ত মনোবিদের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। যদিও, ব্যর্থতার সেই ইতিহাস বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। পরের বছরই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতেন তিনি। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি মীরাবাইকে। টোকিও অলিম্পিকে রুপোলি ইতিহাস লিখে ফেললেন তিনি। কর্ণম মালেশ্বরীর পর ফের ভারোত্তোলনে অলিম্পিক (Tokyo Olympics) পদক এল ভারতের ঘরে। অভিনব বিন্দ্রা থেকে সাক্ষী মালিক, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। সকলেই মণিপুরী কন্যাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।