অর্ণব আইচ: অঙ্কুশ-ঐন্দ্রিলার আপ্তসহায়ক মৃত্যুর ঘটনায় রাজস্থানের ভরতপুর থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। ধৃতের নাম আয়ুব খান। ভরতপুরের কামান থানার আংগ্রাওয়ালির বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার সকালে আয়ুবকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই দিনই ভরতপুর আদালতে তোলা হলে ট্রানজিট রিমান্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়।
বছর ছত্রিশের পিন্টু দে ওরফে বাপ্পা পূর্ব কলকাতার নারকেলডাঙা নর্থ রোডের একটি বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে থাকতেন। ২ মার্চ বিকেল পর্যন্ত তাঁর সাড়াশব্দ না পাওয়ায় পরিবারের লোকেরা বাথরুমের দরজা ভাঙেন। সিলিং থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বাপ্পাকে। নারকেলডাঙা থানার পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পুলিশের দাবি, আত্মঘাতী হয়েছেন বাপ্পা। বাপ্পার পিসতুতো দাদা রাজু দাস জানান, তাঁর ভাইয়ের মোবাইলে হোয়াটস অ্যাপে দু’টি নম্বরে চ্যাট দেখেই মৃত্যুরহস্যের মোড় ঘোরে। চ্যাটগুলিতে বাপ্পাকে দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেল করে বলা হয়েছে, ভিডিও আপলোড করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
[আরও পড়ুন: ‘কমিটমেন্ট’ রাখলেন সলমন, ‘রাধে’র পোস্টার শেয়ার করে জানালেন ছবি মুক্তির তারিখ]
কীভাবে কাজ করে এই ধরনের ব্ল্যাকমেলাররা? পুলিশ জানিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপে আসা অজ্ঞাতপরিচয় সুন্দরী মহিলাদের ডিপি দেখে অনেকেই সাড়া দেন। এই ফাঁদে ফেলেই নিজেকে মহিলা বলে দাবি করে বাপ্পার সঙ্গে চ্যাট করে জালিয়াত। মহিলার অশ্লীল ভিডিও পাঠিয়ে বাপ্পাকেও তাঁর অশ্লীল ভিডিও পাঠাতে বলা হয়। সেই ভিডিওকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় ব্ল্যাকমেল ও ভয় দেখানো। ভিডিওটি আপলোড করার ভয় দেখিয়ে অন্তত এক মাস ধরে বাপ্পাকে ব্ল্যাকমেল করা হয়েছে। কখনও দুই, কখনও তিন হাজার টাকা চাওয়া হয়। ক্রমে দুই দফায় তিনি ৫ হাজার টাকা ও এক দফায় দশ হাজার টাকা ই-ওয়ালেটের মাধ্যমে জালিয়াতদের পাঠান বাপ্পা। এমনকী, তিনি অঙ্কুশের (Ankush Hazra) কাছ থেকে টাকা চেয়েও জালিয়াতদের দেন বলে দাবি পরিবারের। সে টাকা পাঠানোর পরও বাপ্পার কাছ থেকে দশ হাজার টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু ওই টাকা দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর ছিল না। তখন জালিয়াত হোয়াটস অ্যাপে লালবাজারের এক পুলিশকর্তার একটি ভুয়া পরিচয়পত্র পাঠায়। এমনকী, ওই পুলিশকর্তার ছবি পাঠিয়ে সে হুমকি দিয়ে জানায়, দু’মিনিটের মধ্যে টাকা না দিলে দু’ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। পরিবারের দাবি, বাপ্পা এই চাপ নিতে পারেননি বলেই আত্মহত্যা করেন।
বাড়ির ভিতর যেমন মা-বাবা খেয়াল রাখেন, গত দশ বছর ধরে তেমনই বাড়ির বাইরে তাঁদের প্রিয় ‘বাপ্পা’দা তাঁদের দেখভাল করতেন। ফেসবুকে একথা লিখেছিলেন অঙ্কুশ। শোনা গিয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের সূত্র ধরেই আয়ুব খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত ছ’মাসে নাকি আরও চারটি এইরকম ঘটনা ঘটেছে। এবার সেই ঘটনাগুলিরও কিনারা হবে বলে আশা পুলিশ কর্তাদের।