সৌরভ দত্ত, ডিন্ডোরি: মে পার হলেই জুন। ফি বছরই বাংলায় পিঁয়াজের বাজার হঠাৎ আগুন। আঁচে কলকাতার কোলে মার্কেট থেকে শুরু করে শহর-গ্রামের খুচরো বিক্রেতার পিঁয়াজের ডালাও তেতে-পুড়ে একশা। কেজি প্রতি ৩০-৪০টাকা, এমনকী তারও বেশি। কিন্তু এ তল্লাটের যাঁরা দিনরাত মাঠে খেটে ফলিয়েছেন সেই পিঁয়াজ, তাঁদের ঘরে তখনও নুন আনতে পান্তা ফুরনোর জোগাড়। ঠিক যেমন এখনও খাটুনির ফসল পিঁয়াজ জলের দরে বেঁচে পেট চালাতে ওরা হিমশিম। চান্দোয়ারের বিশাল পাইকারি বাজারে এখন পিঁয়াজের কুইন্টাল মেরেকেটে ৩০০ টাকা। তো তারই সুবাদে ৩ টাকা কেজি পিঁয়াজ বেচে চাষি কি করে বাঁচবেন! আখ থেকে আঙুর, সেই একই ছবি। ফসলের দাম নেই। পেটে চাষির ভাত নেই। নাসিক থেকে এক ঘণ্টা দেড়েকের পথ ডিন্ডোরি। আর তারই লাগোয়া গ্রামকে গ্রাম জুড়ে নির্বাচনের ব্যাকড্রপে এমনই হাহাকার।
[আরও পড়ুন-মোদির বিরুদ্ধে ভোটে লড়বেন কলকাতা হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কারনান]
বাংলায় খেতে কিষাণ, কলে মজুরদের জোট বাঁধার স্লোগান এখন ফিকে। লাল ঝান্ডার কমরেডরা এখন জোট ধরে রাখতেই হিমশিম। কিন্তু, মারাঠা ভূমের এ তল্লাটে সেই জোটই গড়ে দেখিয়েছেন কিষান গুজর, সঞ্জয় বনশলে, ভিখু গাভিটরা। ফি বছরের ফসলে বঞ্চনার প্রতিবাদ গ্রামকে গ্রাম ছাড়িয়ে শহরে টেনে এনেছেন ওঁরা। ওঁদেরই হাত ধরে নাসিক থেকে মুম্বই চাষির দাবিতে শপথের লাল ঝান্ডায় লং মার্চে লালে লাল হয়েছে রাজপথ। সেই “অধিকার ছিনিয়ে আনার” ডাক দিয়েই এবার মারাঠা ভূমের একরত্তি এই ‘লাল দুর্গে’ ভোটের লড়াইয়ে শামিল ‘কমরেডরা’। মহারাষ্ট্রের ৪৮টি আসনের মধ্যে শুধুমাত্র ডিন্ডোরিতেই লড়ছেন সিপিএমের একমাত্র প্রার্থী জীবা পান্ডু গাভিট। কালওয়ান, সুরগানা, রাখেওয়াড়ার মতো গ্রামে গ্রামে পিঁয়াজ, আঙুর, আখ চাষিদের জেহাদ আরও ‘বুলন্দ’ করে টানা আটবার এ তল্লাট থেকে বিধায়ক হয়েছেন জীবা। এবার সেই লড়াই সংসদে নিয়ে যেতে ময়দানে কমরেড গাভিট। বিমান, সূর্যকান্তরা মানুন বা না-ই মানুন স্রেফ কথার কচকচি উড়িয়ে গ্রাম-গ্রামান্তরের গরিব-গুর্বোদের লড়াইয়ে টেনে আনতে ষোলো আনা ডিন্ডোরির বাম ব্রিগেড। তাই জীবার প্রচারে পোড় খাওয়া চাষি ভিকা ভাগড়ে, সঞ্জয় বোরস্থের পাশাপাশি পা মিলিয়ে শামিল তরুণ পঙ্কজ আসাওলে। এমনকী, কলেজ পড়ুয়া উত্তম গাভিটও।
[আরও পড়ুন-ভোটের আগে গুজরাটে ধাক্কা বিজেপির, আদালতের নির্দেশে পদ খোয়ালেন বিধায়ক]
লাল ঝান্ডার ব্যাপক মানেই গেরুয়া ফিকে আদৌ নয়। আবার এনসিপির প্রতীক ঘড়ির টিকটিকও একেবারে থেমে যায়নি। ময়দানে হাজদর এনসিপির ধনরাজ মাহালে এবং বিজেপির ভারতী পাওয়ার। মুশকিল হল, দু’জনেরই নাম উঠে গিয়েছে আয়ারাম-গয়ারামের দলে। কারণ ভারতীই হোন বা ধনরাজ আজ বিজেপিতে তো কাল এনসিপির ঘরে। ডিন্ডোরিতেও যথারীতি প্রার্থী অনেক। তবে লড়াইয়ে শামিল ধনরাজ, ভারতী এবং জীবাই। কমবেশি ১৭ লাখ ভোটারের এই কেন্দ্রে ৭০ শতাংশই চাষি। পিঁয়াজ, আখ, আঙুর ফলিয়ে পেট চলে ওদের। আবার কেউ কেউ সেই আখ-আঙুরের প্রক্রিয়াকরণ কারখানার কর্মী। আদিবাসী ভোটারও বড় কম নয়। আর তাই আদিবাসীদের জমির অধিকারও এ তল্লাটে বেশ বড় ইস্যু।
[আরও পড়ুন-‘ভোট না দিলে অভিশাপ দেব’, ভোটারদের ভয় দেখাচ্ছেন সাক্ষী মহারাজ]
অভিযোগ, কথা দিলেও কথা রাখেনি সরকার। মুখে বলেছে, বন বিভাগের জমি আদিবাসীদেরই। কিন্তু, পাট্টা মেলেনি আজও। হিমঘরের অভাবে পিঁয়াজই হোক বা আঙুর, তড়িঘড়ি বেচতে বাধ্য হল চাষি। নামমাত্র দাম মিললেও তাঁরা অসহায়। আর সেই ফসলই গুদামে রেখে সময়মতো বের করে বেচে দিয়ে মুনাফা লোটেন ব্যবসায়ীরা। তাই হিমঘর চাই। চাষির ফসলের ন্যায্য দাম চাই আর শুধু বৃষ্টির জলে নির্ভরতা এড়িয়ে জমিতে সেচের জল চাই। তুলনায় উঁচু মহারাষ্ট্রের থেকে নিচু গুজরাতে বৃষ্টির জলের ধারা অবিরাম বয়ে যাওয়া ঠেকাতে মঞ্জিরপাড়ায় নির্মীয়মাণ বাঁধের কাজও শেষ করা চাই। কংগ্রেস-এনসিপি আমলে শুরু হওয়া সেই কাজ যে থমকেই গিয়েছে একদম! চাষির চাওয়া এমন অনেককিছুই। ভোটের আবহে সেই চাওয়ার নিরিখেই এখন পাওয়ার হিসেব মেলানোর পালা।
[আরও পড়ুন-প্রচারে সেনা ‘তাসে’ আপত্তি, রাষ্ট্রপতিকে চিঠি ১৫৬ প্রাক্তন সামরিক কর্তার]
ঋণ মুকুব হয়নি তাই ফসলের দামও ঠিকঠাক মেলেনি। বিজেপি তাই কাঠগড়ায়। দুষছে এনসিপি, বামেরাও। কিন্তু মুশকিল হল, ডিন্ডোরি লোকসভা আসনের আওতাধীন ছ’টি বিধানসভার মধ্যে দু’টি ছাড়া লাল ঝান্ডার দাপট আদৌ তেমন নয়। সবে মিলিয়ে লোকসভা আসনের নিরিখে বাম ভোট মেরেকেটে ২০ শতাংশ। রাজ্যের এক মন্ত্রীকে হারিয়েই জীবা পান্ডু গাভিট বিধানসভায় যাওয়ার টিকিট পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু অন্যত্র বামেদের পালে হাওয়া লাগেনি।
The post পিঁয়াজের জমিতে আগুন, ‘লাল দুর্গ’ আঁকড়েই লোকসভার লড়াই মারাঠাভূমে appeared first on Sangbad Pratidin.