shono
Advertisement
Rafael Nadal

আলবিদা নাদাল, কান্না ছাপিয়ে অমলিন থাকবে লাল সুরকির মাঠে ঝাঁকড়া চুলের যুবকের হাসি

ফেডেরার বিদায় নিয়েছেন, অবসরের গ্রহে গেলেন নাদাল। রইলেন বাকি জোকোভিচ। যুগের সমাপ্তি ডাক পাঠাচ্ছে।
Published By: Arpan DasPosted: 05:32 PM Nov 20, 2024Updated: 05:36 PM Nov 20, 2024

অর্পণ দাস: লম্বা চুল, ঘাড় পর্যন্ত নেমে এসেছে। পরনে লাল শার্ট। পেশিবহুল হাত থেকে চুঁইয়ে পড়ছে আত্মবিশ্বাস। মাথায় ব্যান্ড বাঁধা। প্রথম দৃষ্টিতে নজর টানবে তাঁর উদ্ধত চলন। অন্তত রজার ফেডেরারের স্নিগ্ধ, সুন্দর ব্যক্তিত্বের পাশে একেবারেই বেমানান। যেন টেনিসের 'ব্যাড বয়'। দুজনের খেলাতেও আকাশ-পাতাল তফাৎ। ফেডেরারের ব্যাকহ্যান্ডে চোখে পড়বে আটপৌরে দৃঢ়তা। অন্যদিকে স্পেনের এই যুবক যেন পেশিশক্তির আস্ফালন। ফিটনেসের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত।

Advertisement

তার পর কেটে গিয়েছে দুই যুগ। তিনি বৃদ্ধ হয়েছেন। কাঁধ ছুঁয়ে নেমে আসা সেই চুল ফিকে হয়েছে। ফিটনেসে থাবা বসিয়েছে বয়স। বিদায়বেলায় নিজেও জানিয়ে গেলেন, আরও খেলার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু শরীর সঙ্গ দিল না। প্রিয়, রাফায়েল নাদাল। এটাই তো ক্রীড়াজগতের ভবিতব্য। পেশি শিথিল হবে, নিঁখুত শটের বলও পড়বে লাইনের ঠিক ওধারে। জানিয়ে দেবে, আপনার সীমারেখা কতদূর। তেজ কমার সঙ্গে গ্রাস করবে অফ ফর্মের সন্ধে। সমালোচনা হবে, কেউ কেউ ছুঁড়ে ফেলতে চাইবে বাতিলের খাতায়। তার পর একদিন জানিয়ে দেবেন, আজই শেষ। সেদিন থেকে ফের উড়বে জয়ধ্বজা।

হয়তো এতটা দুর্দিন দেখতে হয়নি নাদালকে। সেটা কিছুটা টেনিসের মতো একক খেলা বলে কিছুটা মুক্তি। আবার সেটাই ফিরে আসে বুমেরাং হয়ে। সাফল্য যেমন একার, ব্যর্থতাও। কামব্যাকের লড়াইটা নিজেকেই করতে হয়। পিচের উলটো দিক থেকে পার্টনার রানের জন্য ডাকবে না কিংবা গোলের জন্য কেউ সহজ পাস বাড়িয়ে দেবে না। তার পরও তো নাদালের ২৩ বছরের কেরিয়ারের পাশে ২২টা গ্র্যান্ড স্ল্যাম। ফোর হ্যান্ডের বিখ্যাত 'ব্যানানা শট'-এ নাস্তানাবুদ করতেন প্রতিপক্ষকে।

গল্পের শুরুটা ধরা যেতে পারে ২০০২ সালে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে জিতেছিলেন পেশাদার কেরিয়ারের প্রথম ম্যাচ। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন উইম্বলডনের সেমিফাইনালে। তার পর আর থামায় কে? ২০০৫-এ শুরু হল লাল সুরকির মাটিতে রাজত্ব। প্রথমবার জিতলেন ফরাসি ওপেন। সেখান থেকে ঝুলিতে ঢুকল আরও ১৩টা ফ্রেঞ্চ ওপেন। কোনও একটি বিশেষ ওপেনে এত সাফল্য আর কোনও টেনিস তারকার নেই। নাদালের নামই হয়ে গেল রোলা গাঁরোর 'রাজা'।

টলমল করে উঠল ফেডেরারের আসন। দুজনে যখনই মুখোমুখি হয়েছেন, তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জয় পেয়েছেন নাদাল। শেষ পর্যন্ত ২৪-১৬ ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেন স্প্যানিশ কিংবদন্তিই। টানা ২০৯ সপ্তাহ রইলেন র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্থানে। সেরা দশের তালিকায় রইলেন ৯০০ সপ্তাহের বেশি সপ্তাহ। ফ্রেঞ্চ ওপেন তো বটেই, অস্ট্রেলীয় ওপেন ও উইম্বলডন জিতলেন দুবার। যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে সাফল্য এসেছে চারবার। এছাড়া অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন ২০০৮ সালে। রিওতেও সোনা জিতেছিলেন ডবলসে।

তার পর থেকে থাবা বসাতে থাকল চোট। ফিরে আসার আপ্রাণ চেষ্টা চলল ঠিকই, কিন্তু সেই বিধ্বংসী রাফাকে খুঁজে পাওয়া গেল না। সেটা আরও বাড়ল কোভিডের সময়ে। ইতিমধ্যে নিজেকে দাপটের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করেছেন জোকোভিচ। আবার ক্রমে অস্তমিত গিয়েছেন রজার ফেডেরার। তিন মহারথীর দ্বৈরথকে টেনিসের সর্বকালের সেরা বিনোদন বললে বোধহয় ভুল বলা হয় না। এর মধ্যেই কিন্তু রোলা গাঁরোয় নাদালের রাজত্ব চলেছে। বুঝিয়ে দিয়েছেন, আর যাই হোক না কেন এখানে তাঁর সঙ্গে কোনও লড়াই চলে না।

সেই যাত্রাও ফুরোল। শেষবেলায় সঙ্গী হল হার। নিজের ডেভিস কাপের প্রথম ম্যাচটি হেরেছিলেন। শেষ ম্যাচের একই পরিণতিতে যেন একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। ডেভিস কাপের ম্যাচের আগে রাফাকে উদ্দেশ্য করে 'ফ্যান' ফেডেরার লিখলেন, "তুমি আমাকে প্রচুর ম্যাচে হারিয়েছ। আমিও তোমায় অত হারাতে পারিনি। যেভাবে তুমি আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলেছ, তার আশেপাশে কেউ ছিল না। বিশেষ করে, ক্লে কোর্টে খেলতে নামলে মনে হত, তোমার ডেরায় ঢুকলাম।"

বিদায়ের ক্ষণে চোখে জল নাদালের। ভিডিওবার্তায় শুভেচ্ছা জানালেন জোকোভিচ, সেরেনা উইলিয়ামস থেকে আন্দ্রে ইনিয়েস্তা। কান্না চেপে নাদাল শুধু বললেন, “আমার পদক, সাফল্য, সেসব তো রইলই। শুধু চাই, লোকে আমাকে মায়োরকার এক ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে আসা ভালো মানুষ হিসেবে মনে রাখুন।” টেনিসের 'শত্রু'রা এখন সবাই বন্ধু। ফেডেরার বিদায় নিয়েছেন, অবসরের গ্রহে গেলেন নাদাল। রইলেন বাকি জোকোভিচ। একটা যুগের পরিসমাপ্তি। প্রিয় নাদাল, রোলা গাঁরোর লাল মাঠে দাঁড়ানো লম্বা চুলের এক যুবকের হাসিটা চিরকাল অমলিন থেকে যাবে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • মাত্র ১৬ বছর বয়সে জিতেছিলেন পেশাদার কেরিয়ারের প্রথম ম্যাচ। ১৮ বছর বয়সে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন উইম্বলডনের সেমিফাইনালে।
  • টানা ২০৯ সপ্তাহ রইলেন র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর স্থানে। সেরা দশের তালিকায় রইলেন ৯০০ সপ্তাহের বেশি সপ্তাহ।
  • বিদায়ের ক্ষণে চোখে জল নাদালের। ভিডিওবার্তায় শুভেচ্ছা জানালেন জোকোভিচ, সেরেনা উইলিয়ামস থেকে আন্দ্রে ইনিয়েস্তা।
Advertisement