গৌতম ব্রহ্ম: কোভিডের পর মশাবাহিত রোগ।
প্রতিরোধবর্মের আর এক দিশায় জমাট অন্ধকারে যেন ফের এক ঝলক আলোর রোশনাই। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া, জিকা, ইয়েলো ফিভার, জাপানি এনসেফেলাইটিস, চিকুনগুনিয়া। মশাবাহিত এমন হরেক রোগকে এক দাওয়াইয়ে কবজা করার আশা জাগিয়ে বাজারে আসতে চলেছে ‘মসকুইটো ভ্যাকসিন’ বা মশা-টিকা। তেমনই ইঙ্গিত দিলেন একদল বিজ্ঞানী। যার সূত্রে এবারও সামনে এল সেই অক্সফোর্ডের নাম। ঠিকঠাক বলতে হলে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলজি বিভাগ।
জানা গিয়েছে, অ্যানোফিলিস, কিউলেক্স, এডিসের লালারসে মজুত চারটি ‘কমন’ পেপটাইড দিয়ে এই ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে। যে কারণে একে পেপটাইড ভ্যাকসিনও বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ, তিন প্রজাতির মশার ক্ষেত্রেই এই টিকা কার্যকর হবে বলে গবেষকদের দাবি। তাঁরা জানিয়েছেন, এটি মূলত টি সেল ভ্যাকসিন। এই টিকা রক্তে থাকা টি লিম্ফোসাইটকে উদ্দীপ্ত করে কোষীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করে তুলবে। আপাতত অ্যানিম্যাল ট্রায়াল সফল হওয়ার পর এর হিউম্যান ট্রায়াল চলছে। প্রথম পর্বে ৪৯ জনের উপর প্রয়োগ হয়েছে। ট্রায়াল সফল হয়েছে বলে দাবি করে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ল্যানসেট পত্রিকায়। চিকিৎসকদের দাবি, দ্বিতীয় পর্বের ট্রায়াল সফল হলে এই টিকাই হয়ে উঠবে গেম চেঞ্জার। এর দৌলতে ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকার মতো রোগ হয়তো চিরতরে মুছে যাবে বিশ্বের মানচিত্র থেকে।
[আরও পড়ুন: ‘করোনা রুখতে উপযোগী নয় ভালভ-যুক্ত N-95 মাস্ক’, সতর্ক করল স্বাস্থ্যমন্ত্রক]
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, সংক্রমক ব্যাধিগুলির মধ্যে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ ১৭ শতাংশ। প্রতি বছর প্রায় সাত লক্ষ মানুষের মশাবাহিত রোগের কামড়ে মৃত্যু হয়। এই তালিকায় যেমন ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়া রয়েছে, তেমনই রয়েছে চিকুনগুনিয়া, জিকা, ইয়েলো ফিভার। শুধু বিশ্বে প্রতিবছর ১৯ কোটি ৮০ লাখ মানুষের শরীরে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ হয়। প্রতিবছর প্রায় ৬ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটায়, যাদের অধিকাংশই পাঁচ বছরের কমবয়সি। মশারির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং কিছু ওষুধ সেবনের কারণে ম্যালেরিয়া রোগে মৃত্যুর হার সম্প্রতি কমে এলেও রোগটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর একটি টিকার প্রয়োজনীয়তা রয়ে গিয়েছিল। একটি টিকা বাজারে আসেও। কিন্তু তার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ ছিল প্রথম থেকেই। এবারের টিকায় সাফল্যের আলো অনেক বেশি বলেই মনে করছেন শহরের চিকিৎসকরা। তাঁদের মত, অ্যানোফিলিস মশার লালারসে থাকা প্রোটিন জৈব অণু থেকে ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে।
এর দ্বারা অ্যানোফিলিস যে যে রোগ বহন করে সেগুলির হাত থেকে মুক্তি তো হবেই, কিউলেক্স, এডিস বাহিত রোগও জব্দ হবে। কারণ, এই তিন প্রজাতির মশার লালরসের প্রকৃতি এক। ফলে আশা জাগছে। ভাইরোলজিস্ট ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানিয়েছেন, মশার লালারসের মধ্যে যদি কোনও জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, পরজীবী) থেকেও থাকে তবে তা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। ফলে এক ভ্যাকসিনে ঠেকানো যাবে একাধিক রোগ। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. অরিন্দম বিশ্বাস অবশ্য সাবধানি। তিনি জানিয়েছেন, আরও গবেষণা দরকার। একসঙ্গে এতগুলো রোগ এক টিকায় কুপোকাত হবে, এ তো পুরো রূপকথা মনে হচ্ছে।
[আরও পড়ুন: শুধু ‘কোভ্যাক্সিন’ নয়, করোনার ‘প্রতিষেধক’ তৈরির দৌড়ে এগিয়ে দেশের সাতটি সংস্থা]
জুনের শেষে এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয় ‘ল্যানসেট’ পত্রিকায়। অতি সম্প্রতি নেচারেও এই গবেষণাপত্র নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
The post ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গু রোধে এবার ‘মসকুইটো ভ্যাকসিন’ আনছে অক্সফোর্ড appeared first on Sangbad Pratidin.