সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সুযোগ পেয়েছিল পাকিস্তান। চাইলে সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারত। কুলভূষণ যাদবের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সাক্ষাতের অনুমতি দিয়ে যে সৌজন্য তারা দেখিয়েছিল, সেটাই ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের নতুন ভিত গড়ে দিতে পারত। কিন্তু, পাকিস্তান সেই সৌজন্যের মর্যাদা রাখতে পারল না। উল্টে গোটা বিষয়টিকে তারা ব্যবহার করতে চাইল ভারতের বিরুদ্ধে ‘প্রোপাগান্ডা’ হিসাবে। বুঝিয়ে দিল, যেন তেন প্রকারেণ ভারতকে ভিলেন প্রমাণ করাটাই ওদের একমাত্র উদ্দেশ্য। বৃহস্পতিবার এই ভাষাতেই সংসদে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের কড়া সমালোচনা করলেন কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
[পাকিস্তানকে চার টুকরো করলেই স্থায়ী সমাধান, মত বিজেপি নেতার]
এদিন সংসদে কুলভূষণ প্রসঙ্গে বিবৃতি দিতে গিয়ে সুষমা বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে দ্বিচারিতা করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তান সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছিল মিডিয়াকে যেন যাদবের মা ও স্ত্রীর কাছে ঘেঁষতে না দেওয়া হয়। কিন্তু সেই আবেদন মানেনি পাকিস্তান। সংবাদ মাধ্যম প্রথম থেকেই হাজির ছিল সেখানে। প্রশ্নোত্তরের নামে তারা রীতিমতো হেনস্তা করে কুলভূষণের মা ও স্ত্রীকে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে বিব্রত করা হয় তাঁদের। মায়ের সামনেই ছেলে কূলভূষণকে খুনি বলেও আখ্যা দেয় পাকিস্তানের মিডিয়া।’ যা রীতিমতো ন্যক্কারজনক বলে মন্তব্য করেন সুষমা। কুলভূষণের স্ত্রী চেতনকুলের জুতোতে ধাতব বস্তু আছে জানিয়ে ওই জুতো রেখে দেয় পাকিস্তান। ভারতের নিন্দাও করে। সে প্রসঙ্গে সুষমা বলেন, যে জুতো পরে কুলভূষণের স্ত্রী চেতন কুল দু’টি আন্তর্জাতিক বিমানে উঠলেন, যার মধ্যে একটি এমিরেটস বিমানও ছিল। অজস্র চেকিংয়ের মধ্যে দিয়ে গেলেন, সেখানে কোনও চিপ পাওয়া গেল না। আর পাকিস্তান একাই চিপ খুঁজে পেল? নিরাপত্তার নামে কুলভূষণের স্ত্রী এবং মায়ের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা এককথায় শুধু ওঁদের নয় ভারতীয় নারীদের অপমান। বলেন বিদেশমন্ত্রী।
[কুলভূষণের পরিবারকে পাকিস্তানে অপমান, বিদেশমন্ত্রককে দুষছে কংগ্রেস]
উত্তর ভারত-সহ দেশের অধিকাংশ প্রদেশে সিঁদুরের মতোই মঙ্গলসূত্রও বিবাহিত নারীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কালো পুঁথি আর তারে গাঁথা ওই হার সাধারণভাবে মহিলারা গলা থেকে খোলেন না। অথচ পাকিস্তান নিরাপত্তার অজুহাতে যাদবের স্ত্রী এবং মায়ের চুড়ি, টিপ, মঙ্গলসূত্র খুলতে বাধ্য করেন। এমনকী সুরক্ষার নামে ওঁদের জামাকাপড় খোলানো হয়। কুলভূষণের মা যিনি শুধু শাড়ি ছাড়া আর কিছু পরেন না, তাঁকেও সালোয়ার কামিজ পড়ানো হয়। সুষমা বলেন, “রক্ষীদের তিনি জানিয়েছিলেন উনি কখনও মঙ্গলসূত্র খোলেননি, এবং এ কথা বলতে বলতে গলা ভারি হয়ে আসে তাঁর। কিন্তু, পাল্টা তিরস্কার করা হয় তাঁকে। এই তথ্য যাতে ভুল না হয়, তার জন্য আজ সকালেই আমি কুলভূষণের মায়ের সঙ্গে কথা বলি। উনি জানান যে, চেয়ারে বসতে না বসতেই তাঁর ছেলে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন যে বাবা ঠিক আছে কি না। কারণ মঙ্গলসূত্র, টিপ ছাড়া তাঁকে বিধবার মতো দেখাচ্ছিল।”
[কেন ফেরত দেওয়া হয়নি কুলভূষণের স্ত্রীর জুতো, জানাল পাকিস্তান]
সোমবার কুলভূষণের স্ত্রী ও মা পাকিস্তানে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। এই প্রসঙ্গেই এদিন সুষমা বলেন, কুলভূষণের পরিবারের সঙ্গে অসদাচরণ করেছে পাকিস্তান। পাক প্রশাসন ভারতীয় নারীদের অপমান করেছে বলেও ধিক্কার জানান বিদেশমন্ত্রী৷ সুষমা বলেন যে, ভারতীয় হাই কমিশনের প্রতিনিধিকে না জানিয়েই ওঁর মা ও স্ত্রীকে পিছনের দরজা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কুলভূষণের মা নিজের মাতৃভাষা মারাঠিতে কথা বলতে চেয়েছিলেন ছেলের সঙ্গে। কিন্তু নিরাপত্তার ইস্যুতে তাঁদের হিন্দিতে কথা বলতে বলা হয়। তারপরও কথার মাঝে বারবার বাধা দেওয়া হয় তাঁদের। কথা না থামালে ইন্টারকম বন্ধও করে দেয় উপস্থিত নিরাপত্তাকর্মীরা। উপস্থিত থাকতে দেওয়া হয়নি ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীদেরও।
এদিন বিদেশমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন করে সংসদে উপস্থিত সব দল। কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন পাকিস্তানে দ্বিচারিতা ও অভব্যতার প্রমাণ আরও একবার মিলল। এর আগে, বুধবার লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস, শিবসেনা, এআইএডিএমকে সহ বিভিন্ন দলের সাংসদরা পাকিস্তানে কুলভূষণের মা ও স্ত্রীকে হেনস্তার প্রতিবাদে সরব হন। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় পাকিস্তানের আচরণকে দ্বিচারিতা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে সুষমার বিবৃতি দাবি করেন। সেই বিবৃতিই এদিন সংসদে পেশ করেন সুষমা।
দেখুন ভিডিও:
The post মঙ্গলসূত্র খুলে ভারতীয় নারীকে অপমান করেছে পাকিস্তান, তোপ সুষমার appeared first on Sangbad Pratidin.