আকাশ মিশ্র: সদ্য মুক্তি পেয়েছে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ‘অভিযান’। কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের (Soumitra Chatterjee) জীবন উঠে এসেছে এই ছবিতে। ইতিমধ্যে ফিল্ম সমালোচক থেকে শুরু করে দর্শকদের মন জয় করেছে পরমের এই ছবি। ঠিক এই সময়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় পরমের ছবি ঘিরে শুরু হল বিতর্ক। বিতর্কের সূত্রপাত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের এক আত্মীয়া শ্রমণা ঘোষের একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে। শ্রমণা ঘোষের মতে, পরমব্রতর (Parambrata Chatterjee) এই ছবিতে অনেক দৃশ্য ও তথ্য দেখানো হয়েছে যা ভ্রান্ত! শ্রমণা তাঁর পোস্টে স্পষ্টই লেখেন, যেভাবে ছবিতে দেখানো হয়েছে, যে নাতি রণদীপের দুর্ঘটনার পর চিকিৎসার অর্থ জোগার করার জন্য সৌমিত্রবাবুকে প্রচুর ছবি করতে হয়েছে, তা একেবারেই ঠিক নয়। শ্রমণার দাবি, এতে সৌমিত্রবাবুর ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।
শ্রমণার এই পোস্টকে সমর্থন করেছেন খোদ সৌমিত্রকন্যা পৌলমী বসু। তাঁর কথায়, এটা একেবারেই আমার মতামত, কাউকে কোনও দোষ দিচ্ছি না। তবে শ্রমণা যা লিখেছেন, তা আমি সম্পুর্ণ সমর্থন করি। ধন্যবাদ তনু, এটা কারও একটা বলার দরকার ছিল।
এই পোস্ট সমর্থন করে পৌলমী আরও লেখেন, ”আমি একেবারেই ঠিক জানি না কেন বাবা ভুল দৃশ্যে অভিনয় করতে সম্মত হয়েছিলেন। এখন আমার আর কিছু করার নেই। কারণ, বাপি নিজে ওই দৃশ্যগুলো করেছেন। বাস্তব ও কল্পনা মিলে যে ক্ষতি হতে পারে, তা বাপি কতটা বুঝতে পেরেছিল তা সন্দেহ রয়েছে….।” পৌলমীর এই লম্বা পোস্টের মধ্যে দিয়ে ‘অভিযান’ ছবিতে তাঁর ছেলে রণদীপের দুর্ঘটনার পরে দেখানো দৃশ্যগুলো নিয়েও আপত্তি তোলেন। তাঁর কথায়, ‘রণদীপ হাসপাতালে থাকার সময়টা যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা আমাকে কষ্ট দিয়েছে। আমি হতাশ হয়েছি।’
বাঙালির আইকন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনচিত্র নিয়ে যে বিতর্ক উঠবে তা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন পরমব্রত। ছবি প্রচারের সময় নিজেই সেই ভয়ের কথা জানিয়েছিলেন নানা জায়গায়। তবে এভাবে যে বিতর্কের সূত্রপাত হবে, তা হয়তো আঁচ করতে পারেননি তিনি। তাই সৌমিত্রকন্যা পৌলমী বসুর সোশ্যাল মিডিয়ায় এরকম প্রতিক্রিয়া দেখে হতবাক পরম!
[আরও পড়ুন: কেন তাঁর লেখায় ঘনঘন W-র ব্যবহার? অবশেষে ‘ব্যাখ্যা’ দিলেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়]
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের তরফ থেকে পরমব্রতকে যোগাযোগ করা হলে, তিনি বলেন, ”আমার একটা কথাই বলার আছে, আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে ছবি তৈরি করেছি। যে সময়টায় আমি ছবিটা তৈরি করছিলাম, তখন উনি জীবিত ছিলেন। তিনি চিত্রনাট্যটি তিনবার পড়েছেন এবং ছবিটিতে নিজে অভিনয় করেছেন প্রত্যেকটা দৃশ্যে। এখন ওই দৃশ্যগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠলে, প্রশ্নগুলো কিন্তু আমাকে করা হচ্ছে না। করা হচ্ছে ওনাকেই। কারণ, তিনিই এই চিত্রনাট্যে অনুমোদন দিয়েছিলেন। এখন যেটা হচ্ছে, সেটা মনে হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে অসম্মান করা হচ্ছে।”
পরমব্রত আরও বলেন, ”পৌলমীদিকে আমি অত্যন্ত ভালবাসি। আমার সঙ্গে দীর্ঘদিনের একটা সম্পর্ক। পুরো বিষয়টা নিয়ে আমার একটু অবাকই লাগছে। পৌলমীদির যদি মনে হয়, তাঁর সঙ্গে বাবার কোনও ঘটনা অন্যরকমভাবে দেখানো হয়েছে, তাহলে তা একেবারেই তাঁর ব্যক্তিগত মতামত। সেটা নিয়ে পৌলমীদি বই লিখতে পারেন, ছবি বানাতে পারেন। যাঁকে নিয়ে ছবি তাঁরই তো অনুমোদন নেব, তাঁর গোটা পরিবারের থেকে তো অনুমোদন নেব না! তাও আবার সৌমিত্রজেঠু বেঁচে থাকাকালীন সময়ে। উনি যদি না থাকতেন, তাহলে অন্য ব্যাপার ছিল। আমি সৌমিত্রজেঠুর অনুমোদন নিয়েছি, তিনি তিনবার চিত্রনাট্য পড়েছেন, তিনিই দৃশ্যগুলোতে অভিনয় করেছেন। কোনটা সত্যি ও কোনটা মিথ্যে সেটা যদি জানতে হয়, তাহলে সৌমিত্রজেঠুর কাছ থেকেই জানব। অন্য কারওর কাছ থেকে তো জানতে চাইব না।”
পরমের কথায়, ”সৌমিত্রজেঠুর কাছ থেকে যেহেতু অনুমোদন পেয়েছি, সেহেতু আমি ধরেই নিয়েছি তথ্যগুলো ঠিক। পৌলমীদির অনেক কিছুই মনে হতে পারে। এ বিষয়ে একটা পয়েন্টের পর আমার আর কিছু করার নেই। কারণ, যাঁকে নিয়ে ছবি, তাঁর কাছ থেকে অনুমতি ও অনুমোদন দুটোই পেয়েছিলাম। আপত্তি তুললে তো ছবি করার সময় তিনিই তা করতেন।”
এই পোস্ট নিয়ে কী পৌলমীর সঙ্গে কথা হয়েছে? উত্তরে পরমব্রত জানালেন, ”না এই নিয়ে কোনও কথা হয়নি। আসলে ছবিটা দর্শক পছন্দ করেছে। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই ছবিটা নিয়ে প্রশংসা করেছেন। ছবিটা মানুষ দেখছে বলে হয়তো তাঁর মনে হয়েছে, এরকম একটা ছবি বের হল কেন? এই ছবিটার সঙ্গে যে ওরা একমত হচ্ছেন না, সেটা একেবারে ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাঁদের পারিবারিক ব্যাপারে আমি ঢুকতে চাই না। আমার একটা কথাই বলার আছে, যাকে নিয়ে ছবি তাঁর অনুমোদন ও অনুমতি ছিল আমার কাছে!”
[আরও পড়ুন: ছবিতে উঠে এল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অজানা গল্প, কেমন হল পরমব্রতর ‘অভিযান’? ]