শিলাজিৎ সরকার: কলকাতা থেকে প্যারিসের দূরত্ব প্রায় আট হাজার কিলোমিটার। বিমানে সময় লাগে ১২ ঘণ্টারও বেশি। অবশ্য এই দূরত্ব পার হতে দমদমের অঙ্কিতা ভকত তৈরি হয়েছেন একটা-দু’টো নয়, ১৬ বছর ধরে!
এমনিতে প্যারিসের সঙ্গে রিকার্ভ তিরন্দাজ অঙ্কিতার সম্পর্ক মধুর, সুখস্মৃতিতে ভরপুর। গত তিন বছরে তিনবার ফ্রান্সের রাজধানীতে এসেছেন এই বঙ্গ-কন্যা। আর কোনওবারই তাঁকে খালি হাতে ফেরায়নি প্যারিস। প্রতিবারই অন্তত একটা পদক উঠেছে বছর ছাব্বিশের তরুণী। এবার অলিম্পিকেও প্যারিসের সঙ্গে তাঁর সেই রসায়ন অক্ষত থাকবে বলেই বিশ্বাস অঙ্কিতার। গেমস ভিলেজ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে সেকথাই শোনাচ্ছিলেন তিনি। “আমি গত তিন বছরই প্যারিস এসেছি। তিরন্দাজি বিশ্বকাপের জন্য। তিনবারই পদক জিতেছি। ২০২১ সালে সোনা। পরের বছর রুপো। গতবছর ব্রোঞ্জ। ফলে এবারও প্যারিস থেকে পদক জিতেই ফিরব বলে আমার বিশ্বাস।” এখনও পর্যন্ত অলিম্পিক তিরন্দাজিতে পদক পায়নি ভারত। দীপিকা কুমারী এবং ভজন কৌরের সঙ্গে অঙ্কিতাও নামবেন সেই অধরা মাধুরী পাওয়ার লক্ষ্যে।
[আরও পড়ুন: TRP-র মশলা দিতে রাজি নন, বিরাটের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে গোপনীয়তা রাখলেন গম্ভীর]
অবশ্য এবার লড়াইটা বিশ্বকাপ নয়, অলিম্পিক। বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। তবে তিরন্দাজ অঙ্কিতা অলিম্পিক (Paris Olympics 2024) বলে বাড়তি চাপ নিতে নারাজ। বলছিলেন, “আমি জানি অলিম্পিকের গুরুত্ব অনেক। তবে আমি সেসব নিয়ে ভাবছি না। বরং নিজের সেরাটা দিয়ে পদক জেতাই আমার লক্ষ্য। আসলে আমার কাছে এবার প্যারিসে আসাটা আগের তিনবারের মতোই। অলিম্পিক নিয়ে বেশি ভেবে আমি নিজের চাপ বাড়াতে চাইছি না।” কেন এমন ভাবনা? অঙ্কিতার জবাব, “অলিম্পিক যেখানে হবে, সেই কেন্দ্রেই আগে বিশ্বকাপে খেলেছি। ফলে পরিবেশের সঙ্গে আমি পরিচিত। পাশাপাশি অলিম্পিকে যাদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে, অন্যান্য প্রতিযোগিতায় আমরা তাদের সঙ্গেই লড়াই করি পদকের জন্য। ফলে আমার কাছে প্রতিযোগিতার নাম ছাড়া কিছুই নতুন নয়।”
একদমই কোনও পার্থক্য নেই আগের প্যারিসের সঙ্গে বর্তমান প্যারিসের? অঙ্কিতার বিশ্লেষণ, “এবার এখানে আসার পর চারদিকে অলিম্পিক নিয়ে নানা পোস্টার-হোর্ডিং দেখছি। সবকিছুতেই অলিম্পিকের ছোঁয়া। এটাই তফাত।”
তবে চেনা মঞ্চে চেনা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই হলেও হালকাভাবে নিচ্ছেন না অঙ্কিতা। বলছিলেন, “আমি দশ বছর বয়সে তিরন্দাজি শুরুর সময় থেকেই অলিম্পিক পদকের স্বপ্ন দেখেছি। কারণ এটাই আমাদের খেলায় সর্বোচ্চ সম্মান। ১৬ বছর পর আমি সেই সম্মান পাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। নিজের সর্বোচ্চ সামর্থ দিয়ে আমি লড়াই করব। আমি অলিম্পিকে সুযোগ পাওয়ায় আমার বাবা-মা খুব খুশি হয়েছে। পদক জিতে ওদের খুশি আরও বাড়ানোই আমার লক্ষ্য।” পয়া শহরে সেই লক্ষ্য পূরণ হবে, বিশ্বাস অঙ্কিতার।