বছর দুয়েক আগেও বাঙালির কাছে ঘোড়ায় চড়া মানে ছিল রূপকথার গল্প আর কেদারনাথ যাত্রা। আর খেলার সঙ্গে ঘোড়ার যোগ মানেই ছিল ময়দানের মাউন্টেড পুলিশ আর রেসের মাঠে ঘোড়ার দৌড়। কিন্তু ঘোড়ায় চড়ে যে দেশের জন্য পদকও জেতা যায়, পৌঁছে যাওয়া যায় অলিম্পিকের অলিন্দে, তা বাঙালিকে শিখিয়েছেন বাংলারই এক তরুণ- অনুশ আগরওয়াল (Anush Agarwal)। বালিগঞ্জের এই যুবকই এবার ইকুয়েস্ট্রিয়ানে ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি। ২৭ জুলাই থেকে সেই খেলার ব্যক্তিগত ড্রেসেজ ইভেন্টে নামবেন অনুশ। তার আগে প্রথমবার অলিম্পিকে নামার আগের অনুভূতি তিনি ভাগ করলেন ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর সঙ্গে। শুনলেন শিলাজিৎ সরকার।
প্রশ্ন : আর তো মাত্র একটা দিন। তারপর নেমে পড়বেন অলিম্পিকে। যেখানে অংশ নেওয়ার স্বপ্নের কথা বহুবার শুনিয়েছেন আপনি। স্বপ্ন পূরণের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে কী অনুভব করছেন?
অনুশ : এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি। একটা নতুন অনুভূতি টের পাচ্ছি। নিজের প্রথম অলিম্পিক। গেমস ভিলেজে পৌঁছে অন্যরকম লাগছিল। এবার রাইড করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি। ছোটবেলা থেকে এই একটা স্বপ্নই তো দেখে এসেছি! এবার সেই স্বপ্ন পূরণের খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছি আমি। আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। কিন্তু প্রথমবার অলিম্পিকে নামার জন্য সেই সামান্য অপেক্ষাও করতে ইচ্ছে করছে না।
প্রশ্ন : ফ্রান্সের মাটিতে তো আগেও রাইড করেছেন আপনি। কিন্তু এবার অলিম্পিক যেখানে হবে, সেখানে কি আগে কখনও পারফর্ম করেছেন?
অনুশ : প্যারিস অলিম্পিকে (Paris Olympics 2024) এবার ইকুয়েস্ট্রিয়ান যেখানে হবে, সেই ভার্সাই প্রাসাদে আমি আগেও গিয়েছি। জায়গাটা খুবই সুন্দর। তবে আগে এখানে কখনও রাইড করিনি। এবারই প্রথমবার করব। অবশ্য ফ্রান্সে আগেও রাইড করেছি আমি। সেই অভিজ্ঞতা এবার অলিম্পিকে আমাকে সাহায্য করবে।
[আরও পড়ুন: কলকাতা লিগের দ্বিতীয় পর্বের সূচি প্রকাশ, ঘরের মাঠে ফিরছে মোহনবাগান]
প্রশ্ন : আপনি তো এখন পাকাপাকি জার্মানির বাসিন্দাই হয়ে গিয়েছেন। ইউরোর ম্যাচও দেখতে গিয়েছিলেন।
অনুশ : সাত বছরেরও বেশি হয়ে গেল জার্মানিতে। শুরুর দিকে কিছুদিন একটা অস্বস্তি হয়েছিল। নতুন জায়গা, নতুন ভাষা, অচেনা লোকজন। প্রথমবার পরিবার থেকে দূরে ছিলাম। কিন্তু এখন আর মনে হয় না যে আমি বাড়ি থেকে দূরে আছি। জার্মানিই আমার নতুন ঘর হয়ে গিয়েছে। প্রচুর বন্ধুও রয়েছে এখন এদেশে। আর জার্মানির সঙ্গে প্যারিসের আবহাওয়ার মিল রয়েছে। সেটা আমাকে সাহায্য করবে।
প্রশ্ন : এশিয়ান গেমসে ড্রেসেজের টিম ইভেন্টে সোনা, ব্যক্তিগত বিভাগে ব্রোঞ্জ। এই সাফল্য অলিম্পিকের আসরে কতটা সাহায্য করবে আপনাকে?
অনুশ : এশিয়ান গেমস থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। বিশেষত নিজের কাছে নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছি যে আমি শীর্ষে ওঠার জন্য যোগ্য। চাপের মধ্যে কীভাবে রাইড করতে হয়, সেটা হাংঝৌ আমাকে দারুণভাবে শিখিয়েছে। এশিয়ান গেমসের পর চাপের মুখে নিজেকে এবং নিজের ঘোড়াকে আরও ভালোভাবে সামলাতে পারছি।
প্রশ্ন : এর আগে এশিয়ান গেমসে আপনার সঙ্গী হয়েছিল এট্রো। পরে আপনি বলেছিলেন, মণি এবং স্যর ক্যারামেলো ওল্ডকেও তৈরি রাখছেন বিকল্প হিসাবে। শেষ পর্যন্ত অলিম্পিকে আপনার সঙ্গী হবে কোন ঘোড়া?
অনুশ : এশিয়ান গেমসে এট্রো আমাকে পদক জিততে সাহায্য করেছিল। তবে অলিম্পিকে ও নেই। তার পরিবর্তে আমার সঙ্গী হবে স্যর ক্যারামেলো ওল্ড। আসলে ওকে নিয়েই আমি অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন করেছি। তাই প্যারিসেও ক্যারামেলোকে নিয়ে নামব ঠিক করেছি।