ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: করোনার (Corona Virus) উপসর্গ স্পষ্ট। কিন্তু হাতে রিপোর্ট নেই। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ রোগীকেই চরম হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছিল। একের পর এক হাসপাতাল ঘুরেও মিলছিল না চিকিৎসা, বেড। ‘রেফার’ করেই দায় সারছিল একাধিক হাসপাতাল। এবার এই রেফার রোগ ঠেকাতে এগিয়ে এল স্বাস্থ্য দপ্তর। লিখিত নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দিল, সামান্যতম করোনা (COVID-19 symptoms) উপসর্গ থাকলেও রোগীকে ভরতি নিয়ে নিতে হবে। রেফার করা যাবে না। গুরুতর অসুস্থ হলে তো নয়ই।
রাজ্যে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। শেষ তিনদিন গড়ে ১৭ হাজার করে মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এ রাজ্যে। সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দৈনিক করোনা টেস্ট। তবে তা নিয়েও দেখা দিয়েছিল সমস্যা। এই মুহূর্তে রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলির উপর আরটি-পিসিআর পরীক্ষার জন্য চাপ মারাত্মক। এদিকে এই টেস্টের রিপোর্ট পেতে ৪৮ ঘণ্টা, কখনও ৭২ ঘণ্টা সময় লেগে যাচ্ছে। অনেকক্ষেত্রেই রোগী টেস্ট করার পর বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। রিপোর্ট আসার আগে ওই রোগীর থেকে অগুনতি লোক আক্রান্ত হচ্ছেন। কখনও আবার রিপোর্ট আসার আগেই রোগী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রক্তে দেখা দিচ্ছে অক্সিজেনের ঘাটতি। কিন্তু রিপোর্ট না থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে প্রবল সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল রোগীকে। রেফার করেই দায় সারছিল হাসপাতালগুলি। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনা স্বাস্থ্য দপ্তরের নজরে আসে। তার পরই নির্দেশিকা জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
[আরও পড়ুন : খাস কলকাতায় আত্মঘাতী করোনা রোগী, বাড়িতে মিলল ঝুলন্ত দেহ]
নয়া নির্দেশ অনুযায়ী, কোনও রোগী করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে এলে দ্রুত তাঁকে হাসপাতালের সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস বা সারি ওয়ার্ডে ভরতি করে নিতে হবে। এবং জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা করানোর ক্ষেত্রে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরুর নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। করোনা নির্ণয়ের র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের রিপোর্ট আসতে সময় লাগে খুব বেশি হলে আড়াই ঘণ্টা। আরটি-পিসিআর-এর ক্ষেত্রে আজকাল ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে উপসর্গ থাকলেও আরটি-পিসিআর রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত রোগীর চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয় না। নয়া নির্দেশ অনুযায়ী র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করিয়েই, দ্রুত চিকিৎসা শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর।
র্যাপিড অ্যান্টিজেনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরেও যদি চিকিৎসকের কোনও সন্দেহ থাকে তবে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা যেতে পারে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য আধিকারিক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, একজন করোনা রোগী আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করিয়ে বাড়ি ফিরে যান। আরও পাঁচজনের সঙ্গে মেশেন। তখন তাঁর সংস্পর্শে থাকা লোকজন তাঁর থেকে সংক্রমিত হতে পারেন। এদিকে যেহেতু হাতে কোনও রিপোর্ট নেই তাই তিনি চিকিৎসাও শুরু করাতে পারেন না। টেস্ট করানো ও রিপোর্ট আসার মধ্যবর্তী সময়ে রোগী অসুস্থ হয়ে পড়লেই সমস্যা। এক্ষেত্রে অ্যান্টিজেন টেস্টই হয়ে উঠতে পারে মুশকিল আসান।
[আরও পড়ুন : করোনায় মৃতদেহ দাহর জন্য বাড়ছে চুল্লি, বাড়িতেই ডেথ সার্টিফিকেট পৌঁছবে কলকাতা পুরসভা]
করোনা বাড়বাড়ন্তের শুরু থেকেই রেফার রোগ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কড়া ভাষায় জানিয়ে দিয়েছিলেন, জেলা থেকে শহরে অকারণ রোগী ‘রেফার’ করা বা পাঠানো চলবে না। যদি একান্তই পাঠাতে হয়, তার উপযুক্ত কারণ লিখিতভাবে জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে। এবার সেই মৌখিক আইনই লিখিত নির্দেশ আকারে এল। করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের নয়া নিয়ম অনুযায়ী, হাসপাতালে যাওয়ার পর যদি কোনও করোনা রোগীকে সেই হাসপাতাল ভরতি নিতে না পারে, তাহলে রোগীর পরিজনদের আর চিন্তিত হওয়ার দরকার নেই। অন্য হাসপাতালে রেফার করলে শয্যার ব্যবস্থা করে দিতে হবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকেই। অর্থাৎ করোনা রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘোরার দিন শেষ।
নানা রোগ নিয়ে অনেক উপসর্গহীন রোগী ফি দিন হাসপাতালগুলোয় ভিড় করছেন। সেই সময় তাঁদের করোনা টেস্ট করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে অনেক রোগীরই রিপোর্ট পজিটিভ আসছে। তখন নন-কোভিড হাসপাতাল থেকে রোগীদের বলা হচ্ছে কোভিড হাসপাতালে যেতে। কিন্তু অনেক সময়ই কোভিড হাসপাতালগুলিতে গিয়ে বেড পাচ্ছে না রোগীর পরিবার। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুরেও বেড মিলছে না। নয়া নির্দেশের পর এহেন সমস্যা মিটবে বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।