অভিরূপ দাস: অনুরোধ-উপরোধে কাজ হয়নি। দূষণের জুজু তাড়াতে এবার ভূতের শরণে কলকাতা। বেয়াদপ প্রতিবেশীদের বোধবুদ্ধির উপর ভরসা না রেখে অভিনব পন্থা নিল দক্ষিণ শহরতলির পাটুলি। পাড়া নোংরা করার অশুভ মানসিকতাকে বধ করতে আনা হল মেছোপেত্নি, চোরাচুন্নিদের।
পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন চলছে দেশজুড়ে। নানা কায়দায় এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার বার্তা দিচ্ছেন পরিবেশবিদরা। পাটুলির ‘পরিবেশ বাঁচাও’ ভূত সেখানে অভিনবত্বে অন্যতম। ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আগেই শহর পথ দেখাল নতুন করে। ভূত ঘোরাঘুরির খবর রটে গিয়েছে পাড়ায়। চায়ের দোকানে, পাড়ার মোড়ে জটলায় গুঞ্জন উঠেছে, “তাহলে কাজ হচ্ছে।” কেমন সে কাজ?
[তিন টাকায় ফুলকপি, জলের দরে মিলছে শীতের সবজি]
ছবির মতো সাজানো পাটুলি উপনগরী। বিলিতি কায়দায় তৈরি হয়েছে সেলফি জোন। প্রাতঃভ্রমণকারীদের জন্য জগার্স পার্ক। হাওড়া ব্রিজের মিনিয়েচার। বাঙালির ফুটবল প্রেমের ভাস্কর্য। রয়েছে সিঙ্গাপুরের অনুকরণে ভাসমান বাজার। এককথায় ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন কলকাতার সেরা ব্রান্ড এখন পাটুলি। কিন্তু বিধি বাম। সাজানো উপনগরীর ইতিউতি ছড়িয়ে ময়লার প্লাস্টিক। চকিতে পাশের বাড়ি থেকে উড়ে আসে মাছের আঁশভরা পলিথিন।
এলাকার কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত সাধুবাদ জানিয়েছেন ‘ভূত-উদ্যোগ’-কে। তাঁর কথায়, “রোজ ময়লা নিতে বাড়ি বাড়ি আসেন পুরসভার কর্মীরা। পুরসভার পক্ষ থেকে এলাকা পরিষ্কার রাখার আবেদন করা হয়েছে বাসিন্দাদের কাছে।” তবু কেন হাল বেহাল? স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ময়লার গাড়িতে ময়লা ফেলেন না সকলে। অনেকেই দরজা এঁটে থাকেন ওই সময়ে। এরাই এলাকা নোংরা করে। চুপিসারে বারান্দা দিয়ে ময়লার প্লাস্টিক ছুড়ে দেন। পাড়ার পরিত্যক্ত জমি এদের বদান্যতায় ডাস্টবিন হয়ে গিয়েছে।
[হাতিয়ার ‘ঠাগস অফ হিন্দোস্তান’, সচেতনতা বাড়াতে নয়া পন্থা কলকাতা পুলিশের]
ময়লার সেই স্তূপে কিলবিল করছে জীবাণু। অসুস্থ হচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারাই। নাকে হাত দিয়েই মর্নিং ওয়াকে বেরোতে হয়। বাসিন্দারা বুঝতে পেরেছেন, হাজারো বারণ সত্ত্বেও চুপিসাড়ে পাটুলিরই হাতেগোনা কয়েকজন এই কাজটা করছেন। তাঁদের আটকাতে তৈরি হয় অভিনব পন্থা। সে চিন্তা থেকেই ভূতের আগমন। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন, রাতের অন্ধকারে যাঁরা পাড়া নোংরা করছেন তাদের আটকাতে ভূতের দরকার। এ যেন এক ভূত ছাড়াতে অন্য ভুতের শরণাপন্ন। সায় দিয়েছেন এলাকার বাসিন্দা শৈবাল মজুমদার। “তাই তো। এলাকা নোংরা করার ভূত ছাড়াতে শাকচুন্নি মেছোপেত্নীদের ডেকে এনেছি আমরা।” বরাত দিয়ে বানানো হয়েছে ভুতের মডেল। পরিত্যক্ত জমির পাশে রেখে দেওয়া হয়েছে অশরীরীদের। বার্তা দেওয়া হয়েছে, ময়লা ফেললেই ঘারে চাপবে এই ভূত। চোরাচুন্নি, পেত্নিরা বলছে, “সাবধান এলাকা নোংরা করলে আমরা তোমার বাড়ি যাব।”
[নার্সিংহোমে অশীতিপর বৃদ্ধকে চড় নার্সের! থানায় অভিযোগ দায়ের পরিবারের]
এতে কি চিন্তা বদলাবে? এলাকার কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্ত বলছেন, “বিষয়টা অভিনব। এলাকা পরিষ্কার করতে যাঁরাই এ উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁদের ধন্যবাদ। এত কষ্ট করে সৌন্দর্যায়ন করা হচ্ছে। পরিষ্কার রাখা হচ্ছে। কিছু লোক নোংরা করে দেবেন এটা হতে পারে না।” সচেতনতার অভাবে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বিপদের মুখে সৌন্দর্যায়ন। দক্ষিণেশ্বর স্কাই ওয়াক উদ্বোধনের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই পানের পিক ফেলা হয় যত্রতত্র। সে খবর চাউর হতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। পুর নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ববি হাকিম নির্দেশ দেন, স্কাইওয়াকের সর্বত্র সিসিটিভি বসানো হবে। যে নোংরা করবে ঝাঁটা হাতে তাকেই পরিষ্কার করতে হবে। অন্যথা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। ফের পাটুলির এহেন ঘটনার পর হতবাক স্থানীয় বাসিন্দারা। দীপাবলির পর এলাকার বাসিন্দাদের একটাই প্রার্থনা, শুভবুদ্ধির উদয় হোক সকলের৷
The post ভূতের ভয় দেখিয়ে পরিবেশ রক্ষায় পথ দেখাল পাটুলি appeared first on Sangbad Pratidin.