নব্যেন্দু হাজরা: আগে এই উৎসব ছিল অবাঙালিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু বছর দশেক ধরে, তাতে গা ভাসিয়েছেন বাঙালিরাও। তাই ধনতেরাসের আগে সোনা-রুপোর দোকানে ক্রেতার ভালই ভিড়। হাজারো অফার নিয়ে দোকান সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরাও। মজুরির ছাড় থেকে পুরনো সোনায় এক্সচেঞ্জ অফার, সঙ্গে গিফট, কী নেই তাতে! তবে সোনালি ধাতুর যা দাম তা কিনতে পারেন ক’জন, তাই গত কয়েকবছর ধরে খদ্দেরের ধরনও বদলেছে। রুপোর দোকানগুলোতেও ধনতেরাস উপলক্ষে ভালই ভিড়।
বড়বাজারের নলিনী শেঠ রোড, সত্যনারায়ণ পার্ক, কলাকার স্ট্রিটের রুপোর জিনিসপত্রের দোকানে দেদার চলছে ধনতেরাস অফার। লক্ষ্মীনারায়ণের মূর্তি থেকে রুপোর কয়েন। অগ্রিম টাকা দিয়ে বিল নিয়ে যাচ্ছেন কেউ কেউ। জিনিস নেবেন শনি ও রবিবার। কারণ ক্রেতারা জানাচ্ছেন, শুভ মুহূর্তেই তো ধাতু বাড়িতে ঢোকাতে হবে।
[আরও পড়ুন: উল্টোডাঙায় যকের ধন! ব্যবসায়ী আমির খানের সঙ্গীর বাড়ি থেকে উদ্ধার নগদ দেড় কোটি]
ব্যবসায়ীদের কথায়, আগে মূলত অবাঙালিরাই সোনা-রুপো কিনতেন এই দিনটাতে। এখন বাঙালিরাই মনে হয় বেশি কেনেন। উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত কেউ বাদ নেই। কী ধরনের জিনিস বেশি বিক্রি হয়? ব্যবসায়ীদের কথায়, একদম হাজার টাকার মধ্যে যাঁরা কিছু কিনতে চান, তাঁরা মূলত রুপোর লক্ষ্মী-গণেশের মূর্তি অথবা কয়েন কেনেন। কিন্তু একটু বাজেট বাড়ান যাঁরা, বাড়িতে নিয়মিত পুজো করেন, তাঁরা ঠাকুরের থালা, গ্লাস, পাতা, লক্ষ্মীর ফুল ইত্যাদি কেনেন। গতবছর বেচাকেনা ভালই ছিল বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কলাকার স্ট্রিটের গোটা পনেরো রুপোর জিনিসপত্রের দোকান। রুপোর গয়না থেকে শুরু করে বাসনপত্র সবই রয়েছে। ক্রেতারও ভিড় বেশ ভাল। শ্রীরাম জুয়েলার্সের ডিরেক্টর অশোককুমার ভার্মা অবশ্য বলেন, ‘‘এবার বাজার খানিক খারাপ। বুকিং কম হচ্ছে। তবে ধনতেরাসের দিন আশা করা যায়, ভালই বেচাকেনা হবে। রাত দু’টো পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার ছাড়পত্র মিলেছে। অথচ অন্যবার দেখা যায়, রাত তিনটে-চারটে পর্যন্তও খদ্দের থাকে।’’ নলিনী শেঠ রোডের ধারে দোকান প্রদীপ শীলের কথায়, ‘‘আমরা এখান থেকে হোলসেল বিক্রি করি। তবে এবারের তুলনায় গতবার বাজার ভাল ছিল।’’
অন্যান্যবার লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে ভারি সোনা বা রুপোর জিনিস ব্যবসায়ীরা ধনতেরাস উপলক্ষে যে কিনতেন, আগে থেকে অর্ডার দিতেন, সেই ট্রেন্ড এবার কিছুটা কম। যেভাবে সিবিআই ইডি চতুর্দিকে রেড করছে, সবাই ভয়ে আছে। মুচকি হেসে জানান এক সোনার দোকানের মালিক। কনফেডারেশন অফ ওয়েস্টবেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুশীল পোদ্দার বলেন, ‘‘কেনাকাটা ভাল হচ্ছে। পুজোতেও দেখা গিয়েছে, ২০১৯ সালের থেকেও বেশি টাকার লেনদেন হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, ধনতেরাসেও তাই হবে।’’