তালিকাভুক্ত তথা লিস্টেড। আর তালিকাভুক্ত নয় অর্থাৎ আন-লিস্টেড। বাজারে এই দুই ধরনের স্টকই রয়েছে। তবে এই বিভাজন নিয়ে প্রত্যেক লগ্নিকারীর ধারণা স্পষ্ট বা প্রাঞ্জল নেই। বাজারে শেয়ার না ছেড়েও কিছু সংস্থা প্রাইমারি অফারের পরিকল্পনা করে রাখে, এই গোত্রটিই সাধারণত আনলিস্টেড স্টক-এর আওতায় পড়ে। এই নিয়ে স্বচ্ছ তথ্য পেতে পড়ুন লক্ষ্মী ফিনান্সের কর্ণধার দিলীপকুমার দে-র এই লেখা।

এখনও প্রাইমারি মার্কেটে আইপিও (ইনিশিয়াল পাবলিক অফার) হয়ে আসেনি। কিন্তু সজাগ ইনভেস্টররা, চেষ্টা করলে, এমন আনলিস্টেড স্টকও কিনতে পারেন–অবশ্য যদি সেই রকম স্টক তাঁদের জন্য সহজলভ্য হয়ে থাকে। আসুন, আজ আনলিস্টেড স্টকের ধারণাটি পরিস্কার করে বলে দিই আপনাদের। ধরে নিচ্ছি আপনারা অনেকেই স্টক মার্কেটে লগ্নি করেন, হয়তো নিয়মিত বেচাকেনাও করে থাকেন। আপনাদের ক্ষেত্র সেকেন্ডারি মার্কেট– অর্থাৎ সেই “লিস্টেড স্পেস” যেখানে স্টক ইতিমধ্যে নথিভুক্ত হয়ে আছে, লগ্নিকারীরা প্রয়োজন বুঝলে ব্রোকারের মাধ্যমে সরাসরি কেনাবেচা করতে পারেন। শেয়ার বাজারের সব নিয়ম কানুন মেনে চললে তা করা যায়।
এই পর্যন্ত তো চেনা কাহিনি, আশ্চর্যের কিছু নেই। ইতিমধে্য আমাদের দেশের অনেক ইনভেস্টরই লেনদেনে অভ্যস্ত, বহু নতুন প্রজন্মের মানুষও শেয়ার মার্কেটে পা রেখেছেন বিগত কয়েক বছরে। তবে এছাড়াও বলে রাখি আনলিস্টেড স্টকের কথাও। ঘটনাচক্রে, বাজারে শেয়ার ছাড়েনি, তবে প্রাইমারি অফারের পরিকল্পনা আছে, এমন কোম্পানির সংখ্যা কম নয়। একটু খুলে বলি। মনে করা যাক, কোম্পানি ক (কোনও বিশেষ সংস্থার নাম নিচ্ছি না) কিছুকালের মধ্যে লিস্টিং করবে। সংস্থার প্রোমাটার তথা ম্যানেজমেন্ট এমনই ভেবেছেন। তেমন সংস্থার নির্দিষ্ট কিছু শেয়ার হয়তো লগ্নিকারীর কাছে পৌঁছে যেতে পারে, যদি সেই লগ্নিকারীরা আনলিস্টেড স্টক কিনতে রাজি থাকেন। আপনারা প্রশ্ন করবেন, কেন কিনব এই জাতীয় স্টক? উত্তরে বলব, এতে সুবিধা পাওয়া সম্ভব লগ্নিকারীদের। পরে বাজারে যদি আইপিও করে নেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থা, তাহলে হয়তো দাম বেশি হবে। সেক্ষেত্রে কম দামে যদি আগেই আপনি পেয়ে যান, তাতে লাভবান হবেন। মোটামুটি হিসাবটি সোজা এবং সহজবোধ্য।
আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি বহু ধরনের কোম্পানি প্রাইমারি ইস্যু আনার আগে এই রাস্তায় হেঁটেছেন, ইনভেস্টররাও তাতে এগিয়ে এসেছেন। অনেক দৃষ্টান্ত আছে, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান ঘাঁটলে তা বোঝা যাবে সহজে। এই মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছি বেশ কিছু সংস্থা এই তালিকায় যুক্ত আছে, সেগুলি নানা সেক্টর থেকে উঠে এসেছে। সঙ্গের চার্ট দেখুন, বিষয়টি পরিষ্কার হবে। আচ্ছা, আনলিস্টেড স্টকে বিনিয়োগ করা কি সব সময়ই পুরোপুরি সার্থক হয়? এই প্রসঙ্গ খুব জরুরি সব ইনভেস্টরের পক্ষে। এইখানে নিচের পয়েন্টগুলি পড়ুন, আপনার নিজের পরিকল্পনার জন্য জরুরি।
১-নির্দিষ্ট কিছু ক্যাপিটাল মার্কেটের ইন্টারমিডিয়ারির সাহায্য নিয়ে আনলিস্টেড শেয়ার কিনতে পারেন। আপনার নিজের ডিম্যাট অ্যাকাউন্টে তা প্রতিফলিত হবে–ঠিক যেমন অন্য পাঁচটা শেয়ারের ক্ষেত্রে তা হয়ে থাকে।
২-বিক্রির উপর কিন্তু কড়া শর্ত চাপানো হয়ে থাকে। মনে রাখবেন, লিস্টেড স্টক আপনি চটজলদি বিক্রি করতে পারবেন স্টক এক্সচেঞ্জে আপনার ব্রোকারের মাধ্যমে। অবশ্য যথেষ্ট লিকুইডিটি থাকতে হবে, এ তো বলা বাহুল্য।
৩-আনলিস্টেড সংস্থার শেয়ার কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট বিক্রির প্ল্যাটফর্ম নেই। তার মানে যে কোনওদিন চাইলেন আর চলতি দাম দেখে সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ছেড়ে দিলেন, এমন নয়।
এবার অন্য একটি বড় প্রশ্নেও সম্মুখীন আমরা। আনলিস্টেড তো কিনলেন, তা আপনার ডিম্যাটেও চলে এল। আপনি চান শেয়ারটি যথারীতি এবার সেকেন্ডারি মার্কেটে চলে আসুক। এবার কোন কারণে যদি তা না আসে? মনে করুন সংস্থার ম্যানেজমেন্ট ঠিক সেই মুহূর্তে চাইছেন না ইসু্যটি আনতে। তাহলে তো আপনি আটকে যেতে পারেন, তাই না? ঠিক, এই জাতীয় সমস্যা চলে আসা সম্ভব। অতএব খেয়াল রাখুন, কোন ধরনের সংস্থার শেয়ারের দিকে নজর রাখছেন, কী-ই বা কিনছেন।
বলা বাহুল্য, সব কিছুই সমগোত্রীয় নয়, মুড়িমিছরির দর সমান হয় না। কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পেশাদার পরামর্শদাতার সঙ্গে আলোচনা করুন। তা ব্যতীত কিনবেন না, পরে অসুবিধা হতে পারে আপনার। নামী, চালু সংস্থার শেয়ার কিনলে লাভের সম্ভাবনা অবশ্যই বেশি, মেনে নিচ্ছি। তবে মার্কেটে কোনও কিছুর গ্যারান্টি দেওয়া সম্ভব নয়, তা তো জানেনই। লগ্নিকারী হিসাবে সম্পদ গঠন করার দায়িত্ব যেমন আপনার, তা সুরক্ষিত রাখার দায়ও তেমন বর্তায়। আশা করি আমার বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হবেন।