একসঙ্গে একাধিক অ্যাসেট ক্লাসে বিনিয়োগ করার কথা জোর গলায় বলছেন শ্রী বিজয় মন্ত্রী, জেএলআর মানি’র চিফ ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার সুবাদে তিনি জানাচ্ছেন, ‘মাল্টি অ্যাসেট’ একত্রে থাকলে লগ্নিকারীর স্বার্থ তুলনায় সুরক্ষিত থাকবে – বিশেষত যখন একসঙ্গে একটি বা দুটি অ্যাসেট ক্লাসের রিটার্ন ক্ষীণ হয়ে আসে। “একসঙ্গে যদি ইক্যুইটি, ডেট, গোল্ড, রিয়েল এস্টেট ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করেন, তাহলে পারফম্যান্স এবং সুরক্ষা, দুইয়ের জন্যই তা ভালো’’, ‘সঞ্চয়’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জানালেন তিনি। নিচে প্রশ্নোত্তরের নির্যাস।
কী দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারী মাল্টি অ্যাসেট পোর্টফোলিও বেছে নিতে পারেন?
প্রথমেই বলি, কেবল মাত্র সাম্প্রতিক অতীতের রিটার্ন দেখে বিচার করবেন না। মধ্যমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী, যেমন ধরনের লগ্নিকারীই আপনি হোন না কেন, পারফম্যান্সের পরিসংখ্যান শেষ কথা বলে না কখনওই। পুরো ফান্ডের পোর্টফোলিও মেপে দেখুন। প্রশ্ন করুন নিজেকে, এই ফান্ডটি কি ‘মাল্টি অ্যাসেট’ ঘরানার? বাস্তবিক, এই বিষয়টিই অনেক কিছুর মূলে আছে। কীভাবে অ্যাসেটের বিন্যাস করেছেন সংশ্লিষ্ট ফান্ড ম্যানেজার, তার উপর বহু ভাবে নির্ভরশীল আপনার সিদ্ধান্ত। মাল্টি অ্যাসেট শ্রেণির ফান্ডের অভাব নেই, কারণ বাজারে বেশ কিছু সংখ্যক প্রকল্প উপস্থিত আছে। সেগুলোর পোর্টফোলিও একবার দেখে নিন, সব খুঁটিনাটি সহজে পেয়ে যাবেন।
আপনার মতে প্রধান নির্ধারক কী? কোন বিশেষ অ্যাসেট দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত?
দেখুন একেবারে নির্দিষ্ট কোনও অ্যাসেটের কথা আলাদাভাবে বলা ঠিক হবে না। ইক্যুইটি এবং ফিক্সড-ইনকাম, আমরা অনেকেই জানি, অন্য ফান্ডে থাকবে। তার থেকে কিছুটা বেশি প্রাসঙ্গিক হতে পারে সোনা, রূপো এবং অন্য কমোডিটিতে বিনিয়োগ। আমরা সবাই বুঝতে পারছি, কীভাবে গোল্ড এবং সিলভার ইদানিং পারফর্ম করছে। সোনা তো চিরকালের পছন্দ, আর রূপোর দৌড় তো স্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ইনভেস্টররা বুঝতে পারছেন এই সমস্ত কমোডিটির কারণে রিটার্নও বেড়ে যেতে পারে। তাই নির্দিষ্ট মাল্টি অ্যাসেট ফান্ডের পোর্টফোলিওতে খুঁজে নিন কমোডিটির অংশটুকু কত। রিয়েল এস্টেটেরও ভূমিকা নিয়ে দ্বিমত থাকার কথা নয়। সব কটি প্রয়োজনীয় অ্যাসেট ক্লাসের মিশেলেই এই শ্রেণীর ফান্ড বড় মাপের রিটার্ন আনতে পারে।
সাধারণ মানুষ তো আলাদা আলাদা ফান্ডে, অ্যাসেট ক্লাস ধরে ধরে, বিনিয়োগ করতে পারেন। তাহলে বিশেষ কোন ফান্ডে লগ্নি করবেন কেন তিনি?
হ্যাঁ, ঠিকই। তবে সে জন্য চার-পাঁচটি স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাঁকে। প্রতিটি অ্যাসেট ক্লাসের ক্ষেত্রে এক কিংবা একাধিক ফান্ড। তা না করে কেবল একটি পোর্টফোলিওতে সমস্ত কিছু পেলে তাঁরই তো সুবিধা তাই না? তবুও আমি বলব, একের বেশি মাল্টি অ্যাসেট ফান্ড বেছে নিতে হবে। শুধুমাত্র একটি ফান্ড ম্যানেজারের উপর ভরসা করার দরকার নেই। বরং চাই অন্তত দুই-তিনটি অ্যালোকেশনের কৌশল। অর্থাৎ, এখানেও ডাইভারসিফিকেশনের প্রয়োজন আছে বিলক্ষণ।
এছাড়া আমি তো বলব, আপনার ‘কোর’ হোল্ডিংসের মধ্যে মাল্টি অ্যাসেট ফান্ডকে বিশেষ স্থান দিন, রিটার্নের নিরিখে নিরাশ হবে না বলে আমার ধারণা। হ্যাঁ, যথেষ্ট সময় দিতে হবে এখানেও, রাতারাতি বিপুল লাভ পেয়ে যাওয়ার ধারণা যদি থাকে তা ত্যাগ করতে হবে। বস্তুত, মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির সুবিধা প্রচুর, কিন্তু যথাযথ লাভের আশা খুব অল্পদিনে পূরণ হবে, তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া অসম্ভব। প্রতিটি অ্যাসেটের নিজস্ব ‘ডাইনামিক্স’ আছে, তারই মধ্যে সেটির পারফর্ম্যান্স ঘোরাফেরা করবে, সেভাবেই রিটার্নের হদিশ পাবেন লগ্নিকারীরা। মাল্টি অ্যাসেটের ক্ষেত্রেও এই কথাটি যে পুরোপুরি খাটে, তা ভুলে যাবেন না।