সায়নী সেন: পড়াশোনা, ভাল চাকরি, বিয়ে, সংসার৷ সমাজের বেঁধে দেওয়া গতে জীবন চালাতে চাননি তিনি৷ আর চালাবেনই বা কীভাবে? যখন তারই সমবয়সিরা সাফল্যের ইঁদুরদৌড়ে ছুটছেন৷ কেউ হারছেন আবার কেউ জিতছেন, তখন তিনি এসব ভাবার সময়ই পাননি৷ তখন তাঁর লক্ষ্য পাহাড়ের চূড়া৷ হাতছানিকে এড়ানোর সাধ্য তাঁর ছিল না৷ সেই হাতছানি মরীচিকা নয়, বরং তাই হয়ে দাঁড়াল সাফল্যের চাবিকাঠি৷ মানাসলু শৃঙ্গে পা রাখলেন হুগলির চন্দননগরের পিয়ালি বসাক৷ প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসাবে পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম পর্বতে পা রেখে, শুভেচ্ছার জোয়ারে ভাসছেন তিনি৷
[প্রবল সামুদ্রিক ঝড়েও অটল, দেশে ফিরছেন ভারতীয় জওয়ান অভিলাষ]
চন্দননগরের কাঁটাপুকুরের বাসিন্দা পিয়ালি৷ আপনজন বলতে বাবা, মা ও বোন৷ ছোট থেকে একটু অন্যরকম৷ ডানপিটে বললেও খুব ভুল হবে না৷ আর পাঁচজনের মতো চেনা স্রোতে কোনওদিনই গা ভাসাননি পিয়ালি৷ বন্ধুবান্ধবদের সংখ্যা ছিল অনেক৷ পিয়ালির বান্ধবীরা ছোটবেলায় পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত নাচ, গানের রেওয়াজে ব্যস্ত থাকতেন৷ কিন্তু পিয়ালি সেই সারি থেকে একটু আলাদা৷ নাচ, গান নয় ছোটবেলায় তাইকোন্ডো প্রশিক্ষণে হাতেখড়ি৷ তাইকুন্ডু যদি হয় প্রথম পছন্দ, তবে পিয়ালির দ্বিতীয় নেশা ছিল সাঁতার৷ এভাবেই একে একে বছর কাটে৷ ডানপিটে পিয়ালিকে বারবারই শুনতে হয়েছে মেয়ে না তুমি, তাই এটা করো না, সেটা তোমায় মানায় না৷ কিন্তু তাতেও দমেননি তিনি৷ অঙ্ক নিয়ে স্নাতক পাশ করেন পিয়ালি৷
[আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রবল সামুদ্রিক ঝড়ের মুখে ভারতীয় নৌসেনা জওয়ান]
স্নাতক পাসের পর তিনি দেখলেন তাঁর বন্ধুবান্ধবরা রুটিরুজির ইঁদুরদৌড়ে শামিল হয়েছেন৷ কিন্তু সেই দৌড়ে শামিল হতে মন সায় দেয়নি পিয়ালির৷ ততক্ষণে তাঁর মনের দখল নিয়েছে পাহাড়৷ সেই ডাকেই সাড়া দিয়ে ‘হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট’-এ নাম লেখালেন পিয়ালি৷ এরপর আর ফিরেও তাকাননি৷ ভালবাসা, নেশা সবই তখন পাহাড়৷ মাউন্ট ভাগীরথী ২ অভিযানে গিয়েছিলেন পিয়ালি৷ সাফল্যের পথে বাদ সেধেছে খারাপ আবহাওয়া৷ কিন্তু লড়াকু মেয়ের মন টলেনি এতটুকু৷ আজ হয়নি, কিন্তু ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই সাফল্য আসবে-নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন চন্দননগরের মেয়েটি৷ সত্যিই তাই হল৷ ধারদেনা করে ১ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়েছিলেন মানাসলুর পথে৷ মনে মনে অঙ্গীকার করেছিলেন জয়ী তাঁকে হতেই হবে৷ হলও তাই, একটানা ২৬ দিন পর এল সেই শুভক্ষণ৷ ২৭ অক্টোবর পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম পর্বত জয় করেন পিয়ালি৷ চলতি বছর প্রথম মহিলা হিসাবে কোনও আট হাজার মিটার শৃঙ্গ জয়ে সাফল্য পেয়েছেন৷
[সাইকেলে ইউরোপের ৬ দেশে সফর, ৫০-এ কামাল পলতার লিপিকা বিশ্বাসের]
যেদিন বাড়ি থেকে পিয়ালি বেরিয়েছিলেন, সেদিন থেকেই একটা আশঙ্কা গ্রাস করেছিলেন বসাক পরিবারের সদস্যরা৷ সাবধানে মেয়ে বাড়ি ফিরবে তো, সেই প্রশ্ন জেগেছিল বাবা-মায়ের মনে৷ ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন তাঁরা মেয়ে যেন ভালয় ভালয় বাড়ি ফেরে৷ মানাসলু জয়ের খবরে বদলে গিয়েছে বাড়ির চেহারা৷ শুভেচ্ছার জোয়ারে ভাসছেন পিয়ালি৷ খুশির হাওয়া গোটা পরিবারে৷
The post প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসাবে মানাসলু শৃঙ্গ জয় চন্দননগরের পিয়ালির appeared first on Sangbad Pratidin.