সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পোলার ভর্টেক্স-এর দাপটে আমেরিকায় লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। গত দু’দিনে সেখানে গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই পরিস্থিতিতে ‘তুষার ক্ষত’ বা ‘ফ্রস্ট বাইট’-এর জেরে সে দেশে ইতিমধ্যেই প্রাণহানি ঘটে গিয়েছে ২১ জনের। মৃতদের অধিকাংশই সহায়-সম্বলহীন ভবঘুরে মানুষজন। কিন্তু আশঙ্কা, মৃতের এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে আজ-কালের মধ্যেই। কারণ আবহাওয়াবিদদের পুর্বাভাস অনুযায়ী, ঠান্ডার প্রাবল্য আগামী দিনে আরও কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে। বিশেষত, শনিবার তাপমাত্রা আরও খানিকটা নিচে নেমে যেতে পারে।
[অভিবাসন নিয়ম লঙ্ঘন, আমেরিকায় আটক ৬০০ ভারতীয় পড়ুয়া]
এদিকে, মৃতের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে আহতের সংখ্যাও। শিকাগো শহরেই নতুন করে তুষার ক্ষতের শিকার হয়েছেন ন’জন। হাসপাতালে আশঙ্কাজনকক অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন আরও অন্তত ২৫ জন। তাদের প্রাণ বঁাচাতে কেটে বাদ দিতে হয়েছে আঙুল এবং পায়ের পাতা। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক পড়ুয়া, জেরার্ড বেল্জও। শিকাগোর জন এইচ স্ট্রোগার জুনিয়র হাসপাতালের চিকিৎসক স্টেথিস পাওলাকিদাস জানিয়েছেন, বুধবারও ঠান্ডায় মৃতের সংখ্যা ছিল ১২। কিন্তু ঠান্ডার আধিক্যে সেই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
বৃহস্পতিবারের সকালে শিকাগো শহরের তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বকালীন ন্যূনতম তাপমাত্রা। ১৯৮৫ সালের তুলনায় দশ ডিগ্রি কম। শহরটিকে তাই অধুনা ‘শিবেরিয়া’ (শিকাগো+সাইবেরিয়া) নামে ডাকতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। সামান্য দূরত্বে অবস্থিত ইলিনয়ের রকফোর্ডও গড়েছে শীতের নতুন রেকর্ড। সেখানকার তাপমাত্রা মাইনাস ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পোলার ভর্টেক্স হাঙ্গামা বাধিয়েছে উইসকনসিনের ম্যাডিসনেও। বৃহস্পতিবার এতটাই ঠান্ডা পড়েছে সেখানে যে, ভেঙে গিয়েছে ১৯৮৫ সালের পুরনো রেকর্ডও। বর্তমানে ম্যাডিসনের তাপমাত্রা মাইনাস ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই পরিস্থিতির মধ্যেই শুক্রবার, তুষারঝড় এগিয়েছে দেশের আরও পূর্ব প্রান্তে। এবার ঝড়ের কবলে পড়ছে বাফেলো থেকে ব্রুকলিন। ভয়ানক তুষার ঝড়ের দৌলতে পশ্চিম নিউ ইয়র্কের বিস্তীর্ণ এলাকা ঢেকে গিয়েছে অন্তত ২০ ইঞ্চি পুরু বরফের চাদরে। ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস জানাচ্ছে, গত ২৫ বছরে এমন আবহাওয়ার কবলে পড়তে হয়নি মধ্য, পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব আমেরিকাকে।
আলাদা করে শুধু নিউ ইয়র্ক কেন! আমেরিকার মধ্য, পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্বাংশের এলাকাগুলিতে প্রায় সুমেরুর তাপমাত্রায় বরফের মতো জমে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ওহায়োর লোরেনে একটি পরিত্যক্ত বাড়ির মধ্যে থেকে উদ্ধার হয়েছে ৬০ বছর বয়সি এক মহিলার প্রাণহীন দেহ। এহেন চরম পরিস্থিতিতে বাড়িতে, অফিসে এবং আদালতে বেড়ে গিয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রশাসনের তরফে বাসিন্দাদের যথাসম্ভব গ্যাস সাশ্রয় করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, প্রাকৃতিক গ্যাসের খরচ বাঁচাতে ডেট্রয়েটের বিখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা জেনারেল মোটরস মিশিগানে তাদের ১১টি কারখানা আপাতত বন্ধ রেখেছে।
[মার্কিন মুলুকে চরমে হিন্দু বিদ্বেষ, ভাঙা পড়ল মন্দির]