নিরুফা খাতুন: নাতনির সামনেই গাড়ির মধ্যে দিদাকে গলা কেটে খুন করে রাস্তায় ফেলে দেয় খুনিরা। বুধবার সকালে আনন্দপুর এলাকায় ঝোপের ধারে উদ্ধার হয় মহিলার দেহ। খুনের পর থেকেই নিখোঁজ চার বছরের শিশুকন্যা। গ্রেপ্তার করা হল মূল অভিযুক্ত চালক ভিকি সাউ ও তার সহকারীকে। আনন্দপুরের ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কিনারা করল পুলিশ।
নারকেলডাঙায় পরিবারে সঙ্গে থাকেন রেহানা পারভিন। তিলজলায় তাঁর একটি বিল্ডিং রয়েছে। সেখানে ভাড়াটিয়ারা থাকেন। প্রতি মাসে ভাড়া নিতে তিলজলায় যান বাড়ি মালিক। ওই বহুতলের নীচে ভাড়া থাকতেন ভিকি সাউ নামে এক যুবক। তাঁর একটি মারতি ওমনি গাড়ি রয়েছে। ভাড়াটিয়াদের কাছে ঘর ভাড়া নিতে ওই যুবকের গাড়ি নিয়ে যেতেন। পরিবার সূত্রে খবর, মঙ্গলবার দুপুর তিনটের সময় নারকেলডাঙা ওই যুবককে গাড়ি নিয়ে আসতেন বলেন বাড়ি মালিক। নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে চেপে চলে যান তিনি। সাধারণত সন্ধে সাতটার মধ্যে তিনি বাড়িতে চলে আসেন। কিন্তু ১১টা বেজে গেলেও বাড়িতে ফেরেননি। তখন মেয়ে তাঁর মাকে ফোন করেন। মায়ের সঙ্গে কথাও হয়। গাড়ি করে বাড়ি ফিরছে বলে জানান। পুলিশ জানিয়েছে, মা বাড়িতে না ফেরায় ওই রাতেই তিলজলায় যান মেয়ে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ভিকির সঙ্গে গাড়ি করে বেড়িয়ে গিয়েছেন অনেক আগেই। ভিকি তিলজলায় ঘর ভাড়া নিলেও তালতলায় স্ত্রী পরিবারকে নিয়ে থাকেন। রাতেই তিলজলা থেকে তাঁরা ভিকির তালতলার বাড়িতে আসে। ভিকি সেখানে ছিল।
[আরও পড়ুন: অপসারিত আর জি করের অধ্যক্ষ-সহ ৩ আধিকারিক, পদে নতুন কারা?]
পুলিশ জানিয়েছে, ভিকিকে মহিলার কথা জিজ্ঞেস করতে বলে বাড়ির কাছে নামিয়ে দিয়েছেন। তার বক্তব্যে সন্দেহ হতেই ভিকিকে আটক করে নারকেলডাঙা থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। তখনও সে তার দোষ কবুল করেনি। এর মধ্যে বুধবার সকালে আনন্দপুর নির্জন রাস্তার পাশে ঝোপে মহিলার রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। রেহানার পরিবার দেহটি শনাক্ত করে। এরপর অভিযুক্তকে লালবাজার এনে জেরা করতেই তদন্তকারীদের কাছে অপরাধ স্বীকার করে নেয়। লালবাজার জানিয়েছে, গাড়ির ভিতরে ছুরি দিয়ে মহিলার গলা কেটে খুন করা হয়। ওই গাড়িতে তার এক নাবালক সহকারী ছিল। তাকে সঙ্গে নিয়ে দেহটি ঝোপের ধারে ফেলে দিয়ে যায়। গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
গাড়ির ভিতরে রক্তের দাগ রয়েছে। কিন্তু শিশুটি এখনও নিখোঁজ। তদন্তকারীদের অনুমান, শিশুটিকেও হয়ত খুন করে খালে বা অন্য কোথাও ফেলে দেওয়া হয়েছে। তবে কী কারণে খুন করা হল মহিলাকে তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। ধৃত চালক নেশাগ্রস্ত বলে জানা গিয়েছে। জেরায় ধৃত জানিয়েছে, নেশা করে ছিল। গাড়ির গ্যাস ভরতে গিয়ে দেরি হয়েছিল। তা নিয়ে মহিলা গাড়িতে বসে ক্রমাগত মেজাজ দেখিয়ে বকাবকি করছিলেন। রাগের মাথায় গাড়িতে থাকা ছুরি নিয়ে গলায় চালিয়ে দেয়। যদিও তদন্তকারীরা মনে করছেন, খুনের পিছনে অন্য কারণ থাকতে পারে। টাকা লুট করতেও খুন করা হতে পারে।