সুলয়া সিংহ ও শুভজিৎ মণ্ডল: বঙ্গের ভোটে সবচেয়ে রঙ্গময় চরিত্রগুলির মধ্যে একজন অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mandal)। প্রতিদ্বন্দ্বী যতই শক্তিশালী হোক না কেন, ‘কেষ্ট’র শক্ত কাঁধে বীরভূমের ভার দিয়ে এতদিন নিশ্চিন্তে থেকেছেন তৃণমূলনেত্রী। অন্তত গত এক দশকের বঙ্গের ভোটচিত্র বলছে, বীরভূমের ‘রাজা’ একজনই। কিন্তু সেই রাজার সাম্রাজ্যে এবার যেন ঘুণ ধরেছে। একুশের লড়াইয়ের আগে নিজেদের ‘শক্ত ঘাঁটি’ বীরভূম নিয়ে কপালে খানিক চিন্তার ভাঁজ তৃণমূল কংগ্রেসের। ইন্টেলিজেন্স সূত্র বলছে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বাউল-ফকিরদের জেলায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে রাজ্যের শাসকদলকে। অনুব্রতর একাধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত গেরুয়া শিবির। এবং সেটা অজানা নয় তৃণমূলেরও (TMC)।
লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2019) প্রবল মোদি হাওয়া সত্ত্বেও বীরভূমের দুটি আসন রক্ষা করতে পেরেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল। লোকসভার পর বঙ্গ রাজনীতিতে যে দলবদলের হাওয়া লেগেছে, সেই হাওয়াও বীরভূম তৃণমূলের অন্দরে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। লাভপুরের মনিরুল ইসলাম ছাড়া রাজ্যের শাসকদলের তেমন বড় মাপের কোনও নেতা এখনও গেরুয়া শিবিরে নাম লেখাননি। তাছাড়া বীরভূমের রাজনীতির কেন্দ্রীয় চরিত্র এখনও অনুব্রত মণ্ডল। জেলার যাবতীয় রাজনৈতিক সমীকরণ আবর্তিত হয় ‘কেষ্ট’কে কেন্দ্র করেই। তাই সার্বিকভাবে তৃণমূল এখনও বীরভূমকে নিজেদের শক্ত ঘাঁটি বলেই মনে করছে।
[আরও পড়ুন: ‘তৃণমূল ফের ক্ষমতায় আসবে, সেদিন বাড়িতে বসে থেকো’, শুভেন্দুর নাম করে হুঙ্কার মদন মিত্রের]
কিন্তু মুশকিল হল, রাজ্যের অন্যান্য জেলার মতো ‘দাদা’র জেলাতেও প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সূত্রের খবর, সদ্য বোলপুরে অমিত শাহ’র (Amit Shah) রোড শো’তে জনসমাগম দেখে অনেক তৃণমূল নেতারই চোখ খুলে গিয়েছে। পালটা দিতে তাই ‘দিদি’র স্মরণাপন্ন হতে হয়েছে শাসকদলকে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, বীরভূম নিয়ে দলের শীর্ষনেতারা বেশ ভালমতোই চিন্তিত।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে বীরভূমের ১১টি আসনের মধ্যে অনুব্রত ম্যাজিকে শাসকদল দখল করেছিল ৯টি। ২০১৯ লোকসভার হিসেব বলছে, এই ১১টি বিধানসভা আসনের অর্ধেকের বেশিতেই লিড ধরে রাখতে পেরেছিল তৃণমূল। তবে, অন্তত গোটা পাঁচেক আসনে লড়াই ছিল সেয়ানে সেয়ানে। লোকসভার পর রাজ্যজুড়ে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা তীব্র হয়েছে। গেরুয়া শিবির আশায় বুক বাঁধছে, গোটা বীরভূম জেলাতেই তাঁরা তৃণমূলকে সমানে সমানে টক্কর দেবে। যদিও, লড়াই যে সেয়ানে সেয়ানে হবে সেটা মেনে নিয়েও শাসকদলের নেতারা ভরসা রাখছেন ‘কেষ্ট’র উপর।
[আরও পড়ুন: শুভেন্দুর মোকাবিলায় তৃণমূলের অস্ত্র অখিল গিরির ছেলে! সুপ্রকাশকে বড় দায়িত্ব দিল দল]
ইন্টেলিজেন্স সূত্রের তথ্য বলছে, বীরভূমে ২০১৬ বিধানসভার ফলাফলের পুনরাবৃত্তি করতে চায় তৃণমূল। তারা অন্তত ৯টি আসন জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। শাসকদলের যুক্তি, লোকসভার হিসেবে বীরভূমে বিজেপি লড়াই দিচ্ছে বটে। কিন্তু মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, বিহারের মতো রাজ্যগুলির বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখলে বোঝা যাবে, সব জায়গাতেই লোকসভার তুলনায় বিধানসভায় ভোট কমেছে গেরুয়া শিবিরের। শাসকদলের ধারণা, এরাজ্যে হয়তো বিজেপির ভোট অন্যান্য রাজ্যের মতো অতটা কমবে না, তবে কমবে। আর তাছাড়া বীরভূমে অনুব্রত আছেন, তিনিই সব সামলে নেবেন। তাই এই জেলায় অন্তত ৯টি আসন ধরেই এগোচ্ছে শাসকদল বলেই খবর। যদিও, দলের অন্দরেরই আরেকটা অংশের এই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় আছে। তাঁরা বলছেন, “জেলাজুড়ে দলের যা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব! আর দাদার দাপট তো আছে, কিন্তু আগের মতো দাপিয়ে বেড়াতে পারেন কই? শরীরটা আর দিচ্ছে না।”