সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: অবৈধভাবে আলু পাচার হচ্ছে ভিন রাজ্যে। আলুর ফলনের ওঠাপড়া বুঝে আগেভাগে আলু মজুত করে রেখেছিলেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। অন্য রাজ্যে বেশি চাহিদা থাকায় ও সেখানে ফলন আরও কম হওয়ায় বেশি মুনাফার লোভে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ডে চলে যাচ্ছে এ রাজ্যের খেতে উৎপাদিত আলু। তার দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে বাজারে বাজারে হানা দিয়ে এমনই তথ্য জেনেছেন নবান্ন ও এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের (EB) আধিকারিকরা।
সরকারি নির্দেশিকা স্পষ্ট, পাইকারি ব্যবসায়ীরা ২২ টাকায় প্রতি কেজি হিসাবে আলু কিনে ২৫ টাকায় খুচরো ব্যবসায়ীদের বিক্রি করবেন। আর, খুচরো বাজারে সাধারণ মানুষকে ২৭ টাকা দরে বিক্রি করতেই হবে। পাঁচ টাকার ফারাক থাকবে মাত্র। পাইকারি ব্যবসায়ীদের মুনাফার কারণেই যে আলুর এত দাম, সে বিষয়ে মোটামুটি স্পষ্ট কৃষি ও কৃষি বিপণন দপ্তর। নবান্ন চাইছে, মানুষ ২৫ টাকা দরেই আলু কিনুক। সে ব্যাপারে সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সূত্রের খবর, ভিন রাজ্যে যাতে অত্যধিক আলু না পাঠানো হয়, তার জন্য নজরদারি চলবে ট্রাক—লরিতে। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি বিষয়ক উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলছেন, “কিছু মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়াচ্ছেন। ২৫ টাকা আলুর দাম হওয়া সম্ভব খুচরো বাজারে। পুলিশ খুব কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
[আরও পড়ুন: গুরুতর অসুস্থ মন্ত্রী নির্মল মাজি, ভরতি SSKM হাসপাতালে]
এমনিতেই সুফল বাংলার স্টলগুলিতে কেজি প্রতি ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে জ্যোতি আলু। সেখানে অবশ্য আলু কিনতে ভিড়ও হচ্ছে। নিমেষে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে আলু। কলকাতার বহু বাজারে চড়া দামে আলু বিক্রির অভিযোগও এসেছে। কোথাও ৩০, কোথাও ৩২ বা ৩৪ টাকাতেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। বেশ কয়েকদিন ধরেই এমন অভিযোগ মিলছিল। সেই মতো বৃহস্পতিবার আচমকা বৈঠকখানা-সহ উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ কলকাতার কিছু বাজারে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের সদস্যরা হানা দেন। সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হচ্ছে কি না, সেটা দেখা মূল উদ্দেশ্য ছিল। হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে ইডি বা টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের তরফ থেকে।
[আরও পড়ুন: হাসপাতাল থেকেই মায়ের করোনা হয়েছে! নিখরচায় চিকিৎসার দাবি তুলে পুলিশের দ্বারস্থ মেয়ে]
টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে অবশ্য বলেছেন, ''নতুন বিজ্ঞপ্তিতে খুচরো ব্যবসায়ীরা লাভ পাবেন না। ২৫ টাকার জায়গায় ২৪ টাকায় তাঁরা কিনলে কিছুটা সুরাহা হত।'' এদিন হুগলির সিঙ্গুরে রতনপুর মোড়ে, হরিপাল ও তারকেশ্বরের বিভিন্ন আলুর আড়তেও হানা দেয় কৃষি বিপনন দপ্তর ও জেলা পুলিশ প্রশাসন। আগে আলুর বাজারদর ক্রমশ উর্ধমুখী হওয়ায় আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে নবান্নে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেই বৈঠক থেকেই নির্দেশ দেওয়া হয় এক সপ্তাহের মধ্যেই আলুর বাজারদর ২৫ টাকা কেজির বেশি করা যাবে না। তবে আলু ব্যবসায়ীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এরকমভাবে তাদের ব্যবসার উপর যদি নজরদারি চালানো জারি থাকে তবে আগামী দিনে তাঁরা আলুর ব্যবসা বন্ধ করে দেবেন। পাশাপাশি তাঁদের দাবি, হিমঘরগুলি থেকে যদি ৮০০ টাকা দরে আলুর প্যাকেট বিক্রি করা হয় তবেই কলকাতায় ২৫ টাকা কেজি আলু বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু খুচরো বাজারে সরকারের কথা শুনে আলু বিক্রি শুরুই করেননি ব্যবসায়ীরা।
এই পরিস্থিতিতে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় অন্তত আলুর দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে সেই কারণেই নবান্নের তরফে প্রতি কিলো জ্যোতি আলুর দাম ২৫ টাকার মধ্যে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। খুচরো বাজার অনুযায়ী আলুর মূল দাম ধরতে হবে কিলো প্রতি ২৩ টাকা। বাকি দু’টাকা জ্বালানি খরচ বাবদ নেওয়া যাবে। নবান্ন সূত্রে খবর, এই চূড়ান্ত প্রস্তাবে একপ্রকার সায় দিয়েছেন আলু ব্যবসায়ীরা। তবে তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি তথৈবচ।