গোবিন্দ রায়: এসএসসিতে চতুর্থ -তৃতীয় শ্রেণির কর্মী নিয়োগ এবং নবম-দশম শ্রেণির সহকারী শিক্ষক নিয়োগের পর এবার প্রাথমিক টেটে (Primary TET) সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। প্রাথমিক টেটে লক্ষ-লক্ষ টাকার নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ‘বাগদা রঞ্জনে’র ভূমিকা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে (CBI) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। আদালতের স্পষ্ট নির্দেশ, প্রাক্তন সিবিআই অধিকর্তা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ফেসবুকে তোলা অভিযোগের ওপর সিবিআই তদন্ত করবে।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ, তদন্তের প্রয়োজনে সিবিআই উপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস এবং চন্দন মণ্ডল দুজনকেই ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। এছাড়া সিবিআই চাইলে অন্য কাউকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। যদি চন্দন তদন্তে সহযোগিতা না করেন তাহলে তাঁকে সিবিআই হেফাজতেও নিতে পারে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি। ৭ দিনের মধ্যে সিবিআইকে তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে হাই কোর্টে (Calcutta High Court) রিপোর্ট পেশ করতে হবে। মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৫ জুন। তবে আপাতত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সিবিআই তদন্তের বাইরে থাকলেও নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ওঠা অভিযোগের ভিত্তিতে পর্ষদকে দু’সপ্তাহের হলফনামা আকারে রিপোর্ট পেশ করতে হবে আদালতে। পাশাপশি, মামলায় দুজনকেই পক্ষভুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
[আরও পড়ুন: নাড্ডার সফরের মাঝে ফের প্রকাশ্যে বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল, দলীয় বৈঠকে ‘ব্রাত্য’ রাজু]
প্রাথমিক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে দু’টি মামলা দায়ের হয় কলকাতা হাই কোর্টে। একটি মামলা করেন সৌমেন নন্দী। এদিন সেই মামলারই শুনানি ছিল হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে। শুনানিতে সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হওয়া অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণদপ্তরের প্রাক্তন মন্ত্রী উপেনের ফেসবুক পোস্টটি আদালতের নজরে আনেন মামলাকারীর আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। যেখানে মন্ত্রী উপেন সরাসরি চন্দন মণ্ডলের নাম উল্লেখ না করলেও, জনৈক ‘বাগদার রঞ্জন’এই দুর্নীতির হোতা বলে উল্লেখ করেছিলেন।
আইনজীবী জানান, সেই সময় উপেন জানিয়েছিলেন এক ঘনিষ্ঠের কাছ থেকে চাকরি বিক্রির বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। ২০২১ সালে নিজের ফেসবুক পোস্টে উপেন জানান, জনৈক বাগদার ‘রঞ্জন’ ওরফে ‘চন্দন’ প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বিক্রি করেন বলে জানতে পেরেছেন তিনি। প্রাথমিকের জন্য ১০ লক্ষ এবং উচ্চ প্রাথমিকের জন্য় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা করে নেন ওই ‘রঞ্জন’। মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দর উঠেছে। তবে এই ‘রঞ্জন’ আসলে কে, তা সেই সময় খোলসা করেননি উপেন। তার প্রেক্ষিতে মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে পর্ষদ।তবে তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তির কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, রঞ্জন অত্যন্ত সৎ ব্যক্তি, তাঁকে টাকা দিয়ে কেউ চাকরি পাননি, এমন অভিযোগ নেই বলে জানান উপেন।
[আরও পড়ুন: পিছল অনলাইনে উচ্চমাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের সময়, কখন রেজাল্ট জানতে পারবে পড়ুয়ারা?]
এই প্রসঙ্গ টেনে মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও ফিরদৌস শামিম জানান, ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য যে টেট হয়েছিল তাতে ৮৭ জন পরীক্ষার্থী পাশ না করেও প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি করছেন বলে অভিযোগ। তার মধ্যে একটি তালিকা দিয়ে ৬৮ জনের তথ্য না দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান আইনজীবী। এছাড়াও ১৮ জন টেট ফেল অথচ অনেকেই চাকরি পেয়েছে। বাকি পাপিয়া মুখোপাধ্যায় সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন বলে দাবি করেন আইনজীবী। এপ্রসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ আইনজীবী লক্ষ্মী গুপ্ত জানান, মামলায় আনা এমন অভিযোগের ভিত্তিহীন। তবে ২০১৭ সালে বোর্ডের সিদ্ধান্তে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ২৬৯ জন টেট পাশ করেন, প্রশ্ন ভুলের ১ নম্বর পেয়ে। এদের মধ্যে কেউ চাকরি পেয়েছে জানা নেই। ১৮ জনের টেট ফেলের তালিকা নিয়ে কিছু জানা নেই।