shono
Advertisement
Durga Puja 2024

পুজো এলেই রান্নাঘরে তোড়জোড়, দিদার হাতে বানানো ঝাল নাড়ু

ষষ্ঠীর দিন নতুন জামা পরেই দিদার কাছে, ঝাল নাড়ু পাব এদিন।
Published By: Kishore GhoshPosted: 04:56 PM Sep 30, 2024Updated: 06:09 PM Sep 30, 2024

গার্গী চক্রবর্তী: পুজো এলেই বাড়ি গমগম করে উঠত। পড়াশোনো থেকে মুক্তি এক মাসের জন্য। ভীষণ ফাঁকিবাজ ছিলাম, অজুহাত পেলেই হত। বাবা ভীষণ কড়া ধাঁচের মানুষ। গম্ভীর গলায় কিছু বললেই ভয়ে জুজু। তবে আপাতত লক্ষ্মীপুজো অবধি কিছু বলবে না একথা জানতাম। পুজোর এক বা দুসপ্তাহ আগে আলোয় মুড়িয়ে দেওয়া হত ছোট্ট পাড়াকে। ঠাকুর আনতে যাব বলে বিকালে ঘুমিয়ে নিতাম। বাবা পাড়ার দূর্গাপুজো করত। তাই বাড়িতে এই কয়েকদিন ব্যস্ততা থাকত। রান্নাঘরেও তোড়জোড় লেগে যেত। সব ঠাকুরের বাসন নামিয়ে তেঁতুল দিয়ে মেজে চকচকে করা হত। রান্নাঘরে কোনও ছোঁয়াছুঁয়ি করা যাবে না, কড়া হুকুম দিদার। দিদা মিষ্টি বানাবে, পুজো স্পেশাল মিষ্টি বলে কথা। ওদিকে নারকেল কোড়ানো হচ্ছে, তো অন্যদিকে সেদ্ধ চাল শিলে বাটা হচ্ছে। দিদা পুজোর স্পেশাল মিষ্টি ঝাল নাড়ু, সুজির নাড়ু, এছাড়া মুগের ডালের বরফি, শুকনো বোঁদে, রসবড়া কত কী! অপেক্ষা করতাম একবছর। মা দূর্গা আসবে আর আমি দিদার হাতে বানানো মিষ্টি খাব।

Advertisement

ঝাল নাড়ুর স্বাদ ছিল অন্যরকম। নারকেল দিয়ে নয়, সেদ্ধ চাল শিলে বাটতে হত। কড়াতে চিনির বা গুড়ের রসে ওই সেদ্ধ চাল মিশিয়ে দেওয়া হত। তারপর ঝাল করার জন্য মিহি করে বাটা শুকনো লঙ্কাগুঁড়ো মেশানো হত। আমি, দিদি, বড় দিদি মিলে নাড়ু পাকাতাম। খেতে ইচ্ছা করলেও লোভ সংবরণ করতে হত। আমি খুব ছোট ছোট নাড়ু পাকাতাম অনেকগুলো হবে ভেবে। দিদা তাতে 'হা হা' শব্দ করে হাসতেন। নবমীতে সেজো মাসি আসতেন হাতে করে মালপোয়া নিয়ে। নিজেই বানাতেন। হাতে করে কেউ কিছু নিয়ে আসলে, বিশেষ করে খাবার আনলে "মোগাম্বো খুশ হুয়া" বলতে ইচ্ছা করত।

ষষ্ঠীর দিন নতুন জামা পরে দিদার কাছে যেতাম। ঝাল নাড়ু পাব আজ। যেতাম দলবল নিয়ে। দিদা হাতে হাতে ঝাল নাড়ু দিত। কাচের বয়ামে নাড়ুগুলো সাজিয়ে রাখত। দাদা দুপুরবেলা অমৃত নাড়ু চুরি করত। উফ কী দুঃসাহসী কাজ! আমি একবার কাচের বয়াম ভেঙে ফেলেছিলাম, বয়ামগুলো জানালার ধারে থাকত। নাড়ু নিতে গিয়ে কীভাবে পরে গিয়ে ভেঙে যায়। খুব মার খেয়েছিলাম মায়ের কাছে। সেই ভয়ে আমি বয়ামে হাত দিতাম না। কার মার খেতে ভালো লাগে!

চোখের পলকে একদিন সব পরিবর্তন হয়ে যায়। রান্নাঘরের ব্যস্ততা আজ আর নেই। মা নাড়ু বানায়, তবে দিদার বানানো ঝাল নাড়ু এখন আর পাই না। পুজো আসলে দিদার কথা মনে পড়ে। "এই হাত দিস না ওটা, ছোঁয়াছুঁয়ি করিস না বাপু" দিদাকে এসব বলে এখন আর সাবধান করতে হয়না। পুজোর(Durga Puja 2024) অনেক কিছু বদলানোর সাথে সাথে দিদার হাতে পুজোর স্পেশাল মিষ্টিটাও হারিয়ে গেছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • চোখের পলকে একদিন সব পরিবর্তন হয়ে যায়।
  • রান্নাঘরের ব্যস্ততা আজ আর নেই।
  • মা নাড়ু বানায়, তবে দিদার বানানো ঝাল নাড়ু এখন আর পাই না।
Advertisement