shono
Advertisement

দুর্গা-মহিষাসুরের যুদ্ধের আড়ালে জীবন সংগ্রামের চিরন্তন কাহিনি তুলে ধরছে এই পুজো

দেখে নিন, কীভাবে সেজে উঠছে মণ্ডপ।
Posted: 04:52 PM Oct 15, 2020Updated: 04:52 PM Oct 15, 2020

এবছর করোনা আবহেই পুজো। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাবগুলিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি৷ কলকাতার বাছাই করা কিছু সেরা পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক সর্বজনীনের পুজোর প্রস্তুতি৷

Advertisement

সুচেতা সেনগুপ্ত: অস্ত্রের ঝনঝনানি, লৌহবর্ম, সেনাসজ্জায় সজ্জিত হয়ে শত্রু সংহারে বেরনোই কি যুদ্ধের একক সংজ্ঞা? রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর বিজয় নিশান ওড়ানোই একমাত্র চিহ্ন যুদ্ধজয়ের? ইতিহাসের পাতায় এসবই লেখা। কিন্তু মানব জীবন বলে অন্য কথা। আসল যুদ্ধ তো জীবনযুদ্ধ। প্রতি মুহূর্তে কোনও না কোনও সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত করতে হয় দিন, মাস, বছর, যুগ। আজকের মহামারী (Coronavirus) সংকটে সেই যুদ্ধ যেন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠছে। মারণ জীবাণুকে পরাভূত করে জীবনের পথ ধরে হেঁটে চলার যুদ্ধ চলছে এখন। অসুর বিনাশিনী, দুর্গতিনাশিনীর আগমনকালে এই জীবন যুদ্ধের ভাবনা তুলে এনেছে ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক সর্বজনীন (Thakurpukur State Bank Park Sarbojanin)। এবছর তাদের সূবর্ণ জয়ন্তীতে শিল্পী পার্থ দাশগুপ্তর ভাবনায় ‘জীবন যুদ্ধ বিগ্রহ’ থিমের বিশাল মঞ্চে চলছে দশভুজার মূর্তি স্থাপন।

”তোমরা যাকে যুদ্ধ বলো যুদ্ধ বলা যায় কি তাকে?/ এক জীবনের মধ্যে আরও হাজার জীবন যুদ্ধ থাকে” – সৈকত কুণ্ডুর কলমে উঠে আসা এই শব্দ সাজিয়ে দুর্গার আগমনি বার্তা পাঠাচ্ছে ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক সর্বজনীন। এই ভাবনাকে একটু তলিয়ে দেখলেই বোঝা খুব কঠিন নয় যে এক জীবনের মধ্যে হাজার জীবন যুদ্ধের এই দৃষ্টিভঙ্গি আসলে প্রতিটি ছোট ছোট সংগ্রামকেই প্রতিফলিত করতে চাইছে। ভাবনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নাটকের মঞ্চের আদলে তৈরি হচ্ছে দেবীর অধিষ্ঠান স্থল।

[আরও পড়ুন: রোগমুক্ত হোক পৃথিবী, দেবী দুর্গার কাছে এটাই মানত দক্ষিণের এই পুজো কমিটির]

শিল্পী পার্থ দাশগুপ্তর কথায়, ”আমরা যে দুর্গাপুজো করি, পুজোটা তো আসলে যুদ্ধের। হাজার জীবনযুদ্ধের যে সেলিব্রেশন, তারই প্রতীক দুর্গা-মহিষাসুরের সংগ্রাম। এখানে তাই জীবন যুদ্ধ বিগ্রহ থিমকে একটা বিরাট নাট্য মঞ্চে স্থাপন করেছি। সুবিধা হচ্ছে, এটা তো একেবারে রাস্তার ধারে। তাই গোটা জায়গাটায় মঞ্চ বানাতে পেরেছি।”

থিমের সঙ্গে মানানসই করে প্রতিমার আদলেও সেই ছোঁয়া। এ নিয়ে থিমশিল্পী বলছেন, ”দেবী দুর্গা এখানে জগদ্ধাত্রীর মতো। তিনি পদ্মহস্তা। এখন যুদ্ধ শেষ। জয়যুক্ত হয়ে এখন জ্ঞান আহরণের সময়। পদ্ম তো জ্ঞানের প্রতীক। তাই দেবী পদ্মহস্তা। যুদ্ধ থেকে অর্জিত জ্ঞানই এখন পাথেয়।” এসবি পার্ক সর্বজনীনের এবছর সূবর্ণ জয়ন্তী। তাই আয়োজন খানিক বেশি। একা শিল্পী পার্থ দাশগুপ্ত নন, ‘জীবন যুদ্ধ বিগ্রহ’ থিমকে যথাযথ রূপ দিতে এগিয়ে এসেছেন অভিনেতা দেবশংকর হালদার। তাঁর কণ্ঠে এসবি পার্কের মণ্ডপে আবহ শোনা যাবে সৈকত কুণ্ডুর রচনা – ”যুদ্ধ আমি যুদ্ধ তুমি, যুদ্ধ দূরে যুদ্ধ কাছে/বাঁচতে চাওয়ার চাইতে বড় যুদ্ধ বলো কী আর আছে?/ এসব যদি যুদ্ধ না হয়, যুদ্ধ তবে কিসের বড়াই/সারাজীবন লড়ছে মানুষ নিজের নিজের ছোট্ট লড়াই।”

[আরও পড়ুন: সুন্দরবনের সর্বহারাদের জীবনে উৎসব ফেরাতে ‘সেতু’ নির্মাণ করছে বালিগঞ্জের এই পুজো]

দশভুজার আবাহনে মানুষের জীবনযুদ্ধ তুলে ধরার পাশাপাশি এসবি পার্কের ভাবনায় কিন্তু রয়েছে আরও একটি বিষয়, যা হয়তো এভাবে কেউ ভাবেনি। পঞ্জিকামতে এবছর দেবী দুর্গায় দোলায় আগমন, ফল – মড়ক। সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে অক্ষরে অক্ষরেই কিন্তু সত্যি হয়ে উঠল পঞ্জিকার কথা। কিন্তু উলটোদিকও আছে। ফিরে যাওয়ার পথে দেবী যাবেন গজে। ফল – শস্যশ্যামলা ধরিত্রী। যেমন যুদ্ধ শেষে ধ্বংসাবশেষ থেকেই নতুন জীবনের স্পন্দন জেগে ওঠে, তেমনই মড়ক থেকেই আগামীর বীজ বুনে দিয়ে যাবেন মা দুর্গা। এই প্রার্থনায় সূবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে দর্শনার্থীদের আহ্বান জানাচ্ছে ঠাকুরপুকুর এসবি পার্ক সর্বজনীন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement