কৃষ্ণকুমার দাস: নিজেদের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না পুরীর মন্দিরের প্রবীণ সেবায়েতরা। প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে যাঁরা মহাপ্রভুর জগন্নাথের সেবায় যুক্ত আছেন তাঁদের কাছেও পুরো বিষয়টি অবিশ্বাস্য ঠেকছে। কারণ উলটো রথ যাত্রায় সূর্য ডোবার অনেক আগেই মন্দিরের সিংহদুয়ারের সামনে তিনটি রথ শুধু পৌঁছেই যায়নি, শুরু হয়ে গিয়েছে ধর্মীয় আচার-পুজোপাঠ। কিন্তু মন্দিরের প্রবীণ পাণ্ডাদের কাছে আরও চমক অপেক্ষা করছিল সোমবার সকালে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে। এতবছর ধরে উলটো রথের দু’দিন পর একাদশীর সোনাবেশ হত, সেই ‘রাজবেশ-দর্শন’ শুরু হত রাত আটটার পর। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এদিন সকালে পুরীর জেলাশাসক-পুলিশকর্তারা জানিয়ে দেন, বিকেল তিনটেয় শুরু হবে প্রভু জগন্নাথের সোনাবেশ দর্শন। এক ধাক্কায় পাঁচঘণ্টা আগে নীলমাধবের স্বর্ণালঙ্কারে ভূষিত রাজবেশ দর্শনের সুযোগ পেয়ে আবেগাপ্লুত পুরীতে আসা লক্ষ লক্ষ জগন্নাথ ভক্ত।
[যন্তর-মন্তরে প্রতিবাদ-ধরনায় সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা নয়, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের]
উলটো রথ শুরু হয়েছিল নিম্নচাপ-প্রবল বৃষ্টি-জলমগ্ন পুরীর ছবি দিয়ে। কিন্তু মেঘলা আকাশ মাথায় নিয়ে ও কোর্টের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এবারের রথযাত্রা সম্পূর্ণ করতে নীলাচলে সক্রিয় ছিল ওড়িশার নবীন পট্টনায়ক সরকার। ওড়িশা পুলিশের আইজি সর্বেশ্বর প্রিয়দর্শন ১০০ জনের মতো আইপিএস, সাতজন ম্যাজিস্ট্রেট এবং প্রায় সাত হাজার র্যাফ-পুলিশ নিয়ে নেমেছিলেন শতাব্দী প্রাচীন পাণ্ডা-রাজ খতম করতে। সোনাবেশের দিন দুপুরে পুরির মন্দিরের সিংহদুয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে তৃপ্তির হাসি মুখে নিয়ে আইজি প্রিয়দর্শন জানিয়ে দিলেন, “সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মাথায় রেখে রথযাত্রা থেকে, উলটো রথ, সোনাবেশ ও অধরপনা-সহ সমস্ত উৎসবটাই ভিডিও রেকর্ডিং করে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। মহাপ্রভু জগন্নাথদেবের ইচ্ছে মেনে আমরা শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন করেছি।”
[প্রভুর প্রাণ বাঁচাতে একাই ৩ সিংহের সঙ্গে লড়াই পোষ্য কুকুরের]
কোর্টের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশ যে কতটা কঠোর ছিল তার প্রমাণ মিলেছে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ‘ট্যাব’ বাজেয়াপ্ত করার ঘটনায়। গুন্ডিচা মন্দিরে জগন্নাথ দেবের পহন্ডি যাত্রার ছবি তুলছিলেন বাংলার পঞ্চায়েত মন্ত্রী। মাসির বাড়ির ভিতরে পহন্ডি যাত্রার কোনওরকম ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমনকী সংবাদ মাধ্যমকেও গুন্ডিচা মাসি বাড়িতে প্রবেশের অধিকার দেওয়া হয় না। কিন্তু সেখানে সুব্রতবাবুর ট্যাবে ছবি তোলার ঘটনা দেখতে পেয়ে স্বয়ং আইজি নিজেই এসে ট্যাবটি চেয়ে নেন। জানা গিয়েছে, পহন্ডি যাত্রার ভিডিও ফুটেজ মুছে দিয়েই মন্ত্রীর হাতে ট্যাবটি ফেরত দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ওড়িশা পুলিশ। বিষয়টি সম্পর্কে আইজি প্রিয়দর্শন জানান, “মাসির বাড়ির ভেতরে পুরোটাই সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এটা আদালতে পাঠানো হবে। আমি আইন মেনে মন্ত্রীর ট্যাব নিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছি।”
সোনাবেশ উপলক্ষে পুরীর মন্দিরকে কেন্দ্র করে তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকার সমস্ত রাস্তা সিল করে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনও গাড়ি-অটো-মোটোরবাইক মন্দিরমুখী হতে দেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসনের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় খুশি দেশ বিদেশ থেকে আসা লক্ষ লক্ষ ভক্তরা। সকাল থেকে সিংহদুয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি রথের সামনে তাঁরা আসছেন। দেবতাদের প্রণাম করার পাশাপাশি মাটির প্রদীপে সলতে লাগিয়ে বিগ্রহের উদ্দেশে নিবেদন করছেন। আবার সুশৃঙ্খলভাবে ফিরে যাচ্ছেন। সবমিলিয়ে এদিন আদালতের নির্দেশে এমন নজিরবিহিন ব্যবস্থাপনার পর ‘জয় জগন্নাথ’ ধ্বনির পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নামেও জয়ধ্বনি দিয়েছেন ভক্তরা।
The post অবিশ্বাস্য! নির্ধারিত সময়ের ৫ ঘণ্টা আগেই পুরীতে শুরু জগন্নাথের সোনাবেশ appeared first on Sangbad Pratidin.