স্টাফ রিপোর্টার: মুচিবাজার থেকে মিসিসিপি। কলেজ স্ট্রিট থেকে কানাডা। অষ্টমী জুড়বে বাঙালিকে। পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্রোচ্চারণে। মায়ের পুজো নাকি এবার মাতৃভাষায়! কথার কথা নয়। দিনের আলোর মতো সত্যি। যে ভাষায় প্রথম গর্ভধারিণীকে ডেকেছে আসমুদ্রহিমাচলের বাঙালি, দৃপ্ত স্লোগান ক্ষিপ্ত তিরধনুকের সেই অক্ষরেই হবে মাতৃবন্দনা। করজোড়ে হাত কপালে ঠেকালেই মিলবে প্রাণের আরাম, আত্মার শান্তি। দুর্গাপুজোর ইতিহাসে এই প্রথম। আনকোরা টাটকা উদ্যোগ নিয়েছে ‘সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন পুষ্পাঞ্জলি’। কালজয়ী সে উদ্যোগের স্লোগান, ‘মায়ের ভাষায় মায়ের পুজো’।
কলকাতা তো বটেই, এক সূত্রে ভাষা বাঁধবে সারা পৃথিবীর বাঙালিকে। ধনী, গরিব, মধ্যবিত্ত। সব বাঙালির অমোঘ অভ্যাস মহাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি। দুর্গাপুজোয় (Durga Pujo) অষ্টমীর সকালে স্নান সেরে নতুন বস্ত্রে পরিবারের মঙ্গলকামনায় ব্রতী হন গণনাতীত বঙ্গকুল। ঘোর নাস্তিকেরও মাথা নুয়ে পড়ে দশভুজার পায়ের কাছে। সে মন্ত্র আত্মস্থ করতে পারেন সকলে? অর্থোদ্ধার করতে পারে এই প্রজন্ম? প্রবীণ পুরোহিত কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, না বুঝেই মন্ত্রোচ্চারণ করেন অসংখ্য মানুষ। ‘ওঁ রুদ্রচণ্ডে প্রচণ্ডাসি প্রচণ্ড গণনাশিনী…’ উচ্চারণের সময় তিনি দেখেছেন কেউ উসখুস করছেন। কারও ঘুরছে চোখ। প্রবীণ পুরোহিতের পর্যবেক্ষণ, দুর্বোধ্য মন্ত্র বুঝতে না পেরেই এমনতর আচরণ। তাঁর কথায়, ‘‘কতকগুলো কথা উচ্চারণ করে, তার মানে বুঝলাম না। এটা অত্যন্ত অনভিপ্রেত। মহাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্রগুলোকে বাংলাভাষায় যদি বলা যায় তাহলে একজন নিজের ভাবটাকে প্রকাশ করতে পারে।’’ শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার (Pabitra Sarkar) জানিয়েছেন, যে ভাষা আমরা বুঝি না, তার মধ্যে একটা গুরুগম্ভীর মহিমা রয়েছে, এমন অন্ধবিশ্বাস আছে অনেকের। এটা ভিত্তিহীন। শিক্ষাবিদের সংযোজন, সংস্কৃত মন্ত্রে কোনও বিশেষ ইন্দ্রজাল রয়েছে, এমনটা নয়। আর যদি বা কিছু থেকেও থাকে, আপামর বাঙালির ভুল উচ্চারণে দিন দিন তা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে।
[আরও পড়ুন: উৎসবের রঙে রঙিন ভবানীপুর, বাংলার ঐতিহ্যবাহী পটশিল্পে এবার সাজছে এই পুজো]
এমন উদ্যোগে গেল গেল রব তুলছেন কতিপয় রক্ষণশীল। প্রাচীনপন্থীদের খণ্ডন করে পুরাণ বিশেষজ্ঞ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী (Nrisingha Prasad Bhaduri) বলেছেন, কোনও দোষ নেই বাংলায় পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ায়। নৃসিংহবাবুর যুক্তি, বৈদিক যুগে যে সংস্কৃত উচ্চারণে পুজো হত, সময়ের সঙ্গে তা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। তা-ই যদি হয়, তবে বাংলা নয় কেন? এ শহর তো বটেই, বাংলা ভাষায় অষ্টমী পুজোয় আস্থা রেখেছেন দুবাই, প্যারিস, বেঙ্গালুরু, মুম্বইয়ের প্রবাসী বাঙালিরা। তৈরি তাঁরা।
এমনটা কেন আগে হয়নি? সব দেখেশুনে এমন প্রশ্ন অগুনতি বারোয়ারি পুজোর কর্মকর্তাদেরও। অসংখ্য পুজোকর্তা তাই যোগ দিয়েছেন অভিনব এই উদ্যোগে। ভাষা সূত্রে আবদ্ধ হয়েছেন কলকাতার কিছু সাবেক বাড়ির দুর্গাপুজোর আয়োজকরাও। সমস্ত জায়গায় এবার অষ্টমীর অঞ্জলি হবে বাংলাভাষায়। বাংলা মন্ত্রোচ্চারণের আয়োজকরা চাইছেন, যে যেখানে আছেন, অঞ্জলি দিন বাংলায়। তা আপলোড করুন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে। #chantbangla লিখে। তারপর? অষ্টমী-সায়াহ্নে ওই হ্যাশট্যাগই মিলিয়ে দেবে গোটা পৃথিবীর বাঙালিদের। কলুটোলার প্রিয়াঙ্কা দেখবে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রিয়কও মাতৃভাষায় ডেকেছে মা-কে।
[আরও পড়ুন: এবার দেবী দুর্গার আগমন ও গমন কীসে? তার পরিণাম কী হতে পারে? জেনে রাখুন]
শেষ নয়। এ তো সবে শুরুর সূচনা। এখনও যাঁরা অংশ নেওয়ার কথা ভাবছেন, তাঁরা যোগাযোগ করতে পারেন ই-মেলে। ই-মেলের ঠিকানা, pushpanjali@sangbadpratidin.in। ওয়েবসাইটেও মিলছে বাংলাভাষায় লেখা এই মন্ত্রের পিডিএফ এবং অডিও ফাইল। মহাষ্টমীর এই পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রের বঙ্গানুবাদ করেছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, প্রবীণ পুরোহিত কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য (Kaliprasanna Bhattacharjee), পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। chantbangla.org ওয়েবসাইটে গিয়ে সেই ফাইল ডাউনলোড করেই শুরু হোক অষ্টমীর অঞ্জলি। অডিও ফাইলে কণ্ঠ বাচিকশিল্পী সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের। চাইলে সরাসরি তা-ই চালানো যাবে মাইকে। হোক না কলকাতা, কানাডা কিংবা কল্যাণী। মহাষ্টমীর ফুল মায়ের পায়ে পড়ুক এক ভাষায়। নিকানো উঠোনে ঝরুক রোদ। বারান্দায় লাগুক জ্যোৎস্নার চন্দন।