ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: করোনাত্রস্ত নাগরিক জীবনে এমনিতেই প্রতি পদে ছোঁয়াচ লাগার ভয়। শ্মশানঘাটে তা আরও বেশি। দিন কয়েক আগের ঘটনা। কেওড়াতলা শ্মশানের বাইরে তখনও শোয়ানো মৃতদেহ। চারপাশে শোকের পরিবেশ – ফুঁপিয়ে কান্না। একপাশে প্রৌঢ়ের মৃতদেহ ছুঁয়ে বসা দুই যুবক। হঠাৎ দুই মহিলার কোমর বেঁধে ঝগড়া। শ্মশানের শান্তি ভেঙে খানখান।
ব্যাপারটা কী? দুই মহিলা প্রায় সমবয়সী। খানিক বাদে বোঝা গেল, দুজনই মৃতের সহধর্মিণী। মানে, দুই সতীন। আর দেহ আগলে বসা দুই যুবক ওঁদের ছেলে। মানে দুই বৈমাত্রেয় ভাই। মায়েদের কাজিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুই সৎ ভাইয়ের মধ্যেও দক্ষযজ্ঞ, হাতাহাতির জোগাড়। জানা গেল, কোন পক্ষের সন্তান মুখাগ্নি করবে, তা নিয়েই ঝগড়া। এখন শ্মশানে লোকসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ চলছে। বাবার দেহ নিয়ে কোন পক্ষ ঢুকবে, মুখাগ্নি করে অস্থি ভাসাবে, তার মীমাংসা আগে হোক। পরে সৎকার। এবং ফয়সালা করতে তারাতলার বাড়ি থেকে দুপক্ষই লোকলস্কর নিয়ে হাজির। তুমুল অশান্তি।
[আরও পড়ুন: চিনা মাঞ্জা সুতোর বিপদ রুখতে উদ্যোগ, শহরের দুই উড়ালপুলের পাঁচিলে লাগানো হবে জাল]
করোনার আবহে একে চারিদিকে সামাজিক বিধির গেরো। লোকজনকে ঠেকিয়ে রাখাই দায়। পুলিশও নাজেহাল। সেখান থেকেই সটান ফোন দক্ষিণের সাংসদ মালা রায়কে। “কী করব দিদি?” – প্রশ্ন শুনে দিদিও অবাক! “এটাও কি আমি সামলাব?”, বলতে গিয়ে কিছুটা আক্ষেপেরই সুর সাংসদের গলায়, “এমন সমাজব্যবস্থার কথা ভেবে অবাক হই। খারাপও লাগে। এক স্ত্রী বর্তমান থাকতে স্বামী বিয়ে করছেন। সেটা মেনে নিয়ে পেট চালানোর কথা ভেবেই সংসার করছেন প্রথম স্ত্রী। শেষে এই অবস্থা। কোন পক্ষ সৎকার করবে, তা নিয়ে ঝগড়া। ভাবা যায়!” শেষমেশ অবশ্য মালাদেবীর সালিশিতে স্থির হয়, দুই পক্ষের দু’জন করে, অর্থাৎ মোট চারজন মৃতদেহের সঙ্গে শ্মশানের ভিতরে যেতে পারবেন। সাংসদের বাড়ি মুদিয়ালি। কেওড়াতলা শ্মশান সেখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। “এটাই বিপদ, জানেন? কিছু হলেই আমি। কী করব? এইটুকু তো করতেই হয়। আর এখন সামাজিক দূরত্বের বিধি তো কঠোরভাবে মানতে হবে। কিছু একটা উপায় না করলেই নয়। পরপর লাইন।”– বলছেন সাংসদ।
শেষে পুলিশকর্মীদের সামাজিক দূরত্বের বুদ্ধি দিতেই রেহাই। কড়া করে বলে দেওয়া হল, নিয়ম মানলে তবেই মিলবে সৎকারের অনুমতি। দুই পরিবার রাজি। দেহ চুল্লিতে ঢুকল। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল পুলিশ, শ্মশান কর্তৃপক্ষ, অন্য শ্মশানযাত্রীরা। এমনই সব চটজলদি মুশকিল আসানের গল্প।
[আরও পড়ুন: ‘মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় অনুদান খরচের হিসাব দেন না’, খোঁচা বিজেপির রাজ্য সভাপতির]
আর এক দিনের ঘটনা। স্বামীর মৃতদেহ সৎকার এনেছেন স্ত্রী। সঙ্গে শুধু তাঁর বোন। পাড়ার লোক তড়িঘড়ি গাড়ি ঠিক করে শ্মশানে পাঠালেও সঙ্গে কেউ আসতে চায়নি। ডোমেরাও ফুলে ওঠা দেহ চুল্লিতে তুলতে চাইছে না। অতএব দিদিই পরিত্রাতা। আরও এক দিন। দেহ সৎকার হয়ে গিয়েছে। ডেথ সার্টিফিকেট কে নেবে, তাই নিয়ে দুই মহিলার মধ্যে প্রায় হাতাহাতি। জানা গেল, দু’জনেই মৃতের স্ত্রী। কার হাতে ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হবে, বুঝতে না পেরে ফোন মালাদিকে। তিনিও তুড়ন্ত সমাধানসূত্র বাতলালেন। নিয়মমতো দুই কপি সার্টিফিকেট মেলে। তা হলে দুই স্ত্রীকে একটা করে কপি দিয়ে দিলেই তো মিটে যায়, তারপর ওরা বুঝে নিক!
The post স্বামীর মুখাগ্নি নিয়ে তুমুল বিবাদ দুই সতীনের, সমস্যা মেটালেন সাংসদ মালা রায় appeared first on Sangbad Pratidin.