সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গণেশপুজো, দুর্গাপুজো, কালীপুজো, হিন্দুদের যে কোনও উৎসব নিয়ে সোশ্য়াল মিডিয়ায় জনপ্রিয় রেডিও সঞ্চালক কিছু পোস্ট করলেই তা নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে যায়। পোস্টের কমেন্ট বক্সে নেটিজেনের একাংশ কটাক্ষ শুরু করেন মীরকে (Mir Afsar Ali)। তবে মীর এই আক্রমণের কড়া জবাব দেননি কখনও। বরং বার বার নানা পোস্টের মধ্য়ে দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন মানুষের ধর্মই সব নয়। একজন শিল্পীর পরিচয় ধর্ম নয়! আর এবার মীরকে পাশে নিয়ে দীপাবলিতে সেই সব নেটিজেনদেরই একহাত নিলেন রেডিও সঞ্চালক অগ্নি (Mirchi Agni)! মীরকে নিয়ে এতদিন ধরে চলা ট্রোলের উচিত জবাব দিলেন তিনি।
জনপ্রিয় রেডিও সঞ্চালক অগ্নি তাঁর ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। যেখানে দেখা গিয়েছে, মীরকে পাশে নিয়ে শুভ দীপাবলি লেখা এক প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অগ্নি। এই ছবি পোস্ট করে অগ্নি লিখলেন, ”হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোনজন? আমার পাশের মানুষটিকে আমি বরাবর শিক্ষক হিসেবেই দেখেছি। শিক্ষকদের কোন ধর্ম হয় না। ঠিক তেমনই কয়েকজন মৌলবাদী (রাস্তায় বা সোশ্যাল মিডিয়ায়) আমাদের উৎসব ম্লান করতে পারবে না। সবাইকে শুভ কালীপুজো ও দীপাবলির আলোকিত শুভেচ্ছা। চলুন সবাই আলোর উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাই।”
[আরও পড়ুন: ও লাভলি! মদন মিত্রর সঙ্গে বাঙালি সাজে কালীপুজোর উদ্বোধনে রাখি সাওয়ান্ত]
সম্প্রতি দুর্গাপুজোর (Durga Puja 2021) এক বিজ্ঞাপনী প্রচারে দুর্গাপুজোর ছোটবেলার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষের শিকার হয়েছিলেন মীর। এ ঘটনা মীরের কাছে নতুন নয়। মুসলমান হওয়ায় বার বার এ ধরনের আক্রমণ মীরের সঙ্গে হতেই থাকে। তবে মীরকে কখনওই এই নিয়ে মুখ খুলতে দেখা যায়নি আগে। বরং নেটিজেনদের এহেন আচরণকে এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। তবে এবার গোটা ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করলেন মীর। ফেসবুকে লেখেন, ”অশেষ ধন্যবাদ তাঁদের, যাঁরা বার বার মনে করিয়ে দেন আমি শুধুই একজন মুসলমান, আর অন্য কোনও পরিচয় নেই মীরের। আপনারা ভালো থাকবেন। বড্ড হতাশ হলাম।”
মীর (RJ Mir) আরও লিখেছিলেন, ”নিজেকে আমি বারবার খুঁজে পেয়েছি, ইনোভেট করেছি নতুন আমিকে। সেরকম একটা গল্প, একটা অনুভূতি শেয়ার করছি আপনাদের সঙ্গে যদিও ইতিমধ্যে ধর্মের নামে কিছু বিজ্ঞ মানুষ জ্ঞান ফলাতে চলে এসেছেন। এত যুগ বাদেও মানুষকে বোঝানো গেল না যে ধর্ম যার যার নিজের ব্যাপার কিন্তু ‘উৎসব’ সবার। যাক গে। বড় বড় মনীষীরা যেটা করে যেতে পারেননি, সেটা আমার মতো একজন অতি সামান্য ক্ষুদ্র মানুষ কি করে পারবে? এত দিন বাদেও এটা যিনি বুঝে উঠতে পারলেন না, তিনি ভবিষ্যতেও পারবেন না। তাঁর জন্য করুণা। আর বুক ভরা ভালবাসা। এই ভিডিওটি হতে পারে একটি বিজ্ঞাপনী প্রচার কিন্তু এর মাধ্যমে বলা কথাগুলো আমার ছেলেবেলার সঙ্গে যুক্ত। বহু কষ্টে বেড়ে ওঠার সময়কার এক অধ্যায়। যেদিন মির্চির অফিসে বসে এটা নিয়ে পরিকল্পনা হয়েছিল, ভেবেছিলাম আমার ক্ষুদ্র জীবনের এই বিশেষ পর্বটা মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে, একটু হলেও তাঁদের বাবা-মা, তাঁদের শৈশবের দিনগুলোয় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। এখন দেখছি মস্ত বড় ভুল করেছি। যাই হোক… বড় একটা শিক্ষা হল আমার।’ সোশ্য়াল মিডিয়ায় অনবরত চলা কটাক্ষের জবাব এবার বন্ধু ও সহকর্মী অগ্নিকে নিয়ে যেন এভাবে দিলেন মীর।