সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আম্বানি, আদানিদের মতো শিল্পপতিদের ব্যাংক খোলার অনুমতি দিতে চাইছে রিজার্ভ ব্যাংক (Reserve Bank)। সেই প্রবণতাকে ‘বিপদজনক’ বলে আগেই সতর্ক করেছেন আরবিআইয়ের প্রাক্তন গর্ভনর রঘুরাম রাজন (Raghuram Rajan)। এবার সেই পরিকল্পনা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
অমিত শাহের ভাষাতেই কেন্দ্র সরকারকে বিঁধলেন রাহুল (Rahul Gandhi)। টুইটারে কটাক্ষ, ‘ক্রোনোলজিটা বুঝুন।’ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি লেখেন, “প্রথমে বড় সংস্থাগুলির ঋণ মকুব করলেন। দ্বিতীয়, বড় সংস্থাগুলির করের হার কমালেন। এবার আমজনতার জমানো টাকা ওই সংস্থাগুলির তৈরি করা ব্যাংকের হাতে তুলে দিতে চাইছে সরকার।” মোদি সরকারকে স্যুট-বুট কি সরকার বলেও কটাক্ষ করেন।
[আরও পড়ুন : ‘বড় বিনিয়োগের হটস্পট হবে ভারত, ধাক্কা সত্বেও চলবে আর্থিক সংস্কার’, ঘোষণা নির্মলার]
উল্লেখ্য, বাজারে নগদের জোগান বাড়াতে বেসরকারি ব্যাংকের সংখ্যা বাড়াতে চায় আরবিআই। সেই লক্ষ্যে টাটা, বিড়লা বা আম্বানিদের মতো বড় শিল্পপতিদের জন্য ব্যাঙ্কের লাইসেন্স ইস্যু করার পরামর্শ দিয়েছে আরবিআইয়ের বিশেষ কমিটি। কিন্তু এই পরামর্শের সঙ্গে মোটেও সহমত নন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন বা প্রাক্তন ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্যের মতো অর্থনীতিবিদরা। উলটে এটা অত্যন্ত ‘বাজে ধারণা’ বলেই কটাক্ষ করেছেন তাঁরা।
কেন্দ্র বেশ কিছুদিন ধরেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা করছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংখ্যা কমলে বাজারে শূন্যস্থান সৃষ্টি হতে পারে। সেই শূন্যস্থান পুরণের লক্ষ্যে শুক্রবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি ডিরেক্টর পি কে মোহান্তির নেতৃত্বাধীন কমিটি সুপারিশ করেছে, যে সমস্ত সংস্থা ব্যাংক না হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে বাজারে ঋণ দেওয়ার ব্যবসা করছে (ফাইনান্স সংস্থা), তাদের ব্যাংকের মর্যাদা দেওয়া যেতেই পারে। শর্ত একটাই, যে সব ফাইনান্স সংস্থার সম্পত্তির পরিমাণ ৫০ হাজার কোটির বেশি তারাই আবেদন করতে পারবে। পাশাপাশি, পেটিএম, জিও, এয়ারটেলের মতো ই-ওয়ালেটগুলিকেও স্মল ফাইনান্স ব্যাংকর আওতায় আনার সুপারিশ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কমিটি।
কিন্তু এই সুপারিশের ঘোরতর বিরোধী দুই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। রাজনের লিঙ্কডিন অ্যাকাউন্টে লেখা নিবন্ধে তাঁদের মত, ব্যাংকিং পরিষেবায় কর্পোরেট সংস্থার অংশগ্রহণের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেই পরীক্ষিত সত্ত্বেও দৃঢ় অবস্থান নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ব্যাংকিং সেক্টরে কর্পোরেট সংস্থাকে অনুমতি দেওয়া ‘বোমা ফেলা’র সমতুল হবে। তাঁদের বক্তব্যের সপক্ষে দু’টি যুক্তি দিয়েছেন তাঁরা।
[আরও পড়ুন : ২-৩ মাসের মধ্যেই মহারাষ্ট্রে সরকার গড়বে বিজেপি, হুঙ্কার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর]
এক, নিজস্ব ব্যাংক থাকলে কোনও বাধা ছাড়াই সহজে ঋণ নিতে পারবে শিল্প সংস্থাগুলি। এই ধরনের সংযোগের ইতিহাস সর্বদাই ‘বিপর্যয়কর’, বলেছেন রাজন ও আচার্য। ২০১৬—য় এই ধরনের প্রস্তাব এলেও ঝুঁকির দিক বিবেচনা করে পিছিয়ে গিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। দ্বিতীয়ত রাজনদের যুক্তি, ব্যাংকিং ক্ষেত্রে বড় কর্পোরেট সংস্থার প্রবেশের ফলে আর্থিক এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্দিষ্ট কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত হতে পারে। আর যদি স্বচ্ছভাবেও লাইসেন্স দেওয়া হয়, বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী বাড়তি সুবিধা পাবে। কারণ, তাদের হাতে বিরাট অঙ্কের প্রাথমিক মূলধন থাকবে। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাবে তারা। দেশের রাজনীতিতে অর্থশক্তির প্রভাব বাড়বে। স্বৈরাচার, ঘনিষ্ঠ, অযোগ্য ব্যক্তিদের শীর্ষ পদে বসানোর প্রবণতা বাড়বে। লাইসেন্স পাওয়ার সময় সমস্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বহু সংস্থা পরে বিধি ভেঙেছে, এমন নজির ভারতে বিরল নয়, মন্তব্য রাজনদের।