নব্যেন্দু হাজরা: কোথাও ধুলো উড়িয়ে উঠল ঝড়, কোথাও বৃষ্টি, কোথাও আবার শিলাবৃষ্টি। দহনের জ্বালা জুড়িয়ে স্বস্তির বৃষ্টি রাজ্যে। কলকাতায় সামান্য হলেও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিতে ভিজল দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা। সঙ্গে কোনও কোনও জায়গায় দেখা গেল কালবৈশাখীর তাণ্ডব। গাছের ডাল ভেঙে কৃষ্ণনগরে এক ব্যক্তির মৃত্যুও হয়েছে। কেতুগ্রামেও প্রাণ গিয়েছে এক ছাত্রীর। এছাড়া ক্যানিংয়ে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে এক প্রৌঢ়ার। বারাকপুরে অসুস্থ হয়ে পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রী।
শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে বৃষ্টি নামল বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, দুর্গাপুর, বর্ধমান, নদিয়া, পুরুলিয়াতে। আর সন্ধের পর বৃষ্টিতে ভিজলো কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, দুই চব্বিশ পরগনাও। কোথাও কম, কোথাও একটু বেশি। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। বৃষ্টি হল দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারেও। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর, বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি আগামী কয়েকদিন চলবে। আর এই ঝড়বৃষ্টির কারণে ভ্যাপসা গরম কিছুটা কমবে।
[আরও পড়ুন: প্রেমিকের পরামর্শে মাকে খুন! হোয়াটসঅ্যাপ দেখে মেয়ের কুকীর্তি ফাঁস করল বাবা]
এদিকে রাজ্যে ঝড়বৃষ্টি শুরু হতেই আবার ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে মৌসম ভবন। তবে তার অভিমুখ কী হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। রাজ্যে তার প্রভাবের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহবিদরা। মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই গভীর নিম্নচাপের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে হাওয়া অফিসের তরফে। আন্দামান সাগরের উপর ৪ মে নাগাদ একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরির সম্ভাবনা আছে। পরে সেটি নিম্নচাপে পরিণত হবে। শক্তি বাড়িয়ে পরে তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। তা থেকে ঘূর্ণিঝড়। এখনও যা পরিস্থিতি তাতে আগামী মাসের ৫ তারিখ নিম্নচাপ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই ঝড়ের প্রভাব এরাজ্যে কতটা পড়বে তা এখনই বলতে পারছেন না আবহবিদরা। এটি যদি পূর্ব উপকূলের দিকে আসে তবে সে অনেকটা শক্তি বাড়াতে থাকবে। আবার এটি মায়ানমারের দিকে যেতে পারে। আবার কারও কথায় এটি চেন্নাই হয়ে বাংলাদেশ উপকূলে আসতে পারে।
আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য বলছে, মূলত এপ্রিল এবং মে মাস বর্ষার ঠিক আগের সময়টিকেই ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম ধরে নেওয়া হয়। আগেও যেগুলো হয়েছিল তা বেশিরভাগ মে মাসেই। প্রায় দু’মাস পর এদিন বৃষ্টিতে ভিজলো কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা। আকাশে মেঘ দেখে শোনা গেল ব্যাং ডাকার শব্দ। ঝমঝমিয়ে বারিধারা নামতেই অনেকেকে রাস্তায় বেরিয়ে ভিজতে দেখা গেল। মুহূর্তে যে যার মতো নিজের এলাকায় বৃষ্টির ছবি আপলোড করলেন সোশ্যাল মিডিয়াতেও। যেমনটা বৃষ্টি না হওয়ায় উটের ছবি দিয়ে বানিয়েছিলেন মিম। বহু জায়গায় ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ারও খবর মিলেছে। রামপুরহাট শাখায় রেললাইনে গাছের ডাল পড়ে ট্রেন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। আপ শতাব্দী, তেভাগা, মালদহ ইন্টারসিটি, ডাউন পুরী-সহ একাধিক ট্রেন আটকে পড়ে।
এদিন সকাল থেকেই রোদের তেজ ভালই ছিল। তবে দুপুরের পর থেকেই দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা করতে দেখা যায়। বিকেলেই কালবৈশাখীর দাপট শুরু হয় দক্ষিণবঙ্গের জেলায় জেলায়। হাওয়া অফিসের আধিকারিকরা বলছেন, বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প ঢুকছে রাজ্যে। তার জেরেই এই বৃষ্টি। আপাতত কিছুদিন রোদবৃষ্টির খেলা চলবে। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাঞ্চলীয় আধিকারিক গণেশকুমার দাস বলেন, “বুধবার পর্যন্ত আবহাওয়া এমনই থাকবে। ঘূর্ণিঝড়ের একটা সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বটে, তবে তার প্রভাব কতটা এরাজ্যে পড়বে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।”