অভিজিৎ ঘোষ, জয়সলমেঢ়: বাংলার পথেই রাজস্থান (Rajasthan)। ভাবছেন, এ আবার কী! সুযোগ পেলেই নিজেদের ঢাক পেটানো! কিন্তু যত রাজস্থানের রাজনীতির অন্দরে যাবেন, সেটাই মালুম হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বাংলার দায়িত্ব পেয়ে একের পর এক নতুন উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়ে এসেছেন। সমাজের প্রত্যেকটি শ্রেণির জন্য। উপকৃত সর্বস্তরের মানুষ। দেশের কাছে মডেল। কন্যাশ্রী প্রকল্প পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বাংলার মায়েদের জন্য লক্ষ্মীর ভাণ্ডার তো গোটা দেশে বিপ্লব। আর সেই পথেরই অনুসারী অশোক গেহলটের সরকার। শুধু নাম আলাদা। বাকিটা কার্বন কপি। আর সেই প্রকল্পই তেইশের নির্বাচনে কংগ্রেসের (Congress) ট্রাম্প কার্ড।
পোড় খাওয়া রাজনীতিক অশোক গেহলট (Ashok Gehlot)। বুঝেছিলেন পাথর, মার্বেল, সিমেন্ট, কাপড়, চামড়ার ব্যবসার মাঝে সর্বস্তরের মানুষকে ছুঁতে গেলে সরাসরি অ্যাকাউন্টে টাকা দিতে হবে। দ্রুত আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। এক শ্রেণির মানুষ এখনও সরকারের কাছে বহু কিছু আশা করে, কিন্তু পায় ছিটেফোঁটা। এখানেই তিনি চোখ বুজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী।
[আরও পড়ুন: নেই বেড, ডাক্তাররাও উদাসীন, যোগীরাজ্যে বিনা চিকিৎসায় মৃত প্রাক্তন বিজেপি সাংসদের ছেলে!]
কী করেছেন গেহলট? নয় নয় করে এক ডজন প্রকল্প। ১) চিরঞ্জীব প্রকল্প। চিকিৎসার জন্য ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিমা। রেশন কার্ড বা আধার কার্ড থাকলেই কার্ড তৈরি। ২) চিরঞ্জীব অ্যাক্সিডেন্ট কার্ড। দুর্ঘটনায় চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ টাকা। দুটি প্রকল্পেরই সুবিধা মিলবে সরকারি-বেসরকারি উভয় হাসপাতালে। ৩) স্কুলে ভালো ফল করলেই ল্যাপটপ। এমনকী, শীর্ষস্থানাধিকারীদের দেওয়া হচ্ছে স্কুটিও। ৪) নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের দেওয়া হচ্ছে মোবাইল। ৫) বিধবা পেনশন এক লপ্তে বাড়িয়ে মাসে ১ হাজার টাকা। ৬) যারা বিশেষভাবে সক্ষম তাদের মাসে এককালীন ১ হাজার টাকা অনুদান। ৭) হাসপাতালে ওষুধ মিলছে বিনামূল্যে। ৮) কৃষকদের ২ লক্ষ টাকা কৃষিঋণ মাফ। ৯) সরকারি স্কুলে পোশাক, জুতো, বই-খাতা দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। ১০) বাসের টিকিটে মহিলাদের ৫০ শতাংশ কনসেশন। ১১) কৃষকদের বিমামূল্যে বীজ বিতরণ ও চাষের জমিতে তারের বেড়া দিতে এককালীন ৪০ হাজার টাকা। ১২) পশুপালনেও এককালীন ৪০ হাজার টাকা।
এতদূর পড়ার পর আপনার কী মনে হচ্ছে? নিশ্চিতভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা মনে পড়তে বাধ্য। কারণ তাঁর প্রকল্প নিয়েই দেশ জুড়ে আলোচনা এমনকী, বিতর্কও। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলার কংগ্রেস নেতারা কি রাজস্থান রাজ্যটির খবর রাখেন না। বাংলায় দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকল্পের নিন্দায় মাতবেন। আর তাদের পরিচালিত রাজ্য সরকার বাংলাকে অন্ধভাবে অনুকরণ করে যাবে, এই নির্লজ্জতা একসঙ্গে চলতে পারে না। দ্বিচারিতার সীমা থাকা উচিত।
[আরও পড়ুন: সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্মদিবসে ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’তে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন মোদির]
আগেই বলেছিলাম, গেহলট রাজনৈতিক উপলব্ধি থেকে বুঝেছিলেন, সমাজের সব শ্রেণিকে নিয়ে চলতে হবে। তাদের কথাও ভাবতে হবে। তাই এক ডজন প্রকল্প। রাজস্থানে জাতপাতের রাজনীতি আছে। গোষ্ঠীরাজনীতি আছে। অনার কিলিংয়ের মতো ঘটনাও আছে। আবার রাজস্থানে সবচেয়ে বেশি যাতায়াত গুজরাটিদের। প্রতি মাসে কয়েক লক্ষ গুজরাটির যাতায়াত। রাস্তা জুড়ে গুজরাটের গাড়ি। রাজস্থানিরা তাদের আড়ালে-আবডালে গালমন্দও করেন। কিন্তু ধর্মীয় স্থানগুলো তাঁদের জন্য ভর্তিও থাকে। মোদির রাজ্যের তেমনই এক পর্যটক সুরেশ শাহ বলছেন, গেহলট সাহাব সমঝদার নেতা। টুরিজম স্পট শান্ত রহাতা হ্যায়। বিজনেস ভি আচ্ছা হোতা হ্যায়। অউর কেয়া চাহিয়ে…!