সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ‘‘পুলিশ বড্ড বেশি বাড়াবাড়ি করছে। এবার ওদের থামতে বলুন।’’ ফেসটাইম কলিং অ্যাপের মাধ্যমে প্রচ্ছন্ন হুমকিবার্তা পাঠানো হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেনকে। যদিও পুলিশ কোনও হুমকিকেই পাত্তা দিচ্ছে না। আসলে কয়লা মাফিয়া রাজেশ ওরফে রাজু ঝা হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ঠিক পথেই এগোচ্ছে বলে মনে করছে পুলিশ। রাজু ঝা হত্যাকাণ্ডে ঝাড়খণ্ডের ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’-এর যোগসূত্র থাকতে পারে বলে মনে করছে সিট। ধানবাদের ‘কয়লাঞ্চল’ ওয়াসেপুরের গ্যাংস্টার প্রিন্স খান, তার প্রতিদ্বন্দ্বী আমন সিংয়ের মতো কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের ভূমিকা আতসকাচের নিচে এনেছে এই মামলায় গঠিত স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (সিট)। আরও অনেক শার্প শুটারের খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশিও চালিয়েছে সিট। এরপরই এসেছে সেই ‘কাঙ্ক্ষিত’ হুমকি বার্তা।
এক পুলিশ আধিকারিকের কথায় ,তদন্তের অভিমুখ ঠিক পথেই রয়েছে। না হলে এমন হুমকি আসবে কেন। মৌচাকে ঢিল পড়লে হুল ফোঁটাতে এগিয়ে আসবেই মৌমাছি। তাতে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়ার কিছু নেই। প্রিন্স খান, বর্তমানে ঝাড়খণ্ডে নেই। উধাও হয়েছে। গালফ-এর কোনও দেশে থাকছে। সেখান থেকেই অপারেট করছে তার কারবার। প্রিন্স খান সাম্প্রতিক কালে ঝাড়খণ্ডের বেশ কয়েকজন পদস্থ পুলিশ আধিকারিককে হুমকি দিয়ে ‘বিখ্যাত’ হয়েছে। থানার পুলিশ আধিকারিক থেকে শুরু করে জেলার এসএসপি-কে ভিডিও বার্তায় হুমকি পাঠিয়েছে।
[আরও পড়ুন: ৭২ ঘণ্টার ম্যারাথন জেরা, অবশেষে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার জীবনকৃষ্ণ সাহা]
গত বছর ডিসেম্বরের শেষে একটি খুনের ঘটনায় পুলিশ তদন্ত ঠিকমতো করছে না, অভিযোগ তুলেছিল প্রিন্স খান। ভাইরাল হওয়া অডিও বার্তায় সে থানার এক আধিকারিক পি কে সিংকে হুমকি দিয়ে বলেছিল, ‘‘শাহবাজ হত্যা মামলায় ওই পুলিশ অফিসার বাবলু মণ্ডলের নাম বাদ দিতে চাইছে। কানুনকা হাত লম্বা হ্যায় তো মুঝে কিঁউ পকড় নেহি পা রাহা ধানবাদ পুলিশ। বাবলু মণ্ডলকে পুলিশ ছেড়ে দিলেও আমার লোক ছাড়বে না। ছোটে সরকারকে শুটার উসে মারেগা।’’ তার আগে গত বছর মে মাসে ধানবাদের এসএসপিকে ভিডিও বার্তায় হুমকি দিয়েছিল ওয়াসেপুরের ছোটে সরকার প্রিন্স খান।
ভিডিও বার্তায় প্রিন্স বলেছিল, ‘‘পরিবারের সদস্যদের অত্যাচার কেন করছে পুলিশ। আমরা কারও পরিবারের প্রতি কিছু করি না। ধানবাদের এসএসপিকে বলছি আমার বা আমার সহযোগীদের পরিবারগুলির উপর পুলিশি অত্যাচার বন্ধ না করলে ওয়াসেপুর মে কাশ্মীরি সেব (আপেল) বর্ষণ হবে। তার জন্য প্রশাসন দায়ী থাকবে।’’ ধানবাদের অপরাধ জগতে কাশ্মীরি সেব মানে হ্যান্ড গ্রেনেড। রাজু ঝা হত্যাকাণ্ডে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ নোটিস পাঠিয়েছে প্রিন্স খানের বাড়িতে। এদিকে, আমন সিংও অপরাধ জগতে কুখ্যাত। ধানবাদের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র নীরজ সিংকে ৭০টি গুলিতে ঝাঁজরা করেছিল আমন ও তার গ্যাং। আরও তিনজন খুন হয়েছিল সেদিন। আবার আমনের এক সহযোগীর জামিন নাকচ হওয়ার পরদিনই এই মামলার এক বিচারকেরও রহস্য মৃত্যু ঘটেছিল। তাতেও আমনের হাত ছিল বলে মনে করা হয়।
জেলে থাকা অবস্থায় আমন ধানবাদের চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, ঠিকাদারদের কাছ থেকে তোলা আদায়ের কারবার চালিয়েছে। প্রত্যেক ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫০ লক্ষ টাকা উসুল করেছে। না দেওয়ায় এক চিকিৎসককে খুন করে আমনের গ্যাং। ধানবাদের চিকিৎসকরা শহর ছাড়তে শুরু করেছিলেন। সেই আমন সিংকেও হাজারিবাগের কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিটের দুই আধিকারিক। এর পরই পুলিশ সুপারের কাছে হুমকি আসে পুলিশ বাড়াবাড়ি করছে বলে। বিশেষ কলিং অ্যাপের মাধ্যমে এই হুমকি দেওয়া হয়েছে। এই সব অ্যাপ পুলিশের পক্ষে ট্র্যাক করা সম্ভব হচ্ছে না।