হেমন্ত মৈথিল, অযোধ্যা: শিবসেনা সুপ্রিমো উদ্ধব ঠাকরের কর্মসূচির মধ্যেই অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে কেন্দ্রের উপর আরও চাপ বাড়ল। গত কয়েকদিন ধরে যে ইস্যুতে রাজনৈতিক পারদ চড়ছিল, তাকে আরও উষ্ণ করে তুললেন নির্মোহি আখড়ার প্রধান রামজি দাস। রবিবার তিনি স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী বছরের গোড়ায় প্রয়াগে কুম্ভমেলাতেই রাম মন্দির নির্মাণের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দেওয়া হবে। আরেক সাধু স্বামী রামভদ্রাচার্য অযোধ্যার ধর্ম সংসদে রবিবার জানান, শুক্রবার এক প্রবীণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, ১১ ডিসেম্বর পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফলের পর কেন্দ্র মন্দির নির্মাণ নিয়ে পদক্ষেপ করবে।
এদিন অযোধ্যার মাটিতে দাঁড়িয়ে উদ্ধব যখন মন্দির নির্মাণের দিন ঘোষণার জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি জানাচ্ছেন, ঠিক সেই সময় বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংয়ের হুঁশিয়ারি, “সরকার না পারলে আমরা অযোধ্যায় রাম মন্দির গড়বই। এ জন্য আইন ভাঙতেও আমরা পিছপা হব না। যে কোনও মূল্যে অযোধ্যায় রাম মন্দির হবেই।” কেন্দ্রকে ঘোরতর চাপে ফেলে বিশ্ব হিন্দু পরিষদও মন্দির নির্মাণের জন্য অবিলম্বে অধ্যাদেশ জারির দাবি জানিয়েছে। রবিবার নাগপুরে হুংকার সভায় সংঘ প্রধান মোহন ভাগবতও দাবি তোলেন, মন্দির নির্মাণের জন্য সরকারের উচিত দ্রুত আইন করা।
[ফের ব্যক্তিগত আক্রমণ, প্রধানমন্ত্রীর পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন কংগ্রেস নেতার]
পরিস্থিতি জটিল করে বিশ্ব বিন্দু পরিষদের আন্তর্জাতিক সাধারণ সম্পাদক চম্পত রাই রবিবার ধর্ম সংসদে বলেন, অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে কোনও ভাগাভাগি মানা হবে না। পুরো জমিতেই মন্দির গড়ে তোলা হবে। এই সংক্রান্ত মামলাই শীর্ষ আদালতে বিচারাধীন। আগামী জানুয়ারিতে শুনানির দিনক্ষণ ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। এই পরিস্থিতিতে রবিবার রাজস্থানের আলোয়াড়ে এক নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অযোধ্যা শুনানিতে বিলম্বের সব দায় বিরোধী কংগ্রেসের উপর চাপিয়েছেন। উল্লেখ্য, রাম মন্দির নিয়ে চলা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক চাপান-উতোরে এই প্রথম মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিন রামলালা দর্শন সেরে সরকারকে কটাক্ষ করে উদ্ধব বললেন, “ভোটের আগে রামরাম আর ভোটের পরে আরাম, এটাই বিজেপির কৌশল। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি এবং উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় রয়েছেন। দু’জনই কট্টর রামভক্ত। কিন্তু তার পরেও কেন অযোধ্যায় রাম মন্দির হল না? তিন তালাক, নোটবন্দি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সরকার আদালতের দ্বারস্থ হয়নি। অথচ রাম মন্দির প্রসঙ্গে আদালতের কথা তুলে হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছে সরকার। মানুষের আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করুক বিজেপি।” তাঁর দাবি, সরকার রাম মন্দির নির্মাণ করতে না পারলে ক্ষমতা থেকে সরে যাক। রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য এদিন উদ্ধবকে পালটা কটাক্ষ করে বলেন, “উদ্ধবের রামলালা দর্শনে কোনও সমস্যা নেই। তবে বালাসাহেব ঠাকরে বেঁচে থাকলে তিনি উদ্ধবকে এই কাজ করতে দিতেন না। রাম মন্দির আন্দোলন বা ধর্মসভা সংগঠনে শিবসেনার ভূমিকা নেই। বালাসাহেব ভিএইচপির কর্মসূচিকে সমর্থন করতেন। উদ্ধব চাইলে বিষয়টি নিয়ে ভিএইচপির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। রাম ভক্তেরা জানেন কারা মন্দির আন্দোলন করেছিলেন।”
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে অযোধ্যায় সেনা নামানোর দাবি তুলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। বহুজন সমাজ পার্টির প্রধান মায়াবতী মনে করেন, এই জমায়েত ভোটের আগের চমক ছাড়া আর কিছুই নয়। ধর্ম, জাতপাত ও ঘৃণার রাজনীতি ছেড়ে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
সামনেই ৬ ডিসেম্বর। তার আগে উদ্ধবের সফরের মাঝেই অযোধ্যায় চলছে আরএসএস-ধর্মসভা। যে কারণে অযোধ্যায় গত কয়েক দিন ধরেই তীব্র উত্তেজনা রয়েছে। কোনও মহল থেকে দাবি করা হয়েছে, নিরাপত্তার অভাবে মুসলিম বাসিন্দারা এলাকা ছাড়ছেন। অবশ্য প্রশাসনের তরফে সেই দাবি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
The post ‘কুম্ভমেলাতেই ঘোষিত হবে রাম মন্দির নির্মাণের দিন’ appeared first on Sangbad Pratidin.