shono
Advertisement

বিরল রোগ, কাশির চোটে করোনা রোগীর নাক দিয়ে বেরিয়ে এল মাথার ‘সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড’!

জটিল অস্ত্রোপচার করে তাঁকে সুস্থ করে তোলার পথে অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসকরা।
Posted: 06:01 PM Nov 14, 2021Updated: 06:01 PM Nov 14, 2021

অভিরূপ দাস: এক বছর ধরে কমছিল না সর্দি। নাক থেকে গড়ানো তরল পরীক্ষা করতেই চক্ষু চড়কগাছ। নাক থেকে বেয়ে গড়িয়ে পড়া তরল আদৌ শ্লেষ্মা নয়, মাথার অভ্যন্তরের ‘সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড’! বিস্মিত চিকিৎসকরা। এ তরল তো মাথার ভেতরে নরম ‘কুশনে’র কাজ করে। বাইরের চোট আঘাত থেকে রক্ষা করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে (Central nervous system)। তার তো এভাবে বেরিয়ে আসা অসম্ভব! কারণ, মস্তিষ্ক আর নাকের মাঝে একটা আস্তরণ থাকে। তা ভেদ করে কীভাবে বেরিয়ে আসছে ওই তরল?

Advertisement

সে রহস্য খুঁজতে গিয়েই আর এক চমক। এর নেপথ্যে রয়েছে করোনা ভাইরাস (Coronavirus)। মধ্য কলকাতার বেলেঘাটার বাসিন্দা বছর ৪৮ এর মৌসুমী চৌধুরীর সর্দি সারছিল না কিছুতেই। গুচ্ছের ট্যাবলেট খেয়েও নাক দিয়ে জল পড়া বন্ধ হয়নি। শুরু হয় ডাক্তার দেখানো। গত ছ’মাস ধরে শহরের একাধিক হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে খয়ে গিয়েছিল চটির শুকতলা। শেষমেশ অ্যাপোলো হাসপাতালের ENT বিভাগে এসেছিলেন মৌসুমী। সেখানেই ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. শান্তুনু পাঁজার কাছে রহস্যের সমাধান হয়।

[আরও পড়ুন: ১ লাখের বিনিময়ে পুরভোটে বিজেপির প্রার্থী! বিস্ফোরক অভিযোগ তৃণমূলের, ভাইরাল অডিও ক্লিপ]

ডা. পাঁজার কথায়, ”নাক থেকে গড়িয়ে পড়া তরল দেখেই সন্দেহ হয়। তা ঠিক সাধারণ সর্দির মতো ছিল না। প্রথমটায় মনে হয়, সিএসএফ রাইনোরিয়া। সিটি সিসটারনোগ্রাফি, এমআরআই করে দেখা যায় সে সন্দেহই সত্যি। মস্তিষ্কের খুলির ভিতর তরল থাকে। যা বাইরের চোট আঘাত থেকে খুলিকে রক্ষা করে। চিকিৎসা পরিভাষায় এহেন তরলকে বলা হয় ‘শক অ্যাবজরবার।’ মস্তিষ্কের ভেতরে পুষ্টি সরবরাহেও সাহায্য করে এই সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড। আর মৌসুমীদেবীর বাঁ নাক দিয়ে অনর্গল বেরিয়ে আসছে সেটাই।

এক বছর আগে করোনা বাসা বেঁধেছিল মৌসুমীদেবীর শরীরে। ফুসফুসে সংক্রমণ থেকেই মারাত্মক কাশি হয়েছিল তাঁর। নাক আর মস্তিষ্কের মাঝখানে একটা স্তর রয়েছে। চিকিৎসকের প্রাথমিক সন্দেহ, কাশির চোটে খুলে এসছে ওই অংশ। তাই এখন নাকের ভিতর ঝুলছে। যে কারণে বাঁ দিকের নাক দিয়ে ক্রমাগত বেরিয়ে আসছে সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড। ডা. শান্তুনু পাঁজার কথায়, “কাশির দমকে বারবার ঝাঁকুনি লাগার ফলে নাক আর মস্তিষ্কের মাঝখানের বেরিয়ারে চিড় ধরেছে।”

[আরও পড়ুন: ‘বেঁচে থাকতে হাওড়ায় ঢুকতে দেব না’, নাম না করে রাজীবকে হুঁশিয়ারি সাংসদ প্রসূনের]

এ ধরনের অস্ত্রোপচার করতে মস্তিষ্ক (Brain) খুলে ফেলাই দস্তুর। অস্ত্রোপচারে মস্তিষ্ক খুলতে হবে! শুনেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন রোগী। চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন, অন্য ‘টেকনিক’ নিতে হবে। খুব বেশি দেরি করার উপায় ছিল না। মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারত। পরিমাপ করে দেখা যায়, ১.২ সেন্টিমিটার মতো অংশে চিড় ধরেছে। তাকে ভালমতো মেরামত করতে হলে ত্রিস্তরীয় ‘ব্যান্ডেজ’ করতে হবে। প্রথমে নাক থেকে কার্টিলেজ নিয়ে খুলিটাকে পুর্নগঠন করা হয়। এরপর মিউকোসাল ফ্ল্যাপ দিয়ে আরও একটা স্তর তৈরি করা হয় হয়। সব শেষে তিন নম্বর স্তরে দেওয়া হয় নাকের টারবিনেট ফ্ল্যাপ। সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচারে সময় লেগেছে ৩ ঘন্টা। রোগী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। আপাতত ৭২ ঘন্টা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement