shono
Advertisement

বুক না কেটে ভ্যাটস পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার, রোগীর প্রাণ বাঁচিয়ে নজির SSKM-এর

প্যারাথাইরয়েড গ্ল্যান্ডে বেঁধেছিল ভয়ংকর টিউমার? কীভাবে তাকে বাগে আনা হল?
Posted: 11:56 AM Apr 07, 2021Updated: 11:56 AM Apr 07, 2021

গৌতম ব্রহ্ম: যেমন বুনো ওল, তেমন বাঘা তেঁতুল। অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির প্রয়োগে অতি বেয়াড়া রোগকে বাগে এনে এই আপ্তবাক্যকে ফের স্মরণ করিয়ে জনমানসে ভরসা জাগাল কলকাতার সরকারি হাসপাতাল। অবস্থান পালটে মারমুখী হয়ে ওঠা প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থিকে বাদ দিয়ে রোগীর জীবনরক্ষার এই নজিরকে কুর্নিশ জানাচ্ছে চিকিৎসকমহল।
মানবদেহে প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির (Parathyroid Glands) থাকার কথা থাইরয়েড গ্রন্থির ঠিক পিছনে। অথচ এক্ষেত্রে ছিল হার্টের গা ঘেঁষে। অস্ত্রোপচার করতে গেলে রোগীর বুক কাটতে হত। তা যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমনই ঝুঁকির। কিন্তু অপারেশন ছাড়া উপায় নেই, কারণ প্যারাথাইরয়েড গ্ল্যান্ডে বেঁধেছে ভয়ংকর টিউমার, যা যখন তখন পড়শি হার্টে ছোবল বসাতে পারে।

Advertisement

এই অভূতপূর্ব সংকট থেকে রোগীকে বাঁচিয়ে দিল নয়া প্রযুক্তির সার্জারি। ভিডিও অ্যাসিস্টেড থোরাস্কোপিক সার্জারি, সংক্ষেপে ভ্যাটস (VATS)। কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা এই অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে সহজেই জটিল অস্ত্রোপচারটি সারলেন। বাদ দিলেন এক্টোপিক প্যারাথাইরয়েড টিউমার। পিজির সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. দীপ্তেন্দ্র সরকারের দাবি, পূর্ব ভারতে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। “টিউমার সরাতে থোরাক্স ওপেন করে অপারেশনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পরে আমাদের কথা শুনে সিদ্ধান্ত বদল করে এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগ। ৫ মিলিমিটারের তিনটে ফুটো করেই অস্ত্রোপচার সারা হয়েছে”, বলেন দীপ্তেন্দ্রবাবু।

[আরও পড়ুন: ভ্যাপসা গরমে নাজেহাল শহরবাসী, টানা তিনদিন ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে কলকাতায়]

রোগীর নাম তারকচন্দ্র অধিকারী। নবদ্বীপের বাসিন্দা তিনি। অভাবিতভাবে কার্যত নবজন্ম পেয়ে আপ্লুত তাঁর পরিজন। ৪৪ বছরের তারকবাবু ফেব্রুয়ারির শেষদিকে এসএসকেএমের এন্ডোক্রিনোলজিতে ভরতি হন। কিন্তু প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থানগত সমস্যার জন্য ডাক্তারবাবুরা অস্ত্রোপচার সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। অবশেষে মুশকিল আসান করেন দীপ্তেন্দ্রবাবুরা। তারকবাবুর ভাইপো কৃষ্ণ অধিকারীর কথায়, “এত সহজে এত কঠিন অপারেশন, ভাবতেই পারছি না! কাকা এখন পুরোপুরি সুস্থ।”

প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির টিউমার এমনিতে বিরল। ‘এক্টোপিক প্যারাথাইরয়েড টিউমার’ আরও বিরল। এক্ষেত্রে রোগীর হার্টের পাশে ছিল গ্রন্থি। যা অতিবিরল। এমনটাই মত এসএসকেএমের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর পর্যবেক্ষণ, প্রজাপতির মতো দেখতে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের পিছনে থাকে প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি। যার সংখ্যা চার। টিউমার হলে প্যারাথাইয়েড গ্রন্থি অতিসক্রিয় হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অসুস্থ টিউমারটিকে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু চারটি গ্রন্থিই অসুস্থ হয়ে পড়লে, সাড়ে তিনটে গ্ল্যান্ড বাদ দেওয়া হয়, অথবা চারটেকেই। পরে একটি গ্ল্যান্ডের অর্ধেক অংশ হাতের চামড়ার নিচে (কনুই থেকে কব্জির মধ্যে) বসিয়ে দেওয়া হয়। কারণ প্যারাথাইরয়েডের উপযোগিতা কম নয়। এই গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোন শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কিন্তু গ্রন্থি অতিসক্রিয় হলে প্যানক্রিয়াস ও কিডনিতে স্টোন জমতে পারে। ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে অস্থি।

সতীনাথবাবু জানালেন, এই ‘মিনিমালি ইনভেসিভ সার্জারি’ ভারতে হয় একমাত্র লখনউয়ের সঞ্জয় গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতালে। এবার এসএসকেএম সেই তালিকায় নাম তুলল। এই পদ্ধতির সুবিধা হল, অস্ত্রোপচারে ঝুঁকি কম। অস্ত্রোপচার পরবর্তী জটিলতাও কম। এমনকী, রোগীকে দিনের দিনই ছুটি দিয়ে দেওয়া যায়।

[আরও পড়ুন: সাবধান, ‘মিরর অ্যাপে’র ফাঁদ কলকাতায়! লক্ষাধিক টাকা খোয়ালেন প্রৌঢ় ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement