সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কে বলে মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni) আর রবীন্দ্র জাদেজার (Ravindra Jadeja) মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছিল!
সোশ্যাল মিডিয়ায় সিএসকে অধিনায়কের বিরুদ্ধে নাকি অভিমান উগড়ে দিয়েছিলেন স্যর জাদেজা!
রোমহর্ষক ফাইনালের শেষে মিলনান্তক দৃশ্য নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে। রবীন্দ্র জাদেজা ব্যাট উঁচিয়ে দৌড়চ্ছেন। ডাগ আউট থেকে হুড়মুড় করে ছুটতে শুরু করে দিয়েছেন চেন্নাইয়ের প্লেয়াররা। অধিনায়ক ধোনি কেবলমাত্র ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে। তাঁর যে হাঁটুতে ব্যথা। ৪১-এর ধোনি একবার তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ তুলে দেখালেন জাদেজার দিকে। এদিকে জাদেজা ততক্ষণে পৌঁছে গিয়েছেন চেন্নাইয়ের ডাগ আউটের সামনে। বাঁ হাতি অলরাউন্ডার ঝাঁপিয়ে পড়লেন অধিনায়কের বুকে। আবেগ ছুঁয়ে যায় না ধোনিকে। প্রতিক্রিয়া দেখান না তিনি। সেই অধিনায়ক জাদেজাকে কোলে তুলে নিলেন।
[আরও পড়ুন: মধুরেণ সমাপয়েৎ, ‘ও অনেকটা আমার মতো’, রায়ডুকে শ্রদ্ধা নেতা ধোনির]
চেন্নাইয়ের বাকি খেলোয়াড়রা তখন ওই দু’ জনকে ঘিরে ধরে জয় উদযাপন করছেন। এমন মন ভাল করা দৃশ্যর জন্যই অপেক্ষায় ছিলেন চেন্নাই ভক্তরা। ধোনি আর জাদেজার সৌহার্দ্য বিনিময় নিমেষে মুছে দিল এতদিন ধরে চলা ঠান্ডা লড়াইয়ের থিওরি।
এই বন্ধুত্ব, পারস্পরিক এই শ্রদ্ধা দেখে কেই কি বলবেন টুর্নামেন্ট চলাকালীন দুই তারকার সম্পর্কে শীতল স্রোত বয়েছিল? সামান্য চিড় ধরেছিল সম্পর্কে?
ধোনি আর জাদেজার মিলনান্তক দৃশ্য চিরদিনের ফ্রেমে জায়গা করে নিল। অবশ্য কাজটা বেশ কঠিনই ছিল চেন্নাই সুপার কি্ংসের জন্য। পেন্ডুলামের মতো দুলল ম্যাচটা। যখন মনে হচ্ছে চেন্নাইয়ের জয় কেবল সময়ের অপেক্ষা ঠিক তখনই ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বদলে গেল। শেষ ওভারে সিএসকে-র সমীকরণ কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে গিয়েছিল।
মোহিত শর্মার ইয়র্কার থেকে বাউন্ডারি বা ওভার বাউন্ডারি পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাচ্ছিল। শেষ দু’ বলে জেতার জন্য ১০ রান দরকার। মোহিত শর্মার পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকান জাদেজা। শেষ বলে দরকার চার। মোহিত শর্মা ইয়র্কার দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু লেগসাইডে ফুলটস হয়ে যায়। জাদেজা বাউন্ডারি মেরে অসাধ্যসাধন করেন। তার পরেই সেই দৌড়। ঠিক যেন ইতিহাসের সেই লং মার্চ। জাদেজা ব্যাট উঁচিয়ে দৌড় শুরু করেন। ওই ব্যাটই তাঁর বিজয়কেতন। এক ছুটে সিএসকে ডাগ আউটের সামনে তিনি। সামনে তাঁর বিশ্বখ্যাত অধিনায়ক দাঁড়িয়ে। যিনি শেষ বল তিন বল আর দেখেননি।
যতবার ক্যামেরা ধরেছে তাঁকে, ততবারই গম্ভীর হয়ে গিয়েছেন। ক্যামেরা থেকে চোখ সরিয়ে নিয়েছেন। শেষ বলের সময় ক্যাপ্টেন কুলকে ধরা হল। তাঁর চোখ তখন নীচে। বাইশ গজে দৃষ্টি নেই তাঁর। জাদেজা অধিনায়ক ধোনিকে স্বস্তি দিলেন। জয় উৎসর্গ করলেন ধোনিকেই। বললেন, ”দুর্দান্ত অনুভূতি। আমার ঘরের মাঠে, চেনা দর্শকদের সামনে পঞ্চম বার খেতাব জিতলাম। আমি গুজরাটের। এটা বিশেষ এক অনুভূতি। বৃষ্টি থামার জন্য মধ্যরাত পর্যন্ত ওঁরা অপেক্ষায় ছিল। চেন্নাই সমর্থকদের অভিনন্দন জানাই। আমি এই জয় উৎসর্গ করতে চাই সিএসকে শিবিরের স্পেশ্যাল এক সদস্যকে। তিনি মহেন্দ্র সিং ধোনি।”
এর পরেও কেউ কি আর বলবেন, দু’ জনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছিল? ব্যক্তিত্বের সংঘাত চলছিল? ধোনি আর জাদেজার চিরকালীন ফ্রেম সব মুছে দিল। সব বস্তাপচা থিওরিকে মিথ্যে প্রমাণ করল।